নেই কোনো স্মৃতি ফলক, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক, স্বাধীনতা সংগ্রামী মাওলানা আকরাম খাঁ উপেক্ষিত - TDN Bangla
  • About Us
  • Privacy Policy
  • Contact Us
Wednesday, May 21, 2025
  • Login
No Result
View All Result
TDN Bangla
  • হোম
  • রাজ্য
  • দেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • সম্পাদকীয়
  • হোম
  • রাজ্য
  • দেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • সম্পাদকীয়
No Result
View All Result
TDN Bangla
No Result
View All Result
ADVERTISEMENT

বসিরহাটের হাকিমপুরে নেই কোনো স্মৃতি ফলক, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক, স্বাধীনতা সংগ্রামী মাওলানা আকরাম খাঁ উপেক্ষিত

বিপ্লবীদের ঐতিহাসিক মসজিদটি এখনো আছে

মোকতার হোসেন মন্ডল মোকতার হোসেন মন্ডল
December 17, 2024
| সাহিত্য ও সংস্কৃতি
আকরাম খাঁ সাহেবের পৈতৃক ভিটেয় টিভিএন বাংলার সম্পাদক মোকতার হোসেন মন্ডল। দেশভাগের পর এই জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

আকরাম খাঁ সাহেবের পৈতৃক ভিটেয় টিভিএন বাংলার সম্পাদক মোকতার হোসেন মন্ডল। দেশভাগের পর এই জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে ভাবছি, মাওলানা আকরাম খাঁ সাহেবের বাড়ি যাবো। পাশের জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনার এতো বড় মহান মানুষের বাড়ি না যেতে পারাটা আমার জন্য দুর্ভাগ্যের হবে। কিন্তু যাই যাই করে অনেকটা বছর কেটে গেল। হঠাৎ ২ ডিসেম্বর ২০২৪ সকাল ১০ টায় পৌঁছে গেলাম বসিরহাটের হাকিমপুরে। আকরাম খাঁ- এর পাশের গ্রাম।

তারালির আব্দুর রফিক ও স্বরূপদহের পাশের দহর কান্দার আলমগীর সরদার আমাকে বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরিচয় করালেন। কিন্তু গ্রাম ছাড়া এখানে আর কী আছে! পুরাতন সেই বাজার, সেই ঈদগাহতলা, সেই কবরস্থান সব আছে, কিন্তু বিপ্লবীর নাম নেই।

আকরাম খাঁ ছিলেন বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতার অন্যতম অগ্রনেতা এবং বাঙালি মুসলিম সমাজে সাংবাদিকতার জনক। আধুনালুপ্ত দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বাঙালি মুসলিম নেতা।

বহু পুরাতন একটি মসজিদ দেখতে পেলাম। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এই মসজিদ বড় ভূমিকা নিয়েছিল। কিন্তু দুঃখ পেলাম, যখন শুনলাম জমিদার বংশের আকরাম সাহেবের ভিটেমাটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কোনও স্মৃতি চিহ্ন রাখা হয়নি। গ্রামের কোথাও কোনো ফলক নেই। কোনো রোডের নাম স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামে নেই। বাড়ির প্রাচীরের পাশ দিয়ে একটি ছোট নদী বয়ে যাচ্ছে। ওপারে বাংলাদেশ। দুই পারে বহু বাড়ি, বহু মানুষ। বাঁশবাগানের নীচে বসে আছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। এই এলাকায় কত বিপ্লবীদের যাতায়াত ছিল। খিলাফত অন্দোলনের সময় জাতীয় নেতারা এখানে এসেছিলেন।

আকরাম খাঁ ছিলেন বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতার অন্যতম অগ্রনেতা এবং বাঙালি মুসলিম সমাজে সাংবাদিকতার জনক। আধুনালুপ্ত দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বাঙালি মুসলিম নেতা। এলাকার লোকদের জিজ্ঞেস করলাম, আকরাম খাঁ সাহেব সম্পর্কে জানেন? এক মহিলা বললেন, শুনেছি উনি নাকি এই গ্রামের বড় মানুষ ছিলেন, তারপর নাকি বাংলাদেশ চলে গেছেন। আরেকজন বললেন, উনি বড় বংশের লোক। খাঁ সাহেবদের বিশাল জমিজমা ছিল। ইংরেজের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করেছেন l এখন বসত ভিটে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

