দেবিকা মজুমদার
২০২৩ সালে আমরা লিঙ্গ সমতা বা জেন্ডার ইকুয়ালিটির কথা বলে থাকি। তবে, সত্যি কি সেই সমতা এসেছে আমাদের সমাজে? আমরা যে খবরের কাগজ পড়ি বা অনলাইনে খবর পড়ি বা, টিভিতে খবর দেখি, সেখানে একনজরে তাকালে মনে হয়, সত্যিই তো, আজ মেয়েরা কত এগিয়ে গিয়েছে। পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা কাজ করছে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা ঝাঁ চকচকে দুনিয়া, যেখানে মহিলা-পুরুষে কোনও বিভেদ নেই। সত্যিটা কি আদতে তাই? পুরুষ শাসিত এই সমাজে মহিলারা কি সত্যিই পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারছেন? তাঁরা কি পাচ্ছেন যোগ্য সুযোগ? বিশেষত, সংবাদদাতা এবং সংবাদ পরিবেশকদের মত একটা চ্যালেঞ্জিং এবং নজরকাড়া পেশায়? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এই প্রতিবেদকের তরফে কলকাতার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত, অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মহিলা সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল।
প্রথম প্রশ্ন ছিল, সাংবাদিকতাকে তাঁরা পেশা হিসেবে কেন বেছে নিয়েছেন? এর জবাবে, অনেকেই জানিয়েছেন, এই পেশার প্রতি তাঁদের ভালবাসার কথা। ছোটবেলা থেকেই সংবাদপত্র পড়া এবং টিভিতে খবর দেখার থেকে এই পেশার প্রতি আকর্ষণ তৈরি হওয়া। আর, তারপর নিজের পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেওয়া। আবার, খাস খবর ডিজিটালে বর্তমানে কর্মরতা সাংবাদিক অনিন্দিতা সিনহা জানিয়েছেন, “সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে অনেক ছোটবেলায় বেছেছিলাম। আমার বাবাও সাংবাদিক ছিলেন। তাঁকে দেখেই মূলত এই পেশার প্রতি ভালোবাসা।” উল্টো দিকে, আনন্দবাজার অনলাইনে কর্মরতা সুদীপ্তা চৌধুরী সরকার বলেন, “বাংলায় গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর সুযোগ আসে মাস্টার্স করার তবে, বাংলা নিয়ে পড়াশোনা এগোন’র আর ইচ্ছা ছিল না। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস কমিউনিকেশনে মাস্টার্স করলাম। তারপর, এ.মে. শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই সুযোগ এল একটি বড় সংবাদমাধ্যমে সাংবাদিকতা করার। তবে থেকেই শুরু। আলাদা করে আগে থেকে সাংবাদিক হওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না।”
দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, সাংবাদিকতাকে তো সেই অর্থে “নিরাপদ চাকরি” মনে করা হয় না, যেকোনো সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে। সেক্ষেত্রে আপনি কতটা সমর্থন পেয়েছেন বাবা মায়ের কাছ থেকে? এর জবাবে, অনেকেই জানিয়েছেন, বাবা মায়ের কাছ থেকে তাঁরা সম্পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন। এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন ডিজিটাল খবরিলালের সাংবাদিক সোয়েতা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, খুবই সমর্থন পেয়েছি। এখনও সমর্থন পাচ্ছি। আশা করছি, আগামী দিনেও, মা, বাবা, স্বামী সকলেই সমর্থন করবেন। সেরকম কোনও সমস্যা হয় নি। আবার, সংবাদ প্রতিদিনে ডেস্ক রিপোর্টার হিসেবে কর্মরতা মিলি হোড় জানান, “আমি আমার বাবার কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছিলাম। আমার মায়ের কাছ থেকে সমর্থন যে পাইনি, তা বলবনা। মায়ের কাছ থেকে অবশ্যই সমর্থন পেয়েছিলাম। তবে, আর পাঁচটা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে মায়েদের যেমন চিন্তা থাকে, মেয়ে সাংবাদিক যেহেতু, যদি তাকে কোনওরকম বিপদের মধ্যে পড়তে হয়, সেরকম চিন্তা আমার মায়েরও ছিল। তবে, আস্তে আস্তে সেই ভয় কাটিয়ে ওঠাতে আমি পেরেছি।”
তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নিজের পেশার জন্য কখনও আপনারা কিছু শুনেছেন? এর জবাবে, বেশিরভাগ মহিলা সাংবাদিকই জানিয়েছেন তাঁদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। যেমন, খাস খবর ডিজিটালে কর্মরতা সাংবাদিক অনিন্দিতা সিনহা জানিয়েছেন, “হ্যাঁ। পাড়া প্রতিবেশীদের অনেকেই অনেক কথা,বলেছেন। চাকরি জীবনের প্রথমের দিকে এটাও শুনেছিলাম মিডিয়া নোংরা জায়গা। জেনে শুনে এই পেশায় গিয়ে নিজেকে নীচে নামাচ্ছি। এমন কি বলা হয়েছিল এই সব ছেড়ে রিসেপশনিস্টের কাজ নিতে। তবে, এটা বুঝতে হবে, আমাদের পেশার অনেক দিক আছে। যারা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত নয় তারা এত কিছু বুঝতে পারেন না বলেই এই ধরনের মন্তব্য করেন।” প্রায় একই কথা জানিয়েছেন, ক্যালকাটা নিউজের সাংবাদিক অভিরূপা হাজরা। তিনি বলেন, “একটা সময় যখন খবরের কাগজে চাকরি করতাম বা ইন্টার্নশিপ করতাম, চ্যানেলে তখন বিশেষ দেখা যেত না, মানে আমাকে টিভিতে দেখা যেত না। তো, পাড়া প্রতিবেশীরা জিজ্ঞাসা করতেন, প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে যাচ্ছ, রাত্রিবেলা বাড়ি ফিরছ কি কর? আর, মেয়ে হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই কারুর গায়ে কালি ছেটানোটা খুব সহজ তো, সেটা ছেটাতেন। পরবর্তীকালে যখন প্রতিষ্ঠিত হলাম বা, টিভিতে দেখা গেল, তারপর থেকে ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে শুরু করলেন বা, জানতে চিনতে শুরু করলেন। এখন প্রতিবেশীরা গর্ব বোধ করেন। তবে, আমার কাছে, কোনোটাই গুরুত্ব পায় না।“ আবার, একেবারেই আলাদা কথা জানিয়েছেন ডিজিটাল খবরীলালের সাংবাদিক সোয়েতা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “হ্যাঁ অনেকই কথা শুনেছি পাড়া প্রতিবেশী সবার কাছে কিন্তু, সেই প্রত্যেকটা কথা খুবই পজিটিভ। আমার সাংবাদিকতার এই পেশা নিয়ে খারাপ কথা বা, খারাপ অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি। হয়তো, আমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবতী বলব যে, সব সময় সবার থেকে খুব ভালোভাবে প্রশংসিত হয়েছি আমার রিপোর্টিং-এর জন্য বা, আমার কাজের জন্য।“
চতুর্থ প্রশ্ন ছিল, কর্মজীবনে একজন মহিলা সাংবাদিক হিসেবে ঠিক কি কি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন? এর জবাবে, আনন্দবাজার অনলাইনে কর্মরতা বরিষ্ঠ সাংবাদিক সুদীপ্তা চৌধুরী সরকার জানিয়েছেন, ”কর্মজীবনে মহিলা সাংবাদিক হিসেবে যে যে কাজের সুযোগ পাওয়া দরকার ছিল সেই সমস্ত কাজের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। বেশিরভাগ অফিসের বসেরাই মনে করেন এই কাজটা একজন মহিলার দ্বারা হবে না। এইটা একটা বড় সমস্যা মহিলা সাংবাদিকদের। দু নম্বর আমাকে যে যে কাজে পাঠানো হয়েছে চ্যালেঞ্জিং কাজ হলেও সেই সমস্ত কাজ আমি সফলতার সঙ্গে করে এসেছি কিন্তু, তারপরও ক্রেডিট দিতে বসেদের অসুবিধা হয়েছে। কারণ, মহিলা বলে। একজন পুরুষ বসের মহিলা সাংবাদিককে ক্রেডিট দিতে ইগোয় আঘাত লাগে।