রোজার আনন্দের সঙ্গে কিছু বিশেষ স্মৃতি জড়িয়ে থাকে

সাজিদুর রহমান

শৈশবের স্মৃতির ঝাঁপি খুললেই আমার মনে পড়ে সেই বিশেষ দিনের কথা—আমার প্রথম রোজা। যদিও সেই দিনের প্রতিটি মুহূর্ত স্পষ্ট মনে নেই, তবু মায়ের কথায়, পরিবারের স্মৃতিচারণে আমি যেন আবার ফিরে যাই আমার ছোটবেলার সেই সোনালি দিনে। বলতে গেলে, টিডিএন বাংলায় লিখবো বলেই অতীতের স্মৃতি ঘেরা রোজার কথা মনে করতে থাকি।

আমি তখন সদ্য পাঁচ বছরে পা দিয়েছি। ছোট্ট আমি বুঝতে পারতাম না রোজার গভীর তাৎপর্য, কিন্তু পরিবারের সবার উৎসাহে আমিও একদিন ঠিক করলাম, আমিও রোজা রাখব! বড়দের মতো আমিও সকাল থেকে না খেয়ে থাকব, ইফতারের অপেক্ষা করব।

রোজার দিনের সূর্য যেন একটু বেশিই প্রখর ছিল সেদিন। দুপুর গড়াতেই আমি গরমে লালকাল হয়ে বাড়ির এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করছিলাম। বারবার জল খাওয়ার কথা মনে পড়ছিল, কিন্তু সবার ভালোবাসা, আদর আর অনুপ্রেরণায় আমি ধৈর্য ধরলাম। দাদু, বড় আব্বা আর বাবা আমাকে আদরে ভরিয়ে দিলেন, যেন আমি ক্লান্ত না হয়ে পড়ি। আর মা? মা তো স্নেহের পরশে আমার প্রথম রোজার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিলেন।

সন্ধ্যা যখন নামল, বাড়ির উঠোনে ইফতারের আয়োজন চলল ধুমধাম করে। রঙিন খেজুর, শরবত, পেঁয়াজি, বেগুনি—সবকিছু যেন আমার অপেক্ষায়! আমি মায়ের কোলে বসে খেজুর মুখে দিয়ে আমার প্রথম রোজার সমাপ্তি করলাম। সে এক অন্যরকম অনুভূতি! মনে হচ্ছিল, আমি যেন বড় হয়ে গেছি, যেন আমি এক গর্বিত মানুষ।

রোজার আনন্দের সঙ্গে আরেকটি বিশেষ স্মৃতি জড়িয়ে আছে—আমার প্রথম তারাবীহ নামাজের ইমামতি। তখন আমার বয়স মাত্র আট। পুলিন্দা টিভিরধার ওয়াক্তিয়া মসজিদে প্রথমবারের মতো আমি তারাবীহ নামাজে ইমামতি করার সুযোগ পাই। আমি তখনও কোরআনের হাফেজ হইনি, কিন্তু মুসল্লিদের ভালোবাসা ও আস্থায় আমি সেদিন ইমামতির দায়িত্ব পালন করেছিলাম।

সেই ছোট্ট বয়সে তারাবীহ নামাজের প্রতিটি রাকাতে দাঁড়ানোর অনুভূতি, মুসল্লিদের সঙ্গে একসঙ্গে মহান আল্লাহর সামনে আত্মনিবেদনের সেই মুহূর্ত, আজও আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে।

শৈশবের সেই দিনগুলো আজও আমার মনের পাতায় এক উজ্জ্বল ছবি হয়ে ঝলমল করে। প্রথম রোজা, প্রথম ইফতার, প্রথম তারাবীহ—সব মিলিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যা আমার জীবনের এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে চিরকাল।

লেখক: অল ইন্ডিয়া মিল্লি কাউন্সিল পশ্চিমবঙ্গের যুব কনভেনর

Exit mobile version