মোকতার হোসেন মন্ডল:
শীতের কুয়াশা মাড়িয়ে পূব দিগন্তের সুয্যি মামা মিশনের খোলা জানালা ভেদ করে আমার মুখে এসে চুমা দিল। তখন সকাল দশটা। শিশুরা এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করছে। কেউ কেউ মায়ের কোলে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ আবার বাবার সঙ্গে খুনসুটি করছে।
মসজিদের পাশ দিয়ে মূল ক্যাম্পাসের বারান্দায় গিয়ে উঠলাম। এই সেই বারান্দা যেখানে অনেকবার বিকেলের পড়ন্ত রোদের খোঁজ করেছি।
৮ ডিসেম্বর ২০২৪। এখন ভর্তির সময়। দূর দূরান্ত থেকে বহু ‘আগামী’ এসেছে। নীচে নেমে হাই মাদ্রাসার পাশ দিয়ে পশ্চিমদিকের রাস্তা ধরে শান্তিনীড়ে এলাম। আল আমীন মিশনের সম্পাদক এম নূরুল ইসলাম বললেন,’ছয় তলায় উঠতে হবে’। পাশে লিফট ছিল কিন্তু সেটা প্রতিবন্ধীদের ব্যবহারের জন্য। একটার পর একটা সিঁড়ি বেড়ে উপরে উঠছি। শান্তি নীড়! এটাই তাহলে বাবা হারা, মাতৃহীন ছোট ছোট কোমল শিশুদের স্বপ্নের উড়ো জাহাজ! এখানেই তাহলে অনাথ ছেলেমেয়েরা বিশ্ব জয়ের গল্প রচনা করবে! এক পা, দু পা করে হাঁটতে হাঁটতে ঠিক পৌঁছে গেলাম ছ’তলায়। সিঁড়ি পথে অনেকের সঙ্গে দেখা হল। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অচেনা মুসাফিরকে যেন তারা সেই কবে থেকে চেনেন! ‘আপনি কি সাংবাদিক মোকতার হোসেন? আপনার ভিডিও আমরা দেখি, খুব ভালো লাগে।’
দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই দেশভাগের বলি সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের মিশন শিক্ষার স্বপ্ন জালের শীতল পাটির স্রষ্টা এম নুরুল ইসলাম সাহেব সালাম জানালেন। হাতে হাত রাখতেই বললেন, ‘বসুন’। এখন কাউন্সিলিং চলছে। বহু মানুষের ভিড়। আল আমীন মিশনের সম্পাদক বললেন, ‘আজ বাড়ি গেলে হবে না। আপনাকে থাকতেই হবে। হাই মাদ্রাসার পাশের বিল্ডিং এ বক্তব্য হবে, ওখানেও থাকতে হবে।’
আড্ডা হাসি গল্প শেষে রুম থেকে একটু বাইরে এলাম। শান্তিনীড়ের ছয় তলা থেকে পূব দিকের দরজা খুললাম। আহা কী সুন্দর! খোলা আকাশ। সবুজ মাঠ। ওই দূরে দেখা যায় চাষী মাঠে কাজ করে। সারিসারি বাঁধা কপি। উত্তর পূর্ব পানে মিশনের মূল ক্যাম্পাস কী চমৎকার লাগছে!
কল্পলোকে হারিয়ে গেলাম। শান্তিনীড়ের শিশু যদি বিশ্ব জয়ী বিজ্ঞানী হতে পারে তাহলে আগামী প্রজন্ম গর্বের সঙ্গে বলবে- পিতৃমাতৃহীন এতিম এখন দুনিয়ার অভিভাবক। সেই আনন্দে চোখে জল আসবে আমাদের।
আচমকা একজন এসে বললেন,’স্যার আপনাকে ডাকছেন।’ ফের গেলাম রুমে। নূরুল ইসলাম সাহেব বললেন, ‘মোকতার ভাই ওই বিল্ডিং এ যেতে হবে। ওখানে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা হবে। আপনাকে কিন্তু পুরো সময় থাকতে হবে।’
সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামলাম। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বেশ খানিকটা দূর থেকে শান্তিনীড়-কে আরেকবার ভালোকরে দেখলাম। এক মায়াবী
আবাস! শিক্ষা অন্দোলনের ভালোবাসার কান্ডারী আজকাল এখানেই থাকেন।
হাই মাদ্রাসার পাশের বিশাল বিল্ডিং এ লিফটের ব্যবস্থা নেই। হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা ক্লান্ত। মনে বল পেলাম যখন ভাবলাম, এই পথ দিয়েই তো সরকারি পেনশনভোগী অবসরপ্রাপ্ত চির কিশোর এম নূরুল ইসলাম সাহেব রোজ আসা যাওয়া করেন। তার কী কষ্ট হয়না? এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে কনফারেন্স হলে এসে অভিভাবকদের চেয়ারে বসলাম।