মাওলানা আকরম খাঁ তাঁর ধর্মাচার, লেখালেখি, সাহিত্যচর্চা, সাংবাদিকতা—সব কিছুর বিনিময়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও মুসলিম স্বাধিকারের পক্ষে অবিরাম সংগ্রাম করছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জন্য তিনি জেল খেটেছেন এবং এক সময় তাঁর সম্পাদিত মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকা নিষিদ্ধ হয়। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের রচয়িতা প্রান্তিক মানুষের কথাকার অদ্বৈত মল্লবর্মণ এই পত্রিকায় কাজ করতেন। শুধু তাই নয়, উপন্যাসটি সর্বপ্রথম ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আশ্চর্যের বিষয়, এতো বড় একজন মানুষের জীবন- ইতিহাস সম্বলিত সংগ্রহশালা নিজ গ্রামে গড়ে ওঠেনি! ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক।

স্বাধীনতা সংগ্রামী, দৈনিক আজাদের সম্পাদক মাওলানা আকরাম খাঁ সাহেবের সেই সময়ের বাড়ি। টিডিএন বাংলার নিজস্ব ছবি

যতদূর জানা যায়, বাংলার গণজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদ মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে মতান্তরে ১৮৬৮ সালে ৭ জুন চব্বিশ পরগনা জেলার হাকিমপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত আলিম ও পন্ডিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মওলানা আকরম খাঁর পিতা মওলানা আবদুল বারী এবং পিতামহ তোরাব আলী। বাবা ছিলেন খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ। মা বেগম রাবেয়া খাতুন ছিলেন ইসলামী পন্ডিত। পিতামহ ওহাবী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। ইংরেজ সরকারের বিরূদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম করেছেন মাওলানা আকরাম খাঁ। পাশে পেয়েছিলেন বহু আলেম-উলামা- মাশায়েখ ও সাধারণ জনতা।

আকরম খাঁ ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনে নিষ্পেষিত বাঙালি মুসলিম সমাজের জাগরণে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সহিত্যিক, ধর্মবেত্তা, সমাজসেবক ও সেই সময়ের প্রভাবশালী একজন রাজনীতিবিদ। সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা।

তথ্য বলছে, মাওলানা আকরাম খাঁ সাহেবের পিতা মওলানা হাজি আবদুল বারী খাঁ গাজি মাত্র ১২ বছর বয়সে সৈয়দ আহমদ শহীদ (রহ.)-এর নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। ঐতিহাসিক বালাকোটের ময়দানে তিনি দেশ ও জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। বাবার সংগ্রামী জীবন মওলানা আকরম খাঁকেও দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল। মাওলানা সাহেবের মনোবল ও আকাঙ্ক্ষা ছিল অত্যন্ত উচ্চ। বাবা- মা হারানোর দুঃখ কষ্টের মাঝেও তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে লেখাপড়া করেছেন। তিনি ছিলেন জ্ঞানের অনুরাগী ও সাধক। বিভিন্ন তথ্য মতে, বাড়িতে পড়াশোনা করতে করতে এক সময় তিনি কলকাতা চলে যান। ১৯০০ সালে তিনি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এফএম পরীক্ষায় পাশ করেন।

বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট আবুল কাসেম ফজলুল হক আকরাম খাঁ সম্পর্কে বলেছেন , ‘তিনি বাংলা, সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, ফারসি, উর্দু—এই ছয়টি ভাষা জানতেন এবং নানা বিষয়ে অসাধারণ পণ্ডিত ছিলেন। তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিল ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, ধর্মতত্ত্ব, বাংলার ইতিহাস, ভারতের ইতিহাস, ইংরেজ জাতির ইতিহাস, ইতিহাসতত্ত্ব, রাজনীতি ও রাষ্ট্রতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে। তাঁর রচনাবলিতে তাঁর পাণ্ডিত্য ও বিদ্যাবত্তার পরিচয় আছে। রাজনীতিবিদ হিসেবেও তিনি প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন।’

