পাশারুল আলম
ইসলাম, একটি শান্তি ও সমন্বয়ের ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ইসলামফোবিয়া ও ভ্রান্ত ধারণার মুখোমুখি। এই সংকট মোকাবিলায় কৌশলগত প্রচার ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। নিম্নে ইসলামের সঠিক বার্তা প্রচার ও বিদ্বেষ দূরীকরণে করণীয় বিষয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি সহকারে আলোচনা করা হলো:
১. লক্ষ্যভিত্তিক ধর্মীয় সভা: শিক্ষা ও সংলাপ
ইসলামের শান্তির বার্তা অমুসলিমদের কাছে পৌঁছাতে লক্ষ্যভিত্তিক সভার আয়োজন জরুরি। নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই বলেন, “শিক্ষাই হল সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যা দিয়ে পৃথিবী বদলানো যায়।” দিনের বেলায় শিক্ষিত অমুসলিমদের জন্য সেমিনার আয়োজন করে ইসলামের নৈতিকতা ও ইতিহাস তুলে ধরা সম্ভব। পাশাপাশি, ডালাই লামার মতে, "সত্যিকারের ধর্মীয় সম্প্রীতি তখনই সম্ভব যখন আমরা একে অপরের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধার চোখে দেখি।"
২. সুন্দর উপস্থাপনায় পুস্তিকা বিতরণ
জ্ঞানবিস্তারে ইসলামি সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম। প্রখ্যাত ইসলামিক পণ্ডিত ড. জাকির নায়েক বলেন, "জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিন—এটি অন্ধকারকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দূর করবে।"
৩. উদারপন্থী আলেমদের ভূমিকা
প্রগতিশীল আলেমদের সংলাপমুখী ভূমিকা প্রয়োজন। নিউইয়র্কের মসজিদ প্রতিষ্ঠাতা ইমাম ফয়সাল আবদুর রউফ বলেন, "ইসলামের সৌন্দর্য হলো তার বৈচিত্র্যে ঐক্য। আমাদের অন্যদের সাথে কথোপকথনে এগিয়ে আসতে হবে।"
ধর্মীয় নেতাদের উচিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপে সক্রিয় অংশগ্রহণ।
৪. মিডিয়ার দায়িত্বশীলতা
মিডিয়াকে ইসলামের সত্যিকারী ছবি তুলে ধরতে হবে। ব্রিটিশ সাংবাদিক জন এস্পোজিতো বলেন, "মিডিয়ার অর্ধসত্য ইসলামফোবিয়াকে উসকে দেয়। আমাদের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।"
ইসলামিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর উচিত বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ঐতিহাসিক প্রমাণ উপস্থাপন।
৫. জাকাতের মাধ্যমে মানবিকতা
জাকাতের অর্থ দরিদ্র বিধর্মীদের মাঝে বিতরণ ইসলামের উদারতা প্রকাশ করে। ইসলামিক অর্থনীতিবিদ ড. উমর চাপরার মতে, "জাকাত শুধু অর্থ নয়, এটি সমাজে সম্প্রীতির বিনিয়োগ।"
এই কর্মসূচি ইসলামের সামাজিক ন্যায়বিচারের বার্তা ছড়াবে।
৬. ইসলামফোবিয়া মোকাবিলায় অগ্রাধিকার
যুক্তিভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে ভ্রান্তি দূর করতে হবে। মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, "বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শিক্ষা ও সংহতির প্রয়োজন।"
বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ঐতিহাসিক ডকুমেন্টারির মাধ্যমে ইসলামের অবদান তুলে ধরতে হবে।
৭. আন্তর্জাতিক সংলাপ
বহুস্তরীয় সংলাপে ইসলামের বহুমুখী দিক উপস্থাপন জরুরি। দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু বলেন, "শান্তি তখনই সম্ভব যখন আমরা ভিন্নতা নিয়ে বাঁচতে শিখি।"
আন্তঃধর্মীয় সম্মেলনে ইসলামের শান্তি ও ন্যায়ের বার্তা প্রচার করতে হবে।
৮. রাজনৈতিক সচেতনতা
রাজনীতিতে ইসলামের স্বার্থ রক্ষায় কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বলেন, "নীতিনির্ধারণে ইসলামের মূল্যবোধই আমাদের দিশা দেখায়।"
মুসলিম নেতৃত্বের উচিত বৈশ্বিক ফোরামে সক্রিয়ভাবে ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।
৯. জনসমাগমে ইসলামি বার্তা
মাহাথির মোহাম্মদের মতে, "জনগণের মাঝে গিয়ে তাদের ভাষায় কথা বলুন।"
পার্ক, মেলা বা সামাজিক অনুষ্ঠানে ইসলামের মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা মানুষের কৌতূহল জাগাবে।
১০. অবিরাম প্রচেষ্টা
প্রচারে ধারাবাহিকতা আবশ্যক। রুমির বাণী অনুসারে, "নদী না থেমে প্রবাহিত হওয়ায়ই সাগরে পৌঁছায়।"
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও যুবসমাজের সম্পৃক্ততা টেকসই পরিবর্তন আনবে।
পরিশেষে বলা যায়, ইসলামফোবিয়া মোকাবিলা ও ইসলামের শান্তির বার্তা প্রচারে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ভাষায়, "অন্ধকার অন্ধকারে দূর হয় না, আলোয় দূর হয়।" শিক্ষা, সংলাপ ও মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে ইসলামের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা সম্ভব। পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী,
"তোমরা সর্বোত্তম পন্থায় মানুষের সাথে কথা বলো" (সূরা নাহল: ১২৫)।
এই আদর্শ ধারণ করেই আমরা একটি সহিষ্ণু বিশ্ব গঠনে ভূমিকা রাখতে পারি।