নূরুল ইসলাম সাহেব বক্তব্য দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। রুমে তখন বিপুল ভিড়। ‘মোকতার ভাই স্টেজে আসুন’। আমি খানিকটা ইতঃস্ততবোধ করছিলাম। তিনি ফের ডাকলেন। তার ভালোবাসা ফেরাবো সেই স্পর্ধা আমার নেই। স্টেজে গিয়ে উঠলাম। উপস্থিত জনতার সামনে তিনি আমার পরিচয় করালেন। ‘আমাদের সাংবাদিক মোকতার হোসেন ভাই।’ আমি যে আল আমীন পরিবারের একজন সেটা বুঝিয়ে দিলেন।
মহান মনের মানুষেরা এমনই হয়।
নূরুল ইসলাম সাহেব দুঃখ করে বললেন, ‘সাংবাদিকরা বিশাল পাওয়ারফুল। অথচ আমরা সেই জগতে অনেকে যেতে চায়না।’
কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাটের হাকিমপুরে। মাওলানা আকরাম খাঁ- র বাড়ি। একটি মসজিদ দেখতে পেলাম। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এই মসজিদ বড় ভূমিকা নিয়েছিল। কিন্তু দুঃখ পেলাম, যখন শুনলাম জমিদার বংশের আকরাম সাহেবের ভিটেমাটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কোনও স্মৃতি চিহ্ন রাখা হয়নি। বাড়ির প্রাচীরের পাশ দিয়ে একটি ছোট নদী বয়ে যাচ্ছে। ওপারে বাংলাদেশ। দুই পারে বহু বাড়ি, মানুষ। বাঁশবাগানের নীচে বসে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। এই এলাকায় কত বিপ্লবীদের যাতায়াত ছিল। খিলাফত অন্দোলনের সময় জাতীয় নেতারা এখানে এসেছিলেন।
আসলে আকরাম খাঁ ছিলেন বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতার অন্যতম অগ্রনেতা এবং বাঙালি মুসলিম সমাজে সাংবাদিকতার জনক। আধুনালুপ্ত দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বাঙালি মুসলিম নেতা। মাওলানা আকরম খাঁ তাঁর ধর্মাচার, লেখালেখি, সাহিত্যচর্চা, সাংবাদিকতা—সব কিছুর বিনিময়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও মুসলিম স্বাধিকারের পক্ষে অবিরাম সংগ্রাম করছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জন্য তিনি জেল খাটেন এবং নিষিদ্ধ হয় তাঁর সম্পাদিত মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকা। তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসের রচয়িতা অদ্বৈত মল্লবর্মণ এই পত্রিকায় কাজ করতেন।
কেন আকরাম খাঁ সাহেবের প্রসঙ্গ আনলাম? টিডিএন বাংলা চালাতে গিয়ে বারবার মনে হয়েছে, ব্রিটিশ আমলে যে মুসলমানরা পত্রপত্রিকায়, সাহিত্যে এতো বড় অবদান রাখলেন, সেই সমাজ স্বাধীনতার পর পিছিয়ে গেল কেন? এখনো কেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলিম পর্যাপ্ত দৈনিক পত্রিকা, টিভি চ্যানেল করতে পারলো না? এতো সংগঠন, এতো শিক্ষিত লোক, এতো টাকাওয়ালা মানুষ থাকতেও মিডিয়ায় পিছিয়ে কেন? তাহলে কি দেশভাগের এতো বছর পরেও মেধা শূন্যতা কাটেনি? নাকি অলসতা ও সমাজের প্রতি দায়িত্বহীনতা? আজ আল আমীন মিশনের নুরুল ইসলাম সাহেবের বক্তব্য শুনে সেই প্রশ্ন আরো বেড়ে গেল।
সকলকে ভাই বোন সম্বোধন করে বক্তব্য শুরু করলেন মিশনের সম্পাদক। বললেন, “প্রত্যেকটা শিশু হিরের টুকরো। কিন্তু সেই হীরের টুকরোগুলিকে ঘষা মাজা করতে হবে।
আজকে সাধারণ ছেলেমেয়ে যাদের সমাজ গুরুত্ব দেয়না, কালকে তারাই অসাধারণ হবে। সমাজ তাদের গুরুত্ব দেবে।”