“ প্রায়, একই কথা জানিয়েছেন অভিরুপাও। তিনি বলেন, “কর্মজীবনে মহিলা সাংবাদিক হিসেবে অনেক সমস্যার সম্মুখীনই হতে হয়েছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অনেকের থেকে সাহায্য না পাওয়া বা, সেক্ষেত্রে মহিলা বলে অনেকেই অন্য নজরে দেখেন, বা মেয়ে বলে কেন সামনের সারিতে থাকবে এই মানসিকতা অনেকেরই আছে।“ যদিও, তিনি জানিয়েছেন, “নেগেটিভ মানসিকতার থেকেও এই পেশায় পজিটিভ মানসিকতার লোকজন আছেন অনেক বেশি।” আবার, বরিষ্ঠ সাংবাদিক অনিন্দিতা সিনহা জানিয়েছেন, “আমাদের কাজটাই চ্যালেঞ্জ। তবে, আমার ক্ষেত্রে আমি সিনিয়রদের সাহায্য পেয়েছি। আমি চিরকালই খবরের খোঁজ করতে ভালোবাসতাম। তাই, অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পরেছি। সেখান থেকে নিজে বুদ্ধি করে বেরিয়েও এসেছি। তবে, অফিসে সিনিয়ররা আমায় বরাবর সাপোর্ট করেছেন। কিন্তু, একটা বিষয়,পরিস্কার হওয়া দরকার সাংবাদিকদের কোন জেন্ডার নেই। তাদের পরিচয় তারা সাংবাদিক।” প্রায় একই কথা জানিয়েছেন অপর বরিষ্ঠ সাংবাদিক সোয়েতা ভট্টাচার্য।
পঞ্চম প্রশ্ন ছিল, পুরুষদের তুলনায় সাংবাদিক হিসেবে মহিলাদের লড়াইটা কতটা কঠিন? এর জবাবে, নিজের ষোল বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সুদীপ্তা জানান, “পুরুষের তুলনায় সাংবাদিক হিসেবে অবশ্যই মহিলা সাংবাদিকের লড়াই একদিকে যেমন কঠিন অন্যদিকে সহজও। সহজ কেন বললাম কারণ, একজন মহিলা যদি চান তাঁর প্রফেশনে শ্রেষ্ঠ জায়গায় পৌঁছাবেন তাঁর সেই জায়গায় যাওয়ার পথটা অনেক বেশি সুগম হয়। তার জন্য তাঁকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। শুধু, একটু চেষ্টায় ফটো দিলেই অনেক তাড়াতাড়ি উন্নতি করা যায়। আর কঠিন এই জায়গা থেকে বললাম, কারণ একজন মহিলা চেষ্টা করতে চাইলেও তাঁকে দমিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে পুরুষ শাসিত সমাজ। বর্তমানে অনেক হাউস এমন আছে যারা নিজেদের বড় ব্র্যান্ড বলে, কিন্তু এখনও মহিলা সাংবাদিক তাঁরা নিতে চান না। দীর্ঘ ১৬ বছরের সাংবাদিকতার ক্যারিয়ারে এটা একেবারে বাস্তব সত্য। সামনে বলতে অনেকেই হয়তো চান না তবে, এটাই বাস্তব।” সাংবাদিক অভিরূপা হাজরা জানিয়েছেন, “পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের জন্য সাংবাদিকতার পেশাটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয়। কারণ, মহিলাদের একটা বাড়ি থাকে, একটা সংসারের দায়িত্ব থাকে এবং সংসারের দায়িত্ব বাদ দিলেও বাকি অনেক কিছুরই দায়িত্ব থাকে সেটা এক। দ্বিতীয় হচ্ছে, কিছু করতে না পারলে বা ফেল করলে, দুবার পর পর ফেল করলেই অফিসের বসেরা একটা তীক্ষ্ণ নজরে তাকান যে এই মেয়েটির দ্বারা কিছু হচ্ছে না বা, মেয়ে বলে সম্ভব হচ্ছে না। মেয়ে বলে করতে পারল না, ছেলেরা করতে পারত।” আবার, এক্ষেত্রে খানিকটা দ্বিমত পোষণ করেছেন, সাংবাদিক অনিন্দিতা সিনহা। তিনি বলেন, “পেশাগত ফিল্ডে মহিলাদের এই পেশায় কোনও সে অর্থে স্ট্রাগল আছে বলে মনে করি না। মহিলাদের যে সমস্যা হয় তা হল পরিবার। মূলত মহিলাদের একটা কঠিন লড়াই করতে হয় তাদের পরিবারের সঙ্গে।“ প্রায় একই অভিমত পোষণ করেছেন দীর্ঘ সময় ধরে সাংবাদিকতা করা সোয়েতা ভট্টাচার্যও।
