২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করে প্রাক্তন বেসামরিক কর্মচারী, কূটনীতিক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বগণ মিলিত ভাবে একটি চিঠি প্রেরণ করেছেন। এটি ভারতের সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতিগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়।
এই চিঠি ভারতের সামাজিক কাঠামোর গভীরতম সমস্যাগুলো তুলে ধরে, বিশেষত হিন্দু, মুসলিম এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির দিকে ইঙ্গিত করে। লেখকরা উল্লেখ করেছেন, যদিও ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার উদাহরণ প্রচুর রয়েছে (যেমন দেশভাগ বা পরবর্তী দাঙ্গাগুলি), সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এই সমস্যাগুলি নতুন মাত্রা লাভ করেছে। এই চিঠিতে চারটি প্রধান দিক তুলে ধরা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকে চিহ্নিত করে। লেখকরা উল্লেখ করেছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষত মুসলিম ও খ্রিস্টানরা, ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করছে। সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং শত্রুতা তাদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলছে।
চিঠিতে এও বলা হয়েছে যে, কিছু রাজ্য সরকার এবং প্রশাসন পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন করছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও ব্যবসা লক্ষ্যবস্তু করে সম্পত্তি বুলডোজ করা এবং বৈষম্যমূলক নীতির প্রয়োগ। শুধু তাই নয়, চিঠিটি লিঞ্চিং ও ঘৃণাসূচক বক্তব্যের ঘটনা বর্ণনা করেছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ইসলামফোবিক বক্তব্যের তীব্রতা ক্রমবর্ধমান, যা অপরাধীদের উৎসাহিত করেছে। এছাড়া সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতার পাশাপাশি, তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রান্তিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মুসলিম ব্যবসা বর্জন, আবাসনের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং স্থাপনা ধ্বংসের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। লেখকরা চিঠিতে ভারতীয় ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে বর্তমান সমস্যাগুলোকে তুলে ধরেছেন। দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার স্মৃতি এখনও জীবন্ত। তবে তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে, বর্তমান পরিস্থিতি একটি নতুন স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু প্রশাসনের ভূমিকা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে। এই চিঠির তাৎপর্য হল, লেখকরা সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। প্রাক্তন আইএএস এবং আইএফএস কর্মকর্তা, রাষ্ট্রদূত, সামরিক কর্মকর্তা এবং সমাজসেবীদের সমন্বয়ে এই গোষ্ঠী জাতির সেবা করেছেন। তাদের একত্রিত কণ্ঠস্বর বিষয়টিকে গুরুত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করে। এদের মধ্যে আছেন- এন,সি. সাক্সেনা; আইএএস (অব.): প্রাক্তন সচিব, ভারতের পরিকল্পনা কমিশন; নজীব জং, আইএএস (অব.) প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর, দিল্লি; শিব মুখার্জি, IFS (অব.) যুক্তরাজ্যে ভারতের প্রাক্তন হাইকমিশনার; অমিতাভ পান্ডে, IAS (অব.): প্রাক্তন সচিব, আন্তঃরাষ্ট্রীয় পরিষদ, GOI; এস , ওয়াই,কুরাইশি: আইএএস (অব.): ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার; নভরেখা শর্মা, IFS (অব.): ইন্দোনেশিয়ায় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত; মধু ভাদুড়ী, IFS (অব.): পর্তুগালে সাবেক রাষ্ট্রদূত; লেফটেন্যান্ট জেনারেল জমিরউদ্দিন শাহ (অব.): সেনাবাহিনীর সাবেক ভাইস চিপ; রবি বীর গুপ্ত, IAS (অব.): প্রাক্তন Dy. গভর্নর, রিজার্ভ; রাজু শর্মা, আইএএস (অব.) প্রাক্তন সদস্য, রাজস্ব বোর্ড, উত্তর প্রদেশ; সাইদ শেরভানি, উদ্যোক্তা/পরোপকারী; অভয় শুক্লা, আইএএস (অব.) প্রাক্তন অ্যাড. প্রধান সচিব, হিমাচল প্রদেশ; শহীদ সিদ্দিকী, সাবেক সম্পাদক, নয়া দুনিয়া; সুবোধ লাল, আইপিওএস (পদত্যাগ): প্রাক্তন ডি. মহাপরিচালক, যোগাযোগ মন্ত্রক, জিওআই; সুরেশ কে. গোয়েল: IFS (অব.): প্রাক্তন ডিজি, ICCR; অদিতি মেহতা, আইএএস (অব.): প্রাক্তন অ্যাড. মুখ্য সচিব, রাজস্থান; অশোক শর্মা, IFS (অব.): ফিনল্যান্ড ও এস্তোনিয়ায় সাবেক রাষ্ট্রদূত।
তাঁরা চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি সম্বোধন করে বর্তমান সমস্যাগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরে এবং তাঁর নেতৃত্বে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানায়। তাঁরা আবেদন করেছেন, সদ্য একের পর এক ঘটনা বিশেষ করে জ্ঞানব্যাপী, সম্ভল ও আজমীর শরীফ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। লেখকরা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সুরক্ষা প্রদানের দাবী করেছেন। তৎসঙ্গে একটি জয়েন্ট কমিটি গঠনের আবেদন যেমন করেছেন, তেমনি স্বাক্ষরকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নিকট সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়েছেন।
এই চিঠি কেবল একটি অভিযোগ নয়; এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ নীতিগুলোর পুনর্গঠনের আহ্বান। এটি আত্মপর্যালোচনা ও ন্যায়বিচারের দাবী করে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ও সংহতির বার্তা দেয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আবেদন জানিয়ে এই চিঠি ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটি দলিল। এটি দেশের নেতৃত্বকে সংবিধানসম্মত মূল্যবোধ রক্ষা ও সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এমন একটি উদ্যোগ ভারতীয় সমাজের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।