ইসলাম আমাদের বিনয়ী হতে শেখায়। অথচ বাস্তবে মুসলিম সমাজে বিনয়ী- সজ্জন মানুষ খুব কম দেখা যায়। তিনি দুঃখ করে বললেন, “কৃতজ্ঞা স্বীকার করার বিষয়টি হিন্দু ভাইদের মধ্যে বেশি আছে, মুসলিমদের মধ্যে কম। বিনয়ী ভাব অমুসলিমদের মধ্যে বেশি। এক অমুসলিম ব্যাক্তির সঙ্গে দেখা হল। যিনি সরকারের অলিন্দে থাকেন, বহু গুরুত্বপূর্ন লোকের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে । তিনি কলকাতা থেকে আমাদের মিশনে এসেছিলেন। অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র মানুষ। এতো বড় মাপের লোক ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু অপেক্ষা করেছেন একজন মুসলিম ছেলেকে ভর্তি করার জন্য।”
এক পড়ুয়ার উদাহরণ দিতে গিয়ে স্বপ্ন নীড়ের স্রষ্টা বলেন,”একবার ঈদের সময় সবাই বাড়ি গেছে। কিন্তু এক পড়ুয়া বলেছিল, ঈদ বারবার আসবে, পড়াশোনার সুযোগ হয়তো বারবার পাবো না। এই যে পড়ার প্রতি জেদ, সে ঈদে বাড়ি যায়নি। ওই বছরেই সে মেডিকেল পেয়েছিল।”
তিনি উপস্থিত অভিভাবক অভিভাবিকাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ফেরেস্তার থেকে মানুষের মর্যাদা বেশি এটা আমরা জানি। আবার আমাদের মধ্যে পশুত্ব আছে। সেই পশুত্বকে হারিয়ে মানবতার জন্য কাজ করতে হবে। আমরা পৃথিবীতে সকলেই অসাধারণ হয়ে এসেছি। তবে কে কত ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে সফলতা ব্যর্থতা।”
কিন্তু মুসলিম সমাজ পিছিয়ে গেল কেন? বক্তব্যে সেই প্রশ্নের জবাব দিয়ে এম নূরুল ইসলাম বলেন, “দেশভাগ, সমাজের বিশিষ্টদের ওপারে চলে যাওয়া, অর্থনৈতিক কারণে সমাজ পিছিয়ে। নির্মাণ কর্মীদের বেশিরভাগ মুসলিম। বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করছে, রাস্তা করছে কিন্তু ঠান্ডা ঘরে যারা বাস করছে, রাস্তায় যারা গাড়ি নিয়ে ঘুরছে তাদের বেশিরভাগ অমুসলিম।”
তাঁর মন্তব্য, “নিজেদের উন্নতির জন্য যেভাবে সাধনা করা দরকার, যেভাবে পড়াশোনা করা দরকার সেইভাবে আমরা করিনা, আবার আমরা দোষ দিই অন্যদের। মুসলিম সমাজের এই অবস্থার জন্য আমরাই দায়ী। ভিতর থেকে পরিবর্তন না হলে হবে না।”
তিনি উদাহরণ দিলেন ইহুদিদের- তারা পড়াশোনা, মিডিয়ায়, টেকনোলজিতে কীভাবে এগিয়েছে।
একজন গর্ভবতী মা যা পড়ছে ,যা চিন্তা করছে তার প্রভাব শিশুদের উপর পড়ে। ইসরাইলে গর্ভবতী মহিলাদের বিজ্ঞান, অঙ্ক, ধর্মতত্ত্ব পড়ানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা হয় যাতে সন্তানের উপর ওই বিষয়গুলির প্রভাব পড়ে।
বংশগতি ও পরিবেশ শিশুর বিকাশে ভূমিকা রাখে।
আল আমীন মিশনের সম্পাদক বললেন,”আমাদের অনেকে টাকা পয়সা, ক্ষমতাকে বড় সম্পদ ভাবে। কিন্তু আমরা অনেকে জানিনা আল্লাহর দেওয়া সেরা উপহার সন্তান। সেই সম্পদকে ভালোভাবে বড় করতে হবে।”
কত দুঃখী মা বাবা যে ছেলেমেয়ের সফলতায় আনন্দের কান্না করেছেন সেই কাহিনীও তিনি শোনান। তাঁর বক্তব্য,”আল আমিন কিছুই করেনি। আল আমীন যেটা করেছে সেটা হল, আল্লাহ্ যে হীরের টুকরা পাঠিয়েছেন সেটাকে ঘষে মেজে সমাজের উপযোগী করে তুলেছে।”
নূরুল ইসলাম সাহেব যা বলছিলেন তা যেন আমার মনের কথা। টিডিএন বাংলা করতে গিয়ে কত যে কথা শুনতে হয়েছে তার হিসাব নেই। জেলায় জেলায় বিনামূল্যে ওয়াকর্শপ করে এক গুচ্ছ সাংবাদিক তৈরি করতে গিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনরাত ছুটে বেড়িয়েছি। অনেকেই কাজ শিখেছেন, টিডিএন বাংলার অনুপ্রেরণায় নতুন পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন, কেউ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন, কেউ বা করেন না, তাতে কিছু যায় আসেনা। মিডিয়া গড়ে সমাজের কল্যাণ হলেই আমি খুশি, যিনি যেভাবে পারবেন- করুন।