ষষ্ঠ প্রশ্ন ছিল, একজন মা, একজন স্ত্রী, একজন বৌমা, একজন মেয়ে এইসব দায়িত্ব সামলে নিত্যদিনের কর্মক্ষেত্রের লড়াইটা কতটা চ্যালেঞ্জিং? এর জবাবে, বছর খানেক আগে মাতৃত্বের আস্বাদ পাওয়া সাংবাদিক সোয়েতা ভট্টাচার্য বলেন, “সত্যিই খুব বড় চ্যালেঞ্জিং। তার কারণ, একজন মা, একজন স্ত্রী, একজন বৌমা, একজন মেয়ে এই সমস্ত সম্পর্কে রয়েছি আমি আর সেই সমস্ত সম্পর্ককে ব্যালেন্স করে নিজের রিপোর্টিং বা, সাংবাদিকতাকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে আমার মনে হয়, মানে আমি যখন সেই চ্যালেঞ্জটাকে সম্পূর্ণ করে রাতে শুতে যাচ্ছি, মনে হয় যে, সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ এটাই।“ সাংবাদিক সুদীপ্তা চৌধুরী সরকার নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে জানান, “২৩ বছর বয়সে প্রথম চাকরি পাই, একটি বড় ব্র্যান্ডের হয়ে রিপোর্টিং করি। তখনও আমার বিয়ে হয়নি। বাবার কাছে থেকে রিপোর্টিং করা আর শশুর বাড়ি থেকে রিপোর্টিং করার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকে। মাত্র বছর দেড়েকের মধ্যেই বুঝে গেলাম সেই বাস্তব সত্য। বিয়ের এক বছরের মাথায় এক সন্তানের মা হয়ে গেলাম। বাড়িতে একটি বাচ্চা রেখে দশ ঘণ্টা থেকে বারো ঘন্টা ডিউটি করা একজন মহিলা সাংবাদিক-এর জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ দীর্ঘ ষোল বছর সাংবাদিকতার পেশায় কাজ করেছি। তবে, হ্যাঁ এই অল্প বয়সে বিয়ে তার মধ্যে বাচ্চা আর নিজের কাজ এই তিনটে জিনিস একসাথে চালিয়ে যাওয়ার জন্যই অল্প সময়ে উন্নতির মুখ দেখিনি। একদিকে, মহিলা সাংবাদিক অন্যদিকে, এক বাচ্চার মা তথাকথিত বড় ব্র্যান্ডগুলি এই কম্বিনেশনকে নেগেটিভ কম্বিনেশন বলেই মনে করে। সেই সাংবাদিক যত ভালোই কাজ করুক না কেন তাকে কাজের সুযোগ দেওয়া যায় না। তাই সংসার সামলেই কেউ যদি মনে করেন সাংবাদিকতার পেশা চালিয়ে যাবেন তাঁর উন্নতির পথে প্রথম বাধাই হবে সেটা।” আবার, অনিন্দিতা সিনহা শুনিয়েছেন এত সমস্যা সত্ত্বেও মহিলা সাংবাদিকদের হার না মানার কথা। তিনি বলেন, “সংসার সামলে এই পেশায় এখন অনেকে টিকে আছেন। দিব্যি অ্যাসাইনমেন্ট করছেন। আউটডোর করছেন। তবে, এই পেশায় এই চ্যালেঞ্জ একজন মহিলা তখন নিতে পারবে যদি তার পরিবার তাকে সঙ্গ দেয়। এটা খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ।“ পরিবারের এই সমর্থনের ওপর জোড় দিয়েছেন অভিরূপাও। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ছোট্ট মেয়েও তাঁকে খুব সহযোগিতা করে।
