সুমন ভট্টাচার্য
শনিবার ১৪ ডিসেম্বর, মৌলালী যুব কেন্দ্রে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের একটি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এই কনভেনশনের বিষয় ছিল ‘আমাদের স্বাস্থ্য ভাবনা’। এই সভায় সভাপতির আসন উজ্জ্বল করলেন প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন, বিশিষ্ট ডাক্তার অনিল সাহা, ডাক্তার দেবপ্রিয় মল্লিক, ডাক্তার শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত, ডাক্তার অরিন্দম বিশ্বাস, ডাক্তার ফণীগোপাল ভট্টাচার্য, এবং ডাক্তার ও দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের অন্যতম সদস্য ডাক্তার সিদ্ধার্থ গুপ্ত। এই সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক্তার কাফিল খান।
সভার শুরুতেই প্রথম নিজের বক্তব্য রাখলেন রাজ্যসভার সদস্যা শ্রীমতী দোলা সেন মহাশয়া। তিনি বললেন যে, কীভাবে বাম আমলে থাকা স্বাস্থ্যব্যবস্থা ২০১১-এর পর থেকে উন্নত থেকে উন্নততর হয়েছে, মনে করিয়ে দিলেন ১৯৮৩ সালে ঘটে যাওয়া ডাক্তারদের উপর অকথ্য অত্যাচার এবং বাংলার পথে প্রথম ডাক্তারদের গণজোয়ারের ডাকের কথা, মনে করিয়ে দিলেন, বাম আমলে কীভাবে ইএম বাইপাসের ধারে একের পর এক বেসরকারি হাসপাতালগুলি মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়াচ্ছিল এবং তার সঙ্গে সঙ্গেই বামযুগ কেড়ে নিচ্ছিল সাধারণ মানুষের কাছ থেকে স্বাস্থ্যব্যবস্থা পাওয়ার অধিকার। তিনি আরও জানালেন, যে আজ থেকে ১৩ বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব নিজের কাঁধে যখন নিয়েছিলেন, তখনই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন, যে কীভাবে প্রান্তিক সাধারণ মানুষদের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকার চিকিৎসা কম খরচে, সেইসব মানুষেরা যাতে তা সহজে এবং সুলভে পেতে পারেন সেই চিন্তাই করে গিয়েছেন এবং তা কার্যকরীও করেছেন। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নত করেছেন দায়িত্ব নিয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তৈরি নতুন প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথী কার্ড গ্রামের প্রান্তিক মানুষদের কতটা সাহায্য করছে আজও, তা নিয়েও বিস্তারিতভাবে বললেন।
তিনি ছাড়াও ডা. অনিল সাহা, ডা. শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত, ডা. অরিন্দম বিশ্বাস, ডা. দেবপ্রিয় মল্লিক, ডা. ফণীগোপাল ভট্টাচার্য, ডা. সিদ্ধার্থ গুপ্ত স্বাস্থ্য বিষয়ক নিজ নিজ মতামত প্রকাশ করলেন, কীভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতিসাধন করা যায়, কেন্দ্রীয় সরকারের কী কী করণীয় এই বিষয়ে, তা নিয়েও আলোচনা করলেন। আর জি করের নিহত তরুণী ডাক্তারের ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনা নিয়েও আলোচনা হল এই অনুষ্ঠানে।
এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. কাফিল খান। এই কাফিল খান তিনি, যিনি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের একটি হাসপাতালে নিজ উদ্যোগে অক্সিজেন নিয়ে এসে ৪৩ জন শিশুকে রক্ষা করে সেখানকার রাজ্য সরকারের প্রধান, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কোপে পড়েন। ২০১৭ সালে গোরক্ষপুরের যে হাসপাতালে তিনি কাজ করতেন, সেই হাসপাতালে যারা অক্সিজেন সাপ্লাই করা বন্ধ করে দিয়েছিল, যে কারণে ৬৩ জন শিশুর প্রাণ অকালে ঝরে যায়। অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের দাবি ছিল যে, সরকার তাদের ৬৮ লক্ষ বকেয়া টাকা মেটায়নি। সেই টাকা মেটানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সেই টাকা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৬-৭ লক্ষ টাকা কমিশন হিসেবে চাইছিল। এবং ডা. কাফিল খান নিজ উদ্যোগে বাকি শিশুদের প্রাণ বাঁচানোর কারণেই যোগী আদিত্যনাথের কু-দৃষ্টি তাঁর ওপর এসে পড়েছিল। তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল, অত্যাচারিত হতে হয়েছিল বিভিন্নভাবে, তাঁর ভাইকে গুলি করা হয়, তিনি সহ পরিবারের বাকি সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের নামে এয়ারপোর্ট থেকে তুলে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে গুন্ডাদের দিয়ে অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়। নিজের অতীতের কথা সমস্তটাই এই অনুষ্ঠানে এসে তিনি সবার সামনে বলেন। এত কিছুর পরেও তিনি দমে যাননি, তাই তিনি আরও বলেন যে কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের অধিকার আমাদের ছিনিয়ে নিতে হবে, কীভাবে সঠিকপথে থেকে অরাজকতা, নৈরাজ্যবাদের বিপক্ষে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর গড়ে তুলতে হবে, কীভাবে বড়লোকদের বেসরকারি হাসপাতালের রমরমা বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সাধারণ মানুষদের সুলভে চিকিৎসার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।