সংখ্যালঘু মানুষের সমস্যা পৃথিবীর প্রতিটি দেশে

বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রতি দরদ দেখিয়ে যাঁরা বেশি চিল্লাচ্ছেন তাঁদের দলই ভারতে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের পথ বন্ধ করে আইন তৈরি করছে

Photo: Reuters

সংখ্যালঘু মানুষের সমস্যা হয় পৃথিবীর প্রতিটি দেশে। কোন দেশে কোন সময় বেশি বা কম। তাই সমস্ত গণতান্ত্রিক মানুষকে সংখ্যালঘু মানুষের উপর অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, সংখ্যালঘু মানুষের পাশে থাকতে হবে।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের কিছু সমস্যা পাকিস্তান আমল থেকে হাসিনা জমানা পর্যন্ত ছিল, আজকের ইউনূস জমানাতেও আছে। হাসিনা এবং ইউনূস জমানাতে সমস্যার তীব্রতায় তেমন কোন হেরফের হয়নি ; বাংলাদেশ আমল থেকে (১৯৭১) আজ পর্যন্ত সেদেশের সংখ্যালঘু মানুষের তেমন কোন সমস্যা সেদেশে নেই ; যা আছে প্রতিবেশী দেশগুলির সংখ্যালঘু মানুষের।

আর এই কথা ঠিক যে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার কোন স্বাভাবিক সরকার নয়, দেশটি এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সময় সেদেশের মানুষের /সব জনগোষ্ঠীগুলোর বেশি সংযত এবং দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। কিন্তু কার্যত সেটা চোখে পড়ছে না।

আলোচনার অনেকগুলি দিক আছে। কিন্তু এখানে আমি মাত্র একটা বিষয়ের উল্লেখ মাত্র করবো। — সে দেশের হিন্দু বৌদ্ধ মানুষেরা (সবাই বা সব সংগঠন নয়) বরাবর হাসিনা সরকারের সমর্থক, অধিকাংশ লোক ভোট দেন বা দিতেন হাসিনার দলকে। তাঁদের কিছু ন্যায্য দাবি আছে, যেগুলি নিয়ে তাঁরা বড় বড় মিটিং মিছিল করছেন হাসিনার বিদায়ের পর থেকে। তাঁদের আগে কখনও এইভাবে রাস্তায় দেখা যায় নি এবং হাসিনা সরকার তাঁদের দাবিগুলো মেটায় নি। আর এখানেই একটা খটকা লাগে।

বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রতি দরদ দেখিয়ে যাঁরা বেশি চিল্লাচ্ছেন তাঁদের দলই ভারতে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের পথ বন্ধ করে আইন তৈরি করছে! সারা দেশ জুড়ে অনুপ্রবেশকারী শব্দের আড়ালে আসলে উদ্বাস্তুদের বিরুদ্ধে ভারতের মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলছে!

ভারতের মিডিয়া —- সোস্যাল, ইলেট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া হাসিনা পতনের পর থেকে যত সংখ্যালঘু অত্যাচারের ঘটনার উল্লেখ করেছে দেখা গেল তার অধিকাংশ ভুয়ো। কথিত অত্যাচারিতরা ভারতের মিডিয়া মারফত তাঁদের উপর অত্যাচারের কাহিনী শুনছেন বা পড়ছেন! বিজেপির নেতা শুভেন্দু একটি কোটি শরণার্থী ভারতে ঢুকবেন বলে মানুষকে তাতানোর তাওয়া গরম করেন। আর এখন ভোটের মায়ায় বিজেপি দলের মোকাবিলার জন্য কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম সব শিয়ালের একই সুর শুনছি।

আমি জানি আমার কথার অপব্যাখ্যা হবে। তাই পরিষ্কার করে আবারও বলছি যে, সেদেশে সংখ্যালঘুদের উপর কোন অন্যায়, অবিচার হয়নি, এই কথা আমি বলছি না। কিছু হয়েছে, আর তার থেকে কয়েকগুণ বেশি হয়েছে মুসলমান মানুষের উপর। আসলে এগুলি মূলত রাজনৈতিক হিংসা, অরাজকতার ফল।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা রাস্তায় নামছেন শুধুমাত্র সংখ্যালঘুদের জন্য নয়। মূলত কোন কোন শক্তির রাজনৈতিক স্বার্থে। তাতে লাভের থেকে সংখ্যালঘুদের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। তাঁদের বুঝে চলতে হবে। আর বর্তমান সরকারকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে শক্ত হতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।

আর ভারতে বিজেপির নোংরা রাজনীতির মোকাবিলা করার জন্য অন্য রাজনৈতিক দলগুলি যেভাবে কাদায় নামছে তাতে তাদের লাভ হবে না বরং দেশ ও জাতিকে ডুবিয়ে ছাড়বে!

Exit mobile version