উইকিপিডিয়া বলছে, মাওলানা আকরাম খাঁ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন আরম্ভ করেন। তিনি ছিলেন ১৯০৬ সালে তৈরি মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন। ১৯১৯ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি খেলাফত এবং অসহযোগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯২০ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি নিখিল ভারত খেলাফত আন্দোলন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। জানা গেছে, ঢাকার এই সম্মেলনে খেলাফত আন্দোলনের অন্যতম নেতা মওলানা আবুল কালাম আজাদ, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মওলানা মজিবুর রহমান প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যাক্তি উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ মাওলানা আকরাম খাঁর দায়িত্ব ছিল তুর্কি খেলাফত থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করা। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনকে তিনি গতিশীল করার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯২০-১৯২৩ সময়ের মধ্যে তিনি অখন্ড বাংলার বিভিন্ন স্থানে জনসভা করে খেলাফত আন্দোলনে গতি আনেন। শুধু লেখনীর মাধ্যমে নয়, তাঁর তেজদীপ্ত বক্তৃতায় হাজার হাজার মানুষ বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিল মাওলানা আকরাম খাঁ।

হাকিমপুরের ঐতিহাসিক মসজিদ যেখানে বিপ্লবীরা নামাজ পড়তেন ও ইংরেজ সরকারের বিরূদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতেন

হিন্দু মুসলিম ভ্রাতৃত্বের জন্য কাজ করেছেন। ১৯২২ সালে তিনি চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ পার্টির পক্ষ নেন এবং ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট সন্ধির সময়ও তিনি একই পক্ষে ছিলেন। তবে ১৯২৬-১৯২৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং অন্যান্য সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাবলির কারণে মাওলানা আকরম খাঁ রাজনীতির প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন এবং তিনি স্বায়ত্তশাসন পার্টি এবং কংগ্রেস থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু ১৯২৯ থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে তিনি গ্রাম্য রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আবার ১৯৩৬ সালে তিনি গ্রাম্য রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে সক্রিয়ভাবে মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আকরাম খাঁ মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ব্রিটিশ শাসনের অবসান হল। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর দৈনিক আজাদীর সম্পাদক পূর্ব পাকিস্তানে (আজকের বাংলাদেশ) চলে যান এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় থেকে তিনি সংবাদপত্রের কাজ কর্ম চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে গঠিত পাকিস্তান কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডোলজির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন মাওলানা আকরাম খাঁ।

বাংলাদেশের দৈনিক ইনকিলাব পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়, কুষ্টিয়ার আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ নামক এক প্রখ্যাত ও উদার ব্যবসায়ী আকরাম খাঁ- এর বাবার বন্ধু ছিলেন। তিনি একটি মাসিক পত্রিকা বের করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চিন্তা করছিলেন। মওলানা আকরম খাঁকে তিনি ১৯০১ সালে ত্রৈমাসিক এবং ১৯০৩ সালের ১৮ আগষ্ট মোহম্মদী নামে আবদুল্লাহ সাহেবের প্রতিষ্ঠিত আলতাফী প্রেস থেকে পত্রিকাটি বের করেন। আকরম খাঁ উক্ত পত্রিকার সম্পাদক নিয়োগ পান। বেতন ছিল পনেরো টাকা। ১৯১০ সালে আকরম খাঁকে পত্রিকার স্বত্ব সহ আলতাফী প্রেস দিয়ে দেওয়া হয়।

মিডিয়া জগতে তখন উজ্জ্বল নাম আকরাম খাঁ। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ১৯১০ সালে সাপ্তাহিক মোহাম্মদী ও দৈনিক খাদেম প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর ১৯২১ সালে উর্দু জামানা ও বাংলা দৈনিক সেবক প্রকাশ করেন। ১৯২৭ সালে পুনরায় মাসিক মোহাম্মদী প্রকাশ করেন। বর্তমানে পত্রিকার বেশ কিছু সংখ্যা বাংলাদেশের বাংলা একাডেমি, বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।

