কর্নেল হেদায়েত আলী: কোচবিহার রাজ্যের বীর সেনাপতি

পাশারুল আলম

কোচবিহার রাজ্যের ইতিহাসে কর্নেল হেদায়েত আলী ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর রণকৌশল, নেতৃত্ব, এবং প্রবল বীরত্বের ফলেই রাজ্যটি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত ছিল। বিশেষ করে, ভুটানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁর নির্ভীক প্রতিরোধ আজও স্মরণীয়।

কোচবিহারের প্রতিরক্ষায় হেদায়েত আলীর অবদান

১৮ শতকের শেষ এবং ১৯ শতকের শুরুর দিকে, ভুটানের সেনাবাহিনী একাধিকবার কোচবিহারের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল। কোচবিহার একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ছিল, এবং তার অবস্থান ভুটানের কাছে হওয়ায় তা আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে। এই সময়ে কর্নেল হেদায়েত আলীকে প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তৎকালীন কোচবিহার মহারাজ নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর হেদায়েত আলীর উপর পুরোপুরি আস্থা রেখেছিলেন। তাঁর রণকৌশল ছিল সুদক্ষ এবং সুনিপুণ। কর্নেল হেদায়েত আলী শুধু সামরিক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ছিলেন না, তিনি একটি দক্ষ কূটনীতিবিদও ছিলেন, যার ফলে তিনি শত্রুর কৌশল আগে থেকেই অনুধাবন করতে পারতেন। তাঁর নেতৃত্বে কোচবিহারের সেনাবাহিনী ভুটানের আক্রমণ প্রতিহত করে, এবং ভুটানের সৈন্যবাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে।

‘আলিপুর’ নামকরণের ইতিহাস

কর্নেল হেদায়েত আলীর এই অসামান্য বীরত্বের প্রতিফলন ঘটেছিল কোচবিহারের জনগণের জীবনযাত্রায়। মহারাজ নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর তাঁর বীরত্বে এতটাই খুশি হন যে, তাঁর সম্মানার্থে কোচবিহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে ‘আলিপুর’ নামে পরিচিত করেন। এই আলিপুরই পরবর্তীকালে ‘আলিপুরদুয়ার’ নামে পরিচিত হয়, যা বর্তমানে আলিপুরদুয়ার জেলা হিসেবে গঠিত হয়েছে।

বীরত্বের পুরস্কার: বক্সা দুয়ার

মহারাজ নৃপেন্দ্র নারায়ণ শুধু তাঁর নামে একটি এলাকা নামকরণ করেই থেমে থাকেননি। কর্নেল হেদায়েত আলীর প্রতি সম্মান জানিয়ে মহারাজ তাঁর বীরত্বের প্রতিদানে আলিপুরদুয়ার তথা বক্সা দুয়ারের বিস্তীর্ণ এলাকা ইজারায় প্রদান করেন। এই অঞ্চলগুলি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত বক্সা দুয়ার যা ঐতিহাসিকভাবে সামরিক এবং বাণিজ্যিক উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইজারা প্রদানের এই ঘটনাটি কেবল কর্নেল হেদায়েত আলীর প্রতি মহারাজার কৃতজ্ঞতারই প্রতিফলন ছিল না, বরং রাজ্যের উন্নয়ন এবং সুরক্ষায় তাঁর অবদানের স্বীকৃতিও ছিল।

উপসংহার

কর্নেল হেদায়েত আলী ছিলেন একজন দক্ষ সেনাপতি এবং কৌশলী নেতা, যাঁর কারণে কোচবিহার রাজ্য বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত ছিল। তাঁর অসামান্য বীরত্ব এবং অবদানের ফলস্বরূপ আলিপুরদুয়ার আজ ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

Exit mobile version