মুখ খুললেন রতন খাশনবিস,সোহন সিং

গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে প্রেস ক্লাবে ‘ফ্রেন্ডস অফ প্যালেস্টাইন’ এর সাংবাদিক সম্মেলন

মোকতার হোসেন মণ্ডল, টিডিএন বাংলা, কলকাতা:

গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধের দাবিতে কলকাতা প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন করল ‘ফ্রেন্ডস অফ প্যালেস্টাইন’ নামে বিভিন্ন সংগঠনের একটি যৌথ ফোরাম।

এদিন অধ্যাপক রতন খাশনবিস বলেন, ১৯৪৮ সালে বেইনসাফি করে ইজরায়েলকে অবৈধ রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের বুক চিরে বসিয়ে দিয়েছিল আমেরিকা, ব্রিটেন। তাঁর মতে, হামাসকে পছন্দ না হতে পারে, কিন্তু গাজায় তো শুধু হামাসের লোকরাই থাকে না। হামাসের অজুহাতে সেখানকার নিরীহ মানুষজনকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে কোন যুক্তিতে। গাজাবাসী কোথায় যাবে? বিশ্বের সবথেকে ঘনবসতিপূর্ণ উপত্যকা গাজা। যাকে আজ বিশ্বের সবথেকে বড় উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। অথচ দুঃখজনক হল, নরেন্দ্র মোদিও অত্যাচারী ও গণহত্যাকারী ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব বিবেকবান মানুষকে তিনি এর প্রতিবাদে সোচ্চার হতে আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, ভারত বরাবর ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও সংহতির পক্ষে। কিন্তু এই প্রথম দেখা গেল ভারত বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। এটা দেশের রাজনীতির চরম দক্ষিণপন্থী বাঁক। তাঁর কথায়, ভারতের মানবিক অবস্থান নেওয়া উচিৎ ছিল।

ফোরামের আহ্বায়ক কলকাতার আব্দুল আজীজ বলেন, গাজায় যা হচ্ছে তার সূত্রপাত ৭ অক্টোবর ২০২৩ নয়। ইজরায়েল এর শুরু করেছিল ১৯৪৮ সালের ১৪ মে। বিগত সাড়ে সাত দশক ধরে গাজা তথা ফিলিস্তিনিদের ওপর পাশবিকতা ও বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করে শরণার্থী ও উদ্বাস্তুতে পরিণত করেছে তারা। হামাস মানে জঙ্গি নয়, হামাস মানে হল প্রতিরোধ। অথচ হামাসকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে দাগিয়ে দিয়ে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। গত ২৬ দিনের একতরফা যুদ্ধে প্রায় ৯ হাজার গাজাবাসীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ইজরায়েলী বাহিনী। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির সর্বত্র বোমা মারছে।’

কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারক ও মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলি শাহ বলেন, মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী থেকে বাজপেয়ী পর্যন্ত ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিলেন। ১৯৭১ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সেনা পাঠিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র করতে সর্বাত্মক সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু আজ নরেন্দ্র মোদি ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পক্ষে নেই। তিনি উল্টো পথে হাঁটছেন। আবার গাজায় ত্রাণও পাঠাচ্ছেন। এই দ্বিচারিতা কেন?

শিখদের প্রতিনিধি সোহন সিং আতিয়ানা বলেন, গাজা ও পশ্চিমতীরকে এমনভাবে দু-টুকরো করা হয়েছে যে, তারা ভৌগোলিক দিক থেকে কখনও এক হতে পারবে না। কারণ, মাঝখানে বসে রয়েছে ইজরায়েল। হামাস স্বাধীনতার লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ১৯৪৮ সাল থেকে। আদানি কোম্পানিকে ব্যাকআপ দিতেই মোদি ইজরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে। কারণ, আদানি ইজরায়েলের একটা সমুদ্র বন্দর কিনেছে। আদানির জন্য মোদি দেশের বহু কিছু ছেড়ে দিয়েছেন বা আদানিকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাই ভারতের ফিলিস্তিনপন্থী ঐতিহ্যকেও তিনি ছেড়ে দিয়েছেন কেবল আদানি কোম্পানির স্বার্থে।

দীপংকর বসু বলেন, গাজাবাসীকে দক্ষিণাঞ্চলে চলে যেতে বলা হচ্ছে। সবকিছু ছেড়ে তারা কেন যাবে? ভারত ভাগের সময়েও অসংখ্য মানুষ এদেশ থেকে বাংলাদেশ এবং ওপার থেকে এপারে এসেছিল। সে যে কত কষ্টের ও দুর্বিষহ তা আমরা দেখেছি। তিনি আরও বলেন, স্ফুলিংগ থেকেই দাবানল ছড়ায়। সেবাবেই যুদ্ধ ধীরে ধীরে গাজা ছাড়িয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। তাই অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধ করতেই হবে। সব মানুষকে যুদ্ধ বিরতির জন্য একযোগে আওয়াজ ওঠাতে হবে। আর যেন নিরীহ মানুষের প্রাণ না যায়, সে ব্যাপারে আমাদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।

আবার ইমামে ঈদায়েন ক্কারী ফজলুর রহমান বলেন, ইজরায়েল রাষ্ট্র কীভাবে তৈরি হয়েছিল, তা আমরা কমবেশি জানি। এখন জানতে হবে, ইজরায়েলকে কেন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এনে বসানো হয়েছিল। পৃথিবীতে এত জায়গা থাকতে কেন মধ্যপ্রাচ্যের বুকের ওপর ইহুদিদের আবাসভূমি করে দেওয়া হল। ফিলিস্তিন তো জনমানবশূন্য মরুভূমি নয়। তবুও সেটা করা হল, কারণ ফিলিস্তিনেই রয়েছে জেরুসালেম এবং মুসলিম উম্মাহর প্রথম কিবলা পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ও সুপ্রাচীন ইসলামী ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ নিয়ন্ত্রণ করছে ইজরায়েল। সেখানে নামায আদায় করতে গেলে মুসল্লিদের বাধা দেওয়া হয়, প্রহার করা হয়, এমনকি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।

জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সেক্রেটারি শাদাব মাসুম জানান, শুক্রবার ৩ নভেম্বর জুম্মার নামাযের পর বেলা দুটো নাগাদ কলকাতার ধর্মতলাস্থিত টিপু সুলতান মসজিদের পিছনে ও স্টেটসম্যান অফিসের সামনে মানুষ জমায়েত হবে এবং সেখান থেকে প্রতিবাদী মিছিল বের হবে। গাজায় নরসংহার ও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে মার্কিন কনসুলেটে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে।

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Exit mobile version