১৯৩৬ সালের অক্টোবর মাসে মাওলানা আকরম খাঁ দৈনিক আজাদ পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। সেই সময় এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। মুসলিম লীগের সমর্থন যোগাতে এই বাংলা পত্রিকাটি সেই সময় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে পত্রিকার বহু পুরনো সংখ্যা সংরক্ষিত আছে।

নদীর ওপারে বাংলাদেশ। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় দুপারের মানুষ বড় ভূমিকা নিয়েছে

মাওলানা আকরাম খাঁ সাহেবের লেখাগ্রন্থের মধ্যে আমপারার বাংলা অনুবাদ, মোস্তফা-চরিত, তাফসীরুল কোরআন প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দি ডেইলি স্টার বাংলায় ইমরান মাহফুজ লিখেছেন,”বৃহত্তর বাঙালি চেতনা বিকাশেও তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তার রচিত মোস্তফা-চরিত যেমন মহানবী (স.)-এর বস্তুনিষ্ঠ জীবনী, তেমনি তার রচিত মোসলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস গ্রন্থটি সামাজিক ইতিহাস প্রণয়নে অন্যতম আকর গ্রন্থ হিসেবে প্রাসঙ্গিক থাকবে আগামীতেও।”

২০ আগষ্ট ২০২১ বাংলাদেশের দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় আবুল কাশেম হায়দার লিখেছেন, বৃটিশ শাসন আমলে কোলকাতা মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনে সংস্কৃতিক শাখার সভাপতির ভাষণে মওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ মুসলমানদের সংস্কৃতির রূপ কেমন হবে তার ব্যাখা দিয়ে বলেছেন, ‘জাতি হিসাবে মুসলমানদেরও একটা নিজস্ব ও অনন্য নিরপেক্ষ সংস্কৃতি আছে। দীর্ঘকালের শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কারের ইতিহাসে নানা সুখ-দুঃখ পূর্ণ স্মৃতির মধ্য দিয়ে শিল্প ও সাহিত্য সেবার অভিনব রূপ রসের অনুভূতি ও আস্বাদের মধ্য দিয়ে অতীতের বহু সঞ্চয় ও ভবিষ্যতের বহু সম্ভাবনাকে অবলম্বন করিয়া মুসলমানের এই সংস্কৃতি সৃষ্ট পুষ্ট ও জীবন্ত হইয়া আছে।’

কিংবদন্তি যুগপুরুষ মাওলানা আকরাম খাঁ ১৩২৫ বঙ্গাব্দে লিখেছিলেন- ‘দুনিয়ায় অনেক রকম অদ্ভুত প্রশ্ন আছে, বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা কি? উর্দু না বাংলা? এই প্রশ্নটা তাহার মধ্যে সর্বাপেক্ষা অদ্ভুত। নারিকেল গাছে নারিকেল ফলিবেনা, বেল?… বঙ্গে মুসলিম ইতিহাসের সূচনা হইতে আজ পর্যন্ত বাংলা ভাষাই তাদের লেখ্য, কথ্য ও মাতৃভাষা রূপে ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে এবং ভবিষ্যতেও মাতৃভাষারূপে ব্যবহৃত হইবে।’ (বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকা, মাঘ, ১৩২৫)

এই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী, লেখক, পত্রিকা সম্পাদক ১৯৬৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকার ঢাকেশ্বরী রোড লালবাগের নিজ বাসায়, বার্ধক্যজনিত এবং নানাবিধ অসুস্থতার মধ্যে ইহলোক ত্যাগ করেন।

মাওলানা আকরাম খাঁ – কে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তিনি ওই দেশের বাংলা একাডেমি ফেলো পেয়েছেন।

