নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা, ২৭ জুন ২০২২
চালের দাম বাড়ায় হেঁসেলে টান পড়েছে সাধারণ মানুষের। গ্রামে সবজি সস্তা হলেও চালের দাম বেশি আবার শহরে সবজি ও চাল-উভয়ের দাম বেশি। ফলে দুর্মূল্যের বাজারে কিভাবে সংসার চলবে, তাই নিয়ে চিন্তা মানুষের। মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের ফারুক শেখ জানান, আমরা মিনিকেট চাল ১২২০ টাকা করে ২৫ কেজি বস্তা কিনলাম। আগে এর দাম ৮৩০ টাকা, ৮৪০ টাকা বস্তা ছিল। দাম বাড়ার জন্য খুবই চিন্তিত, সামনে ঈদ, শুনছি আরও দাম নাকি বাড়বে। আয় তেমন নেই, বিএ, বিএড করে ঘরে বসে। মোটা চালের ভাত খেতে পারিনা, মিনিকেট খেয়ে অভ্যাস, কিন্তু এতো দাম হলে কিনবো কী করে?’
এই প্রতিবেদককে চালের দামবৃদ্ধি নিয়ে জানতে নদিয়ার দোগাছীর মুদিখানা দোকানের মালিক অশোক বাগচীর সঙ্গে সোমবার বিকালে কথা বলছিলেন। অশোক বাবু জানান, গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ মোটা চালের ভাত খায়। কিন্তু স্বর্ণা চাল আগে 2350 টাকা কুইন্টাল থেকে এখন 2700 টাকা হয়েছে। আমরা ২৭ টাকা কেজি কিনছি, বিক্রি করছি ২৮ টাকা।
তিনি আরও জানান, মিনিকেট, রত্না, সতী এইসব চাল একটু মধ্যম দাম বেড়েছে। কিন্তু স্বর্ণার দাম অনেক বেড়েছে, আর গ্রামের সাধারণ মানুষ এই চাল বেশি কেনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকরিজীবী জানান, অনেকের রেশন চালেই ভরসা। কিন্তু আমরা কী করবো? গ্যাসের দাম বেশি, জিনিসপত্রের দাম বেশি,শেষমেশ চালের দামও বাড়লো, মানুষ কিভাবে সংসার চালাবে? এমনিতেই মানুষের হাতে কাজ নেই, ইনকাম কম, তাহলে কিভাবে কী হবে বুঝতেই পারছি না।
তিনি জানান, আমার মতো ইনকাম করা ছেলের যদি সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাহলে নিম্নবিত্ত পরিবারের অবস্থা কী হচ্ছে ভাবুন।
কিন্তু চালের দাম এতটা বাড়ার কারণ কী? কেউ বলছেন মজুমদারের জন্য, আবার কেউ বলছেন বিদেশে চাল রপ্তানির জন্য দাম বাড়ছে। জানা গেছে, বছরের শুরুতে মিনিকেট চালের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪২ টাকা বা ৪৪ টাকা কিলো। কিন্তু এখন সেটা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। লাল স্বর্ণ চালের দামও বেড়েছে।
ভাঙড়ের পিয়ার মোল্লা বিভিন্ন জায়গায় সাইকেলে করে চাল বিক্রি করেন। বাড়িতে ধান শুকিয়ে চাল রেডি করে একেক বাড়িতে ৫০ কেজি করে নিয়ে যান। তিনি টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, আগে দেশি মিনিকেট ৪৪ টাকা ছিল, এখন সেটা ৪৮ টাকা। আর মোটা চাল ৩০ টাকা কেজি হয়েছে।
কেউ কেউ বলছেন, মজুতদারদের জন্যই কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। যে রাজ্যের ‘ধানের গোলা’ থাকে সেখানে চালের এতো দাম হওয়ার কথা নয়।
তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আমদানি শুল্ক ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার পর গত পাঁচ দিনে ভারতের চালের দাম দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। চাল রপ্তানি সংগঠনের সভাপতি বিভি কৃষ্ণ রাও মিডিয়াকে বলেন, ‘গত পাঁচ দিনে বিশ্ব বাজারে ভারতীয় অ-বাসমতি চালের মূল্য প্রতি টন ৩৫০ ডলার থেকে বেড়ে ৩৬০ ডলারে পৌঁছেছে। আর এটা ঘটেছে বাংলাদেশ থেকে শুল্ক কমানোর খবর আসার পর।’