মুম্বইয়ে নির্মীয়মাণ বহুতলে জলট্যাংকে নেমে মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু

মুম্বইয়ের নাগাপাড়া এলাকায় নির্মীয়মাণ একটি ৪০-তলা বহুতলে জলের ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে চার পরিযায়ী শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, ট্যাংকটি প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ ছিল। শ্রমিকরা যখন কাজ শুরু করেন, তখন কোনও সুরক্ষার ব্যবস্থা ছিল না।

মৃতদের সকলের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায়। তাঁদের নাম হাসিবুল সেখ (১৯), জিয়াউল সেখ (৩৬), ইমানদার সেখ (৩৮) এবং রাজা সেখ (২০)।

হাসিবুল সেখ ও জিয়াউল সেখ মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের বাসিন্দা। হাসিবুলের বাবা সারফুল সেখ নিজেও একজন পরিযায়ী শ্রমিক এবং দীর্ঘদিন ধরে মুম্বইয়ে কাজ করেন। হাসিবুল প্রায় চার মাস আগে রোজগারের সন্ধানে মুম্বই গিয়েছিলেন। তাঁর বাড়িতে রয়েছেন মা, এক ভাই ও দুই বোন।

জিয়াউল সেখ নবগ্রামের সর্বনগর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি প্রায় ৯ মাস ধরে মুম্বইয়ে কাঠের কাজ করছিলেন। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, চার ভাই, দুই বোন এবং দুই কন্যাসন্তান— মুসকান (৮) ও জিনিয়া (১০)।

জানা গেছে, প্রথমে কাঠের কাজ করা হাসিবুল ও জিয়াউল ট্যাংকে নামেন, তারপর প্লাস্টারের শ্রমিক ইমানদার ও রাজা নেমেছিলেন। বিষাক্ত গ্যাসে দম বন্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়।

ঘটনার সময় ভুটান শেখ (৩১) নামে আরও এক শ্রমিক ট্যাংকে নামার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু গ্যাসের কারণে অবশ হয়ে চিৎকার করেন এবং দ্রুত তাঁকে উপরে টেনে তোলা হয়। তিনি বলেন, “আমি নীচে যেতেই গ্যাসের কারণে শরীর অবশ হয়ে যায়। আমি ভয়ে চিৎকার করে সাহায্য চাই। উপরে উঠতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে।”

এই দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চারজনের দেহ কলকাতায় আনা হচ্ছে এবং সেখান থেকে তাঁদের গ্রামে পাঠানো হবে। মৃতদের পরিবারের আহাজারিতে গোটা গ্রাম শোকে স্তব্ধ।

পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং দায়ের হয়েছে এফআইআর। তবে নির্মাণস্থলে কেন সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Exit mobile version