দেশভাগ আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। বিশেষত মুসলিম ও দলিত সমাজে এর বিরাট প্রভাব পড়েছে। ভারতের মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ( তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) চলে গেছেন। দেশভাগের ফলে আসাম – পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলিম সমাজ আজো সেইভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এই যন্ত্রণা পাকিস্তান- বাংলাদেশের মুসলিম ও ভারত তথা আসাম- ত্রিপুরা-পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা কিন্তু বুঝবে না। তাই বলে ইতিহাস, ঐতিহ্য – সাহিত্য কিংবা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাহিনী ভুলে যেতে হবে? অখন্ড ভারতের মানুষ এক সঙ্গে ব্রিটিশের বিরূদ্ধে লড়াই করেছেন, ডিভাইড এন্ড রুলস পলিসির জন্য তৈরি দেশভাগের বেড়া মাটি, পাখি, বাতাস, নদ নদীকে আলাদা করতে পারেনি। উপমহাদেশের ঐক্যবদ্ধ শক্তি গোটা পৃথিবীতে প্রশংসিত ছিল। একটা কাঁটাতার, ম্যাপ আর সংগীত কি সেই সোনালী ইতিহাস থেকে জনগণকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে? সরকারের উচিত জাতির বীর সন্তানদের সম্মাননা দেওয়া, স্বাধীনতা সংগ্রামী- লেখকদের বাড়ি ঘরকে সংরক্ষিত করা। আমরা চাই, হাকিমপুরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলুক সরকার। মাওলানা আকরাম খাঁ সাহেবের নামে সড়কের নাম হোক। আমাদের মনে রাখতে হবে, উদ্দেশ্য যাইহোক, দেশকে স্বাধীন করতে অত্যাচারী ব্রিটিশ রাজের বিরূদ্ধে যাঁরা-ই সংগ্রাম করেছেন তারাই আমাদের জাতীয় সম্পদ।

Tags: Freedom FighterMaulana Akram KhanTop News
ShareTweet
মোকতার হোসেন মন্ডল

মোকতার হোসেন মন্ডল

মোকতার হোসেন মন্ডল একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক। টিডিএন বাংলার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। এছাড়া তিনি কবিতা, গল্প, নিবন্ধ লেখেন।

Related Posts

ইতিহাস গড়লেন বানু মুশতাক, আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জয় করলেন কর্নাটকের লেখিকা

ইতিহাস গড়লেন বানু মুশতাক, আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জয় করলেন কর্নাটকের লেখিকা

May 21, 2025
0

কর্ণাটকের লেখক, সমাজকর্মী ও আইনজীবী বানু মুশতাক আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জয় করেছেন। তাঁর লেখা ছোটগল্প সংকলন ‘হার্ট ল্যাম্প’ ২০ মে...

ডোমকলের জিৎপুর বিএড কলেজে কেরিয়ার কাউন্সিলিং ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নাগরিক ঐক্য মঞ্চের

ডোমকলের জিৎপুর বিএড কলেজে কেরিয়ার কাউন্সিলিং ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নাগরিক ঐক্য মঞ্চের

May 19, 2025
0

নাগরিক ঐক্য মঞ্চের উদ্যোগে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের জিৎপুর বিএড কলেজে অনুষ্ঠিত হল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কেরিয়ার কাউন্সিলিং ও কৃতি...

মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ হাইকোর্টের

ব্রিগেডে সমাবেশ করতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড

May 14, 2025
0

কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন সংশোধিত ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে ২৬ এপ্রিল ব্রিগেডে সমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছে মুসলিম...

Recommended

বুলডোজার নীতির সমালোচনা সুপ্রিমকোর্টের, পুলিশ-প্রশাসন কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারে না!

6 months ago
নারীর মর্যাদায় মহানবী (সা.)-এর অবদান

নারীর মর্যাদায় মহানবী (সা.)-এর অবদান

2 months ago
Facebook Twitter Youtube
TDN Bangla

TDN Bangla is an Online bengali news portal, provides voice for poeple by sharing most authentic news in bengali.You can find out news like international, national, state, entertainment, literature etc at TDN Bangla.

Category

  • Uncategorized
  • আন্তর্জাতিক
  • খবর
  • খেলা
  • দেশ
  • ধর্ম ও দর্শন
  • প্রবন্ধ
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • রাজ্য
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • সম্পাদকীয়
  • সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • About Us
  • Privacy Policy
  • Contact Us

© 2024 TDN Bangla | developed with ♥ by GS Kitchen.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
No Result
View All Result
  • হোম
  • রাজ্য
  • দেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • সম্পাদকীয়

© 2024 TDN Bangla | developed with ♥ by GS Kitchen.

This website uses cookies. By continuing to use this website you are giving consent to cookies being used. Visit our Privacy and Cookie Policy.