মুহাম্মদ নুরুদ্দীন, টিডিএন বাংলা:
গ্রামের লোক প্রায়ই খোঁচা দেয়, সাহেব তুমি তো থাকো বাইরে তোমার ঘরে কেউ যাতায়াত করে কিনা খোঁজ রাখো?কারো কথায় আমল দেয়না হাবীব মিঞা। স্ত্রীর প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস। তা ছাড়া পাড়া প্রতিবেশীদের প্রতি বিশ্বাস হারাতে সে রাজি নয়। তাই লোকের কথায় কান দেওয়া সে পছন্দ করেনা। এই ভাবেই দিন কাল কাটতে থাকে। হটাৎ একদিন ব্যাক্তিগত কাজে গভীর রাতে বাইরে যেতে হয়েছিল তার।কিন্তু বিধির কী বিধান। জরুরী প্রয়োজনে মাঝ পথ থেকে ফিরতে হয় তাকে।বাড়িতে ফিরেই তো অবাক। কোন মতেই সে নিজের কান নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছেনা। তারই ঘরে তারই বিছানায় …..।
নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছেনা সে। হঠাৎ রক্ত গরম হয়ে যায়।থর থর করে কাঁপতে থাকে। দিক বিদিক গান শূন্য হয়ে হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে আক্রমন করে। লুটিয়ে পড়ে নাগর।আত্মসমর্পণ করে তার দুই সন্তানের মা।
সাড়া পড়ে যায় চারিদিকে। হৈ হৈ রৈ রৈ কান্ড।সাত গাঁয়ের লোক জড়ো হয়েছে বাড়ির সামনে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।সাংবাদিকরা ছুটে এসেছে ।গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বাঁধা হাবীব মিঞার দিকে মুহুর্মুহু পড়ছে ক্যামেরার ফ্লাশ।
কিছুদিন পর আদালতে বিচারকের সামনে খুনের আসামী হাবীব মিঞা।এখানেও ক্যামেরা হাতে সাংবাদিকের ভীড়। বিচারকের দিকে তাকিয়ে হাবীব মিঞার নিস্পলক দৃষ্টি।
…..তুমি খুন করেছ কেনো?
…..এছাড়া কোনও উপায় ছিলো না তাই।
…..তার মানে?
…..মহামান্য বিচারপতি আমাকে বলে দিন আমি আর কি করতে পারতাম?
…..কেন? তুমিতো অপরাধী দেরকে আটকে রেখে আর পাঁচজন কে ডাকতে পারতে? পুলিশে খবর দিতে পারতে ?আইন হাতে তুলে নেওয়ার আগে একবার ভেবে দেখবেনা?
…..স্যার তাতে কি লাভ হতো? আমি যদি লোকজন ডাকতাম তাহলে পরকীয়ায় বাধা দেওয়ার অপরাধে অভিযুক্ত আসামী হিসেবে তো সেই এখানেই দাঁড়াতে হতো।
…..তুমি তোমার বিবিকে তালাক দিতে?
এবার পাগলের মতো হেঁসে উঠলো মধ্য বয়সী যুবক।
…..স্যার বলেন কী? অমিও তো মানুষ,আমার শরীরে রক্ত মাংস তো কম বেশী আছে? আমি তালাক দিয়ে জেলে যাই আর আমার বিবি আমার বিছানায় তার নাগর কে নিয়ে রাত কাটাক, আর আমার সম্পত্তি বিক্রয় করে তাদের খোর
পোশের ব্যাবস্থা করা হোক।ধন্য দেশের আইন, ধন্য বিচার ব্যবস্থা, আর ধন্য আপনার পরামর্শ।
কিছুক্ষনের জন্য মাথা নীচু করে থাকেন বিচারপতি।
…..স্যার সবচেয়ে কম শাস্তি যেটা হবে আমি সেটাই করেছি। পরকীয়ায় বাধা দিয়ে জেলে যেতে হলে আমি তো শাস্তি পাবই আর মূল অপরাধীরা তাদের অপরাধ চালিয়ে যেতেই থাকবে যেটা সহ্য করা আমার জেল খাটার থেকেও আমার কাছে কঠিন।
আর খুনের অপরাধে যদি আমাকে ফাঁসি দেওয়া হয় তাহলেও আমি সান্তনা পাবো যে পাপীকে উচিত শিক্ষা দিয়েছি।
সপ্তাহ খানেক আগে সংগঠিত একটি ঘটনাকে গল্পের আকারে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম। কী জঘন্য পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি আমরা।এদেশে মানবাধিকার এর নামে পরকীয়া কে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। মহামান্য আদালত জানিয়েছেন আপনি বিবাহ করেছেন বলে আপনার স্ত্রী আপনার সম্পত্তি নয়। সে সব সময় আপনার অধীন থাকতে বাধ্য নয়। সে আপনাকে ছেড়ে অন্য কারও সঙ্গে দুই চার দিনের জন্য থাকতে চাইলে আপনি বাধা দিতে পারেন না।
