আজ বিশ্ব নারী দিবসে নারীর অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠার আলোচনায় পশ্চিমা নারীবাদীদের নাম উচ্চারিত হয়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় যে মহামানব নারীকে সর্বপ্রথম মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তার স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, তিনি হলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। সপ্তম শতাব্দীর আরবের নৃশংস সমাজে নারীর অবস্থান ছিল মরুভূমির বালির মতোই অনিশ্চিত। কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো, নারীর সম্পত্তি ও বিবাহের অধিকার ছিল না, শিক্ষা ও সম্মান ছিল স্বপ্নের মতো। এমন প্রেক্ষাপটে রাসূল (সা.)-এর বিপ্লবী সংস্কার নারী জাতিকে দিয়েছে নতুন প্রাণ।
১. কন্যা শিশু হত্যা বন্ধ ও নারী জীবনের মূল্যায়ন
প্রথমেই তিনি কন্যা শিশু হত্যার নিষ্ঠুর প্রথা নির্মূল করেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, “যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যা শিশুকে জিজ্ঞাসা করা হবে—কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?” (সূরা তাকভির: ৮-৯)। তিনি কন্যাদের লালন-পালনকে জান্নাতের পথ বলা সহ অসংখ্য হাদিসে উৎসাহিত করেছেন।
হাদিস: এক সাহাবি কন্যাদের প্রতি সদয় আচরণের পুরস্কার জানতে চাইলে রাসূল (সা.) বললেন, “যে দু’টি কন্যার দায়িত্ব নেবে, তারা তাকে জাহান্নাম থেকে আড়াল করবে” (বুখারি: ৫৯৯৫)।
ব্যক্তিগত উদাহরণ: তিনি নিজে কন্যা ফাতিমা (রা.)-কে অত্যন্ত স্নেহ করতেন, তার জন্য দাঁড়িয়ে সম্মান দেখাতেন।
২. নারীর অর্থনৈতিক অধিকার
উত্তরাধিকার: ইসলাম পূর্ব যুগে নারী সম্পত্তি পেত না। রাসূল (সা.) নারীকে পিতা, স্বামী ও সন্তানের সম্পত্তিতে আইনগত অংশীদার করে দেন (সূরা নিসা: ৭-১২)।
মোহরানা: বিবাহে নারীর সম্মতির পাশাপাশি মোহরানা বাধ্যতামূলক করেন, যা একান্তই নারীর অধিকার (সূরা নিসা: ৪)।
৩. শিক্ষা ও সামাজিক মর্যাদা
রাসূল (সা.) নারী-পুরুষ সবার জন্য জ্ঞানার্জন ফরজ ঘোষণা করেন। তাঁর স্ত্রী আয়েশা (রা.) ছিলেন বিশিষ্ট বিদুষী, যার মাধ্যমে হাজারো হাদিস সংরক্ষিত হয়েছে। নারীদের জন্য পৃথিবীর প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।
৪. বিবাহ ও তালাকের অধিকার
স্বাধীন পছন্দ: জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ করে নারীর সম্মতিকে আবশ্যিক করেন।
খুলা ও তালাকের অধিকার: অত্যাচারী স্বামীর বিরুদ্ধে নারীর বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন।
৫. মাতৃত্বের মর্যাদা
তিনি মাকে সম্মানের শীর্ষে রাখেন। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) তিনবার “মা” বলার পর একবার “বাবা” বলেন, মাতৃত্বের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় (বুখারি: ৫৯৭১)।
৬. আইনগত সমতা
দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনে নারী-পুরুষকে সমান বিবেচনা করা হয়েছে। নারীর সাক্ষ্যকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যদিও পরবর্তী যুগের বিকৃতিতে এ বিষয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
৭. সম্মানজনক পোশাক ও সমাজে ভূমিকা
লজ্জা ও সম্মান রক্ষার্থে পর্দার বিধান দিয়ে নারীকে অশালীনতা থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করেন। এ পোশাক-বিধি নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রতীক।
পরিশেষে বলা যায়, আজ যখন নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়, তখন ১৪০০ বছর আগের মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষাই সবচেয়ে যুগান্তকারী। তিনি নারীকে সম্পদ, শিক্ষা ও সম্মানের অধিকারী করে মানবতার মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। বিশ্ব নারী দিবসে তাঁর আদর্শ অনুসরণই হতে পারে নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের মূলমন্ত্র।