মুহাম্মদ জিকরাউল হকসৌভিক ঘোষ। পরিবহন দপ্তরের পূর্ণমন্ত্রী। গতবারও বিধায়ক হয়েছিলেন। সেবার মন্ত্রিত্ব পাননি। এবার পেয়েছেন। সুতরাং তিনি অত্যন্ত খুশি। খুশি এই কারণে যে, মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। কাজের পরিসর বেড়েছে। তার সাথে বেড়েছে ব্যস্ততা। বিভিন্ন মানুষ ও সংগঠনের কাছ থেকে পাচ্ছেন প্রচুর সম্মানও। আজ ডাক পেয়েছেন “জীবনপুর হাইস্কুল” এর শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে। তিনিই উদ্বোধন করেছেন অনুষ্ঠানের। এই আনন্দ ভাগ করে নেয়ার জন্য স্বীয় স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন সঙ্গে করে। দু’জনে বসেছেন পাশাপাশি। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশিত হয়েছে। হচ্ছে বক্তব্য। একেকজন বক্তব্য রাখছেন। মাননীয় মন্ত্রী সৌভিক ঘোষ মহাশয়ও বক্তব্য রাখলেন। বক্তব্য শেষ হতেই আকাশ ফাটানো করতালিতে মুখরিত হলো চারপাশ। এবারে সভাপতির বক্তব্য। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই শেষ হবে প্রথম পর্বের এই অনুষ্ঠান। তারপরে বিভিন্ন কার্যক্রম চলতে থাকবে পালাক্রমে। চলবে চারদিন ধরে। মন্ত্রী মহাশয়ের ব্যস্ততা রয়েছে। তাঁকে চলে যেতে হবে। সভাপতির বক্তব্য শেষ হলেই তিনি উঠে পড়বেন। সদ্য অবসর প্রাপ্ত ইংরেজির শিক্ষক আজকের এই অনুষ্ঠানের সভাপতি। পাতলা গড়ন। ইংরেজদের মতই ধবধরে ফর্সা গায়ের রঙ। দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি তাঁর জীবনের ষাটটা বছর অতিক্রান্ত করে ফেলেছেন। ধীর পদক্ষেপে মাইকের কাছে গেলেন। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যে উসখুস ভাব ছিল তা নিমেষে মিলিয়ে গেল। এখন সকলেই নীরব। বোঝা যায় শিক্ষক মহাশয়ের বেশ প্রতাপ ছিল একসময়। তিনি বলা শুরু করলেন তাঁর স্বভাবজাত ভঙ্গিতে। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। বরাবরই তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। আজকেও তার ব্যতায় হল না। শেষে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “যারা ভালো করে পড়াশোনা করছো তারা বড় হয়ে উঁচু পদে চাকরি করবে, আর যারা পড়াশোনায় দুর্বল, মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেবে ভাবছো, তাদেরও দুর্ভাবনার কিছু নেই, চেষ্টা করলে মন্ত্রী-টন্ত্রী হলেও হয়ে যেতে পারো।” বক্তব্য শুনে মন্ত্রী মহাশয়ের ভাবনার জগৎ নড়ে উঠল। চতুর্দিক থেকে করতালির শব্দ আসছে। তিনি করতালি দেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে নির্বাক হয়ে বসে রইলেন। কিছুক্ষণ আগেও বাড়ি ফেরার যে তাগিদ অনুভব করছিলেন তা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে গেল। স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন মন্ত্রী সৌভিক ঘোষ। পথে একটাও কথা বলেননি তিনি। বাড়ি ফিরে স্ত্রী বললেন,”তুমি অমন মুখ কালো করে আছো কেন? কথাটা তো তোমাকে বলেননি। তুমি এইট পাস হলে কি হবে, তোমার তো বি.এ পাস সার্টিফিকেট আছে!”