ভারতের রাজধানী দিল্লির সুন্দর নার্সারি-তে আন্তর্জাতিক সুফি সংগীত উৎসব ‘জাহান-ই-খুসরৌ ২০২৫’-এর শুভ সূচনা হয়েছে। উৎসবের ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
“ভারত স্বর্গের চেয়েও সুন্দর”—আমির খুসরোর প্রশংসা তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী
উৎসবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারতীয় সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্যের মহিমা তুলে ধরেন এবং ১৩শ শতকের মহান সুফি কবি আমির খুসরোর বাণী উদ্ধৃত করেন।
তিনি বলেন, “আমির খুসরো ভারতকে স্বর্গের চেয়েও সুন্দর বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত পৃথিবীর সব বড় দেশের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সংস্কৃতকে তিনি বিশ্বের সেরা ভাষা বলেছেন এবং ভারতীয় জ্ঞানীদের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত বলে আখ্যা দিয়েছেন।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সুফি সংগীত ও দর্শন সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বার্তা বহন করে, যা ভারতীয় ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক।
“জাহান-ই-খুসরৌ শুধু একটি উৎসব নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল প্রতিচিত্র। এই উৎসব ২৫ বছর ধরে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে, যা তার সবচেয়ে বড় সাফল্য।”
জাহান-ই-খুসরৌ: সুফি সংস্কৃতির ২৫ বছরের ঐতিহ্য
২০০১ সালে খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা মুজাফফর আলি এই উৎসবের সূচনা করেন। গত ২৫ বছরে এটি শুধুমাত্র সংগীত ও নৃত্যের আসর নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
এই উৎসব রুমি, আমির খুসরো, বাবা বুল্লে শাহ, লালেশ্বরী-সহ বহু সুফি সাধকের দর্শন, কবিতা ও সংগীতকে পুনর্জাগরিত করেছে।
উৎসবের প্রতিষ্ঠাতা মুজাফফর আলি বলেন—
“জাহান-ই-খুসরৌ জন্ম নিয়েছে সুফি সাধকদের ফিসফিসানি ও মরমী সংগীতের সুর থেকে। ২৫ বছর ধরে এটি এক পবিত্র আশ্রয়, যেখানে সংগীত, কবিতা ও ভক্তি মিলেমিশে আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভালোবাসাই প্রকৃত ঐক্যের পথ।”
উৎসবের প্রধান আকর্ষণ:
থিম: “বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য”
বিশ্বব্যাপী অংশগ্রহণ: ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরান, তুরস্ক, মিশর, মরক্কো, তিউনিসিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বহু দেশের সুফি শিল্পীদের পরিবেশনা।
বিশেষ পরিবেশনা:
ভারতের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতিচিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। সুফি কবিতা ও নৃত্যের মাধ্যমে রুমি, আমির খুসরো, বাবা বুল্লে শাহ, লালেশ্বরী-এর রচনার পরিবেশনা।
“দ্য এক্সপ্লোরেশন অব দ্য হ্যান্ডমেড”, যেখানে ‘ওয়ান ডিস্ট্রিক্ট-ওয়ান প্রোডাক্ট’ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন হস্তশিল্প, হস্ততাঁত, শিল্পকর্ম ও ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প প্রদর্শনী হবে।
উৎসবে বিভিন্ন হস্তনির্মিত শিল্পকর্ম ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ভারতের সমৃদ্ধ কারুশিল্প ও হস্তশিল্পের ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে।
বিশ্বের সেরা সুফি শিল্পীদের পরিবেশনা
তিন রাতব্যাপী এই উৎসবে বিশ্বের খ্যাতনামা সুফি শিল্পীদের পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করছে। ভারতীয় শিল্পীদের পাশাপাশি পাকিস্তান, তুরস্ক, মিশর, মরক্কো, ইরানসহ বিভিন্ন দেশের সুফি শিল্পীরা অংশ নিচ্ছেন।
২ মার্চ পর্যন্ত চলবে উৎসব
আধ্যাত্মিক সংগীত ও সুফি দর্শনের এই মহোৎসব চলবে ২ মার্চ পর্যন্ত। দিল্লিবাসী এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শকদের জন্য এটি এক অনন্য সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা হতে চলেছে বলে আয়োজকরা মনে করেন।