আপনার ঘরে যদি সে কাউকে ডেকে আনে আপনি বাধা দিতে পারেন না।যদি তা করেন তাহলে আপনিই অপরাধী হবেন। এ কোন সমাজ এ কোন সভ্যতা?সভ্যতার নামে সমকামিতাকে বৈধতা দেওয়া হলো। জঘন্যতম পাপকেও স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে হিউম্যান রাইটস এর নামে।
এগুলো মানবাধিকার নয় আসলে এগুলি পশুত্বের অধিকার। মানুষ আর পশুর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। মানুষের বিবেক বোধ আছে পশুর বিবেক নেই।মানুষ পরিবার নিয়ে বসবাস করে। তার পিতা মাতা ভাই বোন আত্মীয় স্বজন থাকে পশুর তা থাকেনা। পশুর মামা, খালা, নানা, ফুফু, দাদা , দাদী , কিছূই থাকেনা।তাদের বিবাহ হয়না।সেজন্য পশুর স্বামী-স্ত্রী হয়না।সেজন্য তাদের মা বোন স্ত্রী খালার মধ্যে পার্থক্য করার কোনো প্রয়োজন থাকেনা।
পরকীয়া বৈধ হলে, অবাধ যৌনাচার বৈধ।এর ফলে বহুগামী কোন নারীর পক্ষে তার সন্তানের পিতা কে তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।পিতা নির্ধারণ করতে হলে তাকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। একটি শিশুর পিতা নির্ধারণ করতে হলে কত পুরুষের ডি এন এ টেস্ট করতে হবে তার ইয়ত্তা নেই। এখন বলুন, এ আইন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য না পশুত্বের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য? আমাদের আইন আদালত, মানুষকে পশু বানাতে এত তৎপর কেনো? আমার বুঝে আসেনা যে বিচারক পরকীয়াকে বৈধতা দিয়ে আইন ঘোষণা করলেন, ব্যক্তিগত জীবনে তারা কি এই আইন মেনে চলেন?
একদিকে লাভ জিহাদের নামে আফরাজুলদের নির্মম ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। (যদিও লাভ জেহাদের তথ্য অসত্য গরীব মুসলিম দ্বীন মজুরকে হত্যা করা আর তার ভিডিও প্রচার করে ত্রাস সৃষ্টি করাটাই আসল উদ্যেশ্য )অপর দিকে বলা হচ্ছে পরকীয়া অপরাধ নয়। এ কিরকম মগের মুলুক। একজনের প্রেমের মূল্য চোকাতে তার জীবন দিতে হবে আর অন্যের ব্যাপারে সেটা মানবাধিকার? ধন্য এ সভ্যতা ধন্য এ বিচার ব্যবস্থা।
পরকীয়াকে বৈধ করার পিছনে কি লম্পট বাবাদের কারাগার থেকে মুক্ত করাটাও লক্ষ? আমরা জানি শত শত নারীর জীবন নষ্ট করে, অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ করে হত্যা করে রাম-রহীম বাবারা এখন জেলে।আসারাম বাবুরা ধর্মের ছদ্মবেশে সারা জীবন লাম্পট্য করার পর, এখন শ্রী ঘরে।এই আসারাম বাবা আর রাম রাহীম বাবারা আবার বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের নয়নের মনি। তাদের কে জেলে রেখে মোটেই সুখে নেই শাসক দল। হয়ত এই সকল বাবাদের মুক্ত করতেই এই রকম একটা আইন খুব জরুরি ছিল।এর পর ধর্ষণ করে খুন করাকে যদি বৈধ করা হয় তাহলেই তো সোনায় সোহাগা। তাহলে আর আসিফাদের খুনের বিচার করতে হয়না। লম্পট বাবারা বেকসুর খালাস পেয়ে যান। মাননীয় আদালত এ রকম একটা আইন খুঁজে বের করুন না। লম্পট বাবাদের মুক্ত করতে এ রকম একটি আইনের খুবই প্রয়োজন।
আজকের দিনে ওদের কাছে মদ আর কোনও খারাপ জিনিষ নয়। মাননীয়া দিদি তো গ্রামে গ্রামে মদের রেশন খোলার কথা বলেছেন। এর পর সরকারি দোকান থেকে মদ না কিনলেও হয়ত জরিমানার বিধান জারি হতে পারে।কেনোনা দিদির এখন টাকার দরকার। অনেক টাকা চাই। শুরা ও শাকি সবই তো হোলো আর কী চাই!
(লেখক-বিশিষ্ট শিশু পাঠ্যের লেখক ও প্রবীণ সাংবাদিক)
২৯/১১/২০১৮