আসলে কিছু লোক নিজেও মিডিয়া করবে না আবার অন্যজন করলে তার পাশেও থাকবে না, বরং সমালোচনা করবে। অথচ মিডিয়া নিয়ে মাঝে মাঝে এরা এমন সব ভাষণ দেয় যেন মনে হবে এরাই আসল মিডিয়া প্রেমী। এরাই মুসলিম সমাজের আসল নেতা! অথচ ইন্ডিভিজুয়াল কন্ট্রিবিউশন বা সমষ্টিগত ভাবে এদের অনেকের অবদান শুধু নেগেটিভ।
নূরুল ইসলাম তাই দুঃখ করে বললেন,”অনেক যন্ত্রণা, অনেক ধৈর্য্য,অনেক সহ্য ও সাধনার ফসল আল আমীন মিশন।” তাঁর আরো মন্তব্য,”আল্লাহ্ যে উদ্দেশ্যে আমাদের পাঠিয়েছেন সেটা আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। আমরা যদি সারাক্ষণ অন্যের কথা নিয়ে মেতে থাকি, অমুক এই করছে, তমুক এই করছে বলে সমালোচনা করে সময় নষ্ট করি, আজেবাজে চিন্তায় মেতে থাকি, তাহলে আল্লাহ্ আমাদের যে খলিফা করে পাঠিয়েছেন সেটা বুঝতে পারবো না। সারাক্ষণ যে চিন্তা করছি তাতে মানুষের কল্যাণ নিয়ে চিন্তা কতটা আছে, সেটা ভাবতে হবে। আমরা আজেবাজে চিন্তা নিয়ে থাকি বলে বড় জায়গায় যেতে পারছি না।”
বক্তব্যে এম নূরুল ইসলাম বলেন, একটা ডাক্তার তৈরি করতে সরকারের এক কোটি টাকা খরচ হয়। ৩০ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা। আর প্রায় ৩৫ শতাংশ মুসলিম ছেলেমেয়ে মেধার জোরে ডাক্তারিতে জায়গা পাচ্ছে। এতে কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার, কেউ কিন্তু বাধা দিচ্ছে না। এই ছেলেমেয়েদের বেশিরভাগ আল আমীনের।
পশ্চিমবঙ্গের স্যার সৈয়দ আহমদ খান বলেন,”আমরা মাছের তেলে মাছ ভাজি। যাদের টাকা আছে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাদের টাকা কম আছে তাদের দিতে হবে। যাকাতের টাকায় গরীবের পাশে দাঁড়াই। আল আমীন মিশন নিয়ে তখন সমালোচনা ছিল, এখনো আছে। আমরা সব সমালোচনা ধৈর্য ধরে চুপ করে শুনি আর নিজেদের কাজ করি।”
আমরা বসে। যিনি স্বপ্ন পূরণের জন্য নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনি টানা দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। ৬৫ বছর বয়সেও একবার বসলেন না! মনে পড়লো হাইকোর্টে ২০১৬ সালে তাঁর সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কাহিনী। ওই সময় ছয়টা দিন তিনি প্রায় ঘুমাননি বললে চলে।
ওহ! তিনি বসবেন কেন? তিনি বসে থাকলে কি ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আল আমীন মিশন রাজ্যের ১৭ টি জেলা জুড়ে ৭৬ টি শাখা ছড়িয়ে দিতে পারতো? আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে বিস্তার লাভ করতো? তিনি যদি বসে থাকতেন তাহলে ১৯৭৬ সালে দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় খলতপুর জুনিয়র হাই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতেন কে? তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন বলেই ১৯৮৪ সালের মে মাসে ইন্সটিটিউট অফ ইসলামিক কালচার শুরু করেন। রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের বক্তব্য শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা তাঁর মনে এসেছিল। ১৯৮৬ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুষ্টির চাল নিয়ে হাই মাদ্রাসা ভবনেই আবাসিক ছাত্রাবাস শুরু করেন। ১৯৮৭ -র জানুয়ারী মাসে ইন্সটিটিউট অফ ইসলামিক কালচারের নাম বদলে হয় আল-আমীন মিশন। এখন সে বিশাল বহিরুহু বটবৃক্ষ যার প্রতিটি শাখা প্রশাখায় আগামীর খলিফা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ঐতিহাসিক, কবি, সাংবাদিক, দার্শনিক, রাজনীতিক উঁকি মারছে।