সপ্তম এবং শেষ প্রশ্ন ছিল, সাংবাদিক হিসেবে তো অনেকধরণের অ্যাসাইনমেন্ট করতে হয়। কখনও নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছেন? এই প্রশ্নের জবাবে অনেকেই জানিয়েছেন, নিরাপত্তার অভাববোধ নিয়েই প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও তাঁরা কিভাবে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। সাংবাদিক সোয়েতা ভট্টাচার্য জানান, “অবশ্যই করেছি। সাংবাদিক হিসেবে অনেক ধরণের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় এবং আমি যে বিটটা করতাম প্রথমে নবান্ন, পলিটিক্যাল বিট করেছি আমি, ক্রাইম বিট করেছি, সেক্ষেত্রে অনেক ধরণের অভিজ্ঞতা হয়েছে।“ তেমনই, সাংবাদিক সুদীপ্তা চৌধুরী সরকার জানান, “বহুবার নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছি। একটা সময় এমন হয়েছে রাত্রিবেলা এমন একটি জায়গায় অ্যাসাইনমেন্টে গিয়েছি যেখানে, খালি আমি একা আর আমাকে ঘিরে ধরেছেন কয়েকশ’ মদ্যপ। উত্তপ্ত পরিস্থিতি থেকে নিজেকে কোনওমতে সামলে বার করে আনাটাও একটা আর্ট। ভাটপাড়ার একটি কভারেজে গিয়েছিলাম ভোটের সময়। যেখানে আমি এবং আমার ক্যামেরা পার্সেন একা। বোমা-গুলির মাঝখানে পড়ে যাই। আমরা তবু কভারেজ থামাই না। লাইভ ইউনিট অন করে সেই সমস্ত ছবি অফিসে লাইভ পাঠাতে থাকি। ভয় লাগছিল। মাঝেমধ্যেই মেয়ের এবং আমার পরিবারের ছবিটা চোখের সামনে ভেসে আসছিল। ভাবছিলাম, এরপর বেঁচে ফিরব কিনা। কারণ, আমাকে এবং আমার ক্যামেরাপার্সনকে ঘিরে ধরেছিলেন দুষ্কৃতীরা। আমাদের পায়ের কাছে ছোঁড়া হচ্ছিল পেটো বোম। ভাঙ্গা হচ্ছিল টিউব, ছোঁড়া হচ্ছিল ইঁট। সেই পরিস্থিতি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে কভারেজ পুরো শেষ করে অফিস ফিরেছিলাম আমরা। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছিলাম তো বটেই। তবে, সেখান থেকে কি করে নিজেকে বার করে আনতে হবে সেটা অবশ্যই শিক্ষনীয় বিষয়।“ উলটোদিকে, সাংবাদিক অনিন্দিতা সিনহা জানান, “নিরাপত্তার অভাব বোধ আমি করি নি। পরিস্থিতি খারাপ হয়নি, এমনটা নয়। নির্বাচনের সময় খুব কঠোর পরিস্থিতিতে পরেছি। গোলাগুলি চলেছে, ইঁট বৃষ্টি হয়েছে। তবে, সেই পরিস্থিতিকে সামলে সেখান থেকে নিজের বুদ্ধি দিয়ে বেরিয়ে এসেছি। এরকম পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর সাহায্যও পেয়েছি এবং খুব খারাপ সময় সহকর্মীরা ছাড়া উদ্ধারকর্তা কেউ থাকে না এটাও বুঝেছি।” সাংবাদিক অভিরুপা হাজরাও জানিয়েছেন, “সাংবাদিক হিসেবে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নবান্ন অভিযান বা, এরকম কোনও র্যালি যেখানে গণ্ডগোল হয়েছে, পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে, দু’জায়গায় আমি আহত হয়েছি, ইঁট বৃষ্টি হয়েছে এবং এক জায়গায় এরকম ইঁট বৃষ্টির কারণে আমার কাঁধে একটি চোট রয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় অসুবিধার সম্মুখীন হই যে ঠিকই তবে, নিরাপত্তার অভাব যে খুব একটা বোধ করি না এটা বলব না। তবে, আমার সহকর্মীরা আমাকে খুব সহযোগিতা করেন। আমার ক্যামেরাপার্সন দাদারা, ড্রাইভার দাদা যিনি থাকেন খুব সহযোগিতা করেন এবং পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও ফিল্ডে কাজ করলে পুলিশ বা অন্যান্য ক্ষেত্রেও অনেকেই সহযোগিতা করেন।”
দেশের সংবিধানেই রয়েছে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষাকবচসংখ্যালঘু অধিকার দিবসে মত বিশিষ্টদের
বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য--- এটাই ভারতের শাশ্বত ঐতিহ্য। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ‘এক ভাষা এক ভোট এক সংস্কূতি এক দেশ’-এর ঢক্কানিনাদের...