রমজান মাসে রোযা রাখা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। এটি একান্তই ব্যক্তি ও স্রষ্টার মধ্যকার সম্পর্ক। ইসলাম কাউকে জোরপূর্বক রোযা রাখতে বাধ্য করে না, বরং ন্যায়বিচার, সহনশীলতা এবং নৈতিকতার উপর জোর দেয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশসহ কিছু মুসলিমপ্রধান দেশে মৌলবাদী কিছু গোষ্ঠী ধর্মের নামে নিজেদের মতবাদ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, যা ইসলামি মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক।
১. রোযাদারদের জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা কি জরুরি?
এটা যুক্তির বাইরে যে দিনের বেলা হোটেল বা চা দোকান খোলা থাকলে রোযাদারদের কষ্ট হবে। প্রকৃত রোযাদার আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোযা রাখেন, এবং তাঁদের আত্মসংযম এতটাই দৃঢ় যে খাবার সামনে থাকলেও তাঁরা তা স্পর্শ করবেন না। রাস্তার ধারে খাবারের দোকান বা কারও খাওয়ার দৃশ্য দেখে যদি কেউ রোযা রাখতে না পারেন, তবে সেটা তাঁর আত্মশক্তির অভাব, ব্যবসায়ীদের দোষ নয়।
২. রোযা কি সবার জন্য বাধ্যতামূলক?
না, ইসলামেই স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে শিশুরা, অসুস্থরা, বৃদ্ধরা এবং ভ্রমণকারীরা রোযা রাখতে বাধ্য নন। এছাড়া, অমুসলিমদের জন্য তো রোযার কোনো বিধানই নেই। তাহলে তাঁদের খাবার বন্ধ করে দেওয়ার অধিকার মৌলবাদী দলগুলো কোথায় পেল? ইসলামে কারও ওপর জোর করে ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
৩. প্রকৃত সামাজিক সমস্যা নিয়ে ফতোয়া কই?
রমজান এলেই আমরা দেখি, ফলমূল, পোশাক, ও যানবাহনের ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অথচ এই দাম বাড়ানোর মূল কারিগররাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোযাদার! ব্যবসায়ীরা দিনের বেলা খাবার দোকান বন্ধ রাখার জন্য ফতোয়া দিতে বললেও, অন্যায্য মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে তাঁরা নিশ্চুপ থাকেন। অথচ প্রকৃত ইসলামি শিক্ষায় বলা হয়েছে, অন্যায্য মজুদদারি ও মূল্যবৃদ্ধি করা হারাম।
আমাদের সমাজে খুন, ধর্ষণ, চুরি, ঘুষ, দুর্নীতি, অন্যায্য মজুদদারি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং দরিদ্রদের শোষণের মতো অপরাধ রমজান মাসেও অব্যাহত থাকে। এই সব সত্যিকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো মৌলবাদী দল আন্দোলন করে না, কোনো ফতোয়া জারি করে না। কিন্তু সাধারণ মানুষের খাবার বন্ধ করতে তাঁদের তৎপরতা চোখে পড়ে!
রমজান সংযম, সহমর্মিতা এবং ন্যায়বিচারের মাস। ধর্মকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেয়ে নিজেদের আত্মশুদ্ধির দিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। ধর্মের নামে জোরজবরদস্তি ইসলাম সমর্থন করে না, বরং এটি ইসলাম ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো যদি সত্যিই ইসলাম ও সমাজের কল্যাণ চায়, তবে খাবার বন্ধ করার ফতোয়ার বদলে দুর্নীতি, শোষণ ও অন্যায্য মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করুক। তবেই বোঝা যাবে তাঁরা আসলেই ধর্মের কল্যাণ চান, নাকি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ধর্মকে ব্যবহার করছেন।