টিডিএন বাংলা ডেস্ক: বেসরকারি হাসপাতালগুলি যাতে রোগী ও তাদের পরিবারকে চিকিৎসার নামে শোষণ করতে না পারে তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা তৈরি করা উচিত বলে জানিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার, বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং এন কে সিংয়ের একটি বেঞ্চে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত্র মামলার শুনানির সময়েই কেন্দ্র সরকারকে গাইডলাইন তৈরি করতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এদিন আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “রাজ্য সরকারগুলি সাশ্রয়ী মূল্যের চিকিৎসা সেবা এবং পরিকাঠামো প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। যা বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে উৎসাহিত করছে। এটা বন্ধ করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত নির্দেশিকা তৈরি করা।”
সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদনে বেসরকারি হাসপাতালে, রোগী এবং তাদের পরিবারকে হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে দামি ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। সঙ্গে এই ধরনের হাসপাতালগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে এটি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া উচিত বলেও আবেদনে দাবি করা হয়।
নাগরিকদের সুলভ এবং সাশ্রয়ী চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া রাজ্যের দায়িত্ব। কিন্তু অধিকাংশ রাজ্য সেই দায়িত্ব পালন করছে না বলেই মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার একটি জনস্বার্থ মামলায় এই মন্তব্য করার পাশাপাশি কোর্ট এটাও বলেছে যে, বেসরকারি হাসপাতালগুলি নিজেদের ফার্মেসি থেকে রোগীদের নামী ব্র্যান্ডের দামি ওষুধ কিনতে বাধ্য করতে পারে না।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, কয়েকটি রাজ্যের সরকার (যদিও আলাদা করে কোনও রাজ্যের নামোল্লেখ করেনি আদালত) প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে ব্যর্থ। তার ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলির প্রসার ও আধিপত্য বেড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, যে সব রাজ্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে, তারা অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুক। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, বেসরকারি হাসপাতালগুলি তাদের ফার্মেসি থেকে রোগীদের জন্য ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী কিনতে বাধ্য করতে পারবে না। কারণ ওই একই ওষুধ বা চিকিৎসা সরঞ্জাম বাইরের অন্য দোকানে কম দামে পাওয়া যায়। এই বিষয়টিও রাজ্যগুলিকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এর আগে এই মামলারই একটি শুনানিতে আদালত বিভিন্ন রাজ্যকে নোটিস পাঠিয়েছিল। ওডিশা, অরুণাচল প্রদেশ, ছত্তিসগঢ়, বিহার, তামিলনাড়ু, হিমাচলপ্রদেশ, রাজস্থান-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্য তাদের লিখিত জবাব জমা দেয়। সব রাজ্যই জানিয়েছিল, ওষুধের দামের বিষয়টি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অত্যাবশ্যক ওষুধের দাম যাতে সাধারণ মানুষের নাগালে থাকে, তা নিশ্চিত করতে কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল ওই রাজ্যগুলিও।
বাংলায় সব সরকারি হাসপাতালেই ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান রয়েছে। সেখানে খুব সস্তায় ওষুধ পাওয়া যায়। আরও কয়েকটি রাজ্যের দাবি, তারা সরকারি হাসপাতালগুলিতে ওষুধের জন্য ‘ফেয়ার প্রাইস শপ’ তৈরি করেছে। এ প্রসঙ্গে আদালতের মন্তব্য, ‘আমরা উল্লেখ করতে চাই যে, অধিকাংশ রাজ্যই তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্য-সুবিধা কর্মসূচি চালু করেছে। তার পরেও বহু রোগী চিকিৎসা সামগ্রী এবং ওষুধ কম দামে পাচ্ছেন না।’ কেন্দ্র আদালতে জানিয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনা রোগীদের জন্য কখনওই বাধ্যতামূলক নয়। এ রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তা জানান, ‘বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের ওষুধ কিনতে জোর করা যায় না। তেমন কোনও নিয়মও নেই। এখানে স্বাস্থ্য কমিশন রয়েছে। এই ধরনের ঘটনায় যে কেউ কমিশনে অভিযোগ করতে পারেন।’
বেসরকারি হাসপাতালগুলির রোগীকে শোষণ চলবে না, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
