টিডিএন বাংলা ডেস্ক: পূর্ব ঘোষণা মতো বৃহস্পতিবার লোকসভায় নতুন আয়কর আইনের বিল পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আয়কর আইন ২০২৫ -এর বিলটি আইনে পরিণত হলে ১৯৬১ সালের চালু আইনটি বাতিল হয়ে যাবে।
বিরোধীরা অবশ্য বিল পেশের খানিক পরেই দলবদ্ধভাবে সভা বয়কট করে। নির্মলা দাবি করেন, আয়কর আইন এবং করদাতাদের ব্যবহৃত শব্দগুলির অর্থ সরলীকরণের পাশাপাশি সময়োপযোগী করা হয়েছে।
বিরোধীদের প্রতিবাদের মুখে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন, বিলটি সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে। কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর ফের বিলটি সংসদে পেশ করা হবে।
বিরোধীরা ওয়াকআউটের আগে অভিযোগ করে, সরলীকরণের পরিবর্তে আয়কর আইন আরও জটিল করছে সরকার। কেরলের আরএসপি সাংসদ এনকে প্রেমচন্দ্রন বলেন, ১৯৬১ সালের তুলনায় নতুন আইনে অনেক বেশি সেকশন যুক্ত করা হয়েছে। এতে নাগরিকদের সমস্যা বাড়বে।
জবাবে সীতারামন বলেন, ২০২৫ আর ১৯৬১ এক নয়। বিগত বছরগুলিতে আয়কর সংক্রান্ত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সেগুলিকে যুক্ত করা হলে ৮১৯টি ধারা থাকত আইনে। সেখানে ধারা আছে ৫৩৬টি। নির্মলা আরও দাবি করেন, আইনের ভাষা অনেকটাই বদলে ফেলা হয়েছে।
তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় মন্তব্য করেন, অর্থমন্ত্রী যে পরিবর্তনের কথা বলছেন তা নিছকই যান্ত্রিক বদল। নির্মলা দাবি করেন, মোটেও তা নয়। নয়া আইনে দৃশ্যমান, কার্যকর পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নতুন আয়কর বিলের বৈশিষ্ট্য:
-নতুন আয়কর বিলের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি আয়কর সম্পর্কিত বিধানগুলির ব্যাখ্যা সহজ করেছে, যাতে আইনি বিরোধ এবং মামলার ক্রমবর্ধমান সংখ্যা হ্রাস করা যায়। নতুন আয়কর বিলটি মাত্র ৬২২ পৃষ্ঠায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেখানে বর্তমান আয়কর আইনে ৮৮০ পৃষ্ঠা রয়েছে। কেন্দ্র সরকারের লক্ষ্য হল কর ব্যবস্থা সরলীকরণ এবং ডিজিটালাইজেশন করা, যাতে সাধারণ মানুষের কাছে দেশের কর ব্যবস্থা সহজবোধ্য হয়।
নয়া আয়কর বিলে নতুন কী আছে?
-নয়া আয়কর বিলে মূল্যায়ন বছরের পরিবর্তে “কর বছর” বা TAX Year ব্যবহার করা হয়েছে।
- নতুন আয়কর বিলে, এনপিএস এবং ইপিএফ-এর উপর কর ছাড়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে। অবসর তহবিল এবং মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের উপর আপনি কর ছাড়ের সুবিধা পাবেন। বিমা প্রকল্পগুলিতে আরও কর সুবিধা পাওয়া যাবে।
- যদি কেউ কর বাঁচানোর জন্য ভুল তথ্য দেয়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হতে পারে। যদি আয় গোপন করা হয়, তাহলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত পর্যন্ত হতে পারে।
- যারা কর প্রদান করেন না, তাদের উপর জরিমানা বা চড়া সুদ আরোপ করা হতে পারে।
- রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচনী ট্রাস্টের আয় করমুক্ত করা হয়েছে। কিছু শর্তে কৃষি আয় করমুক্ত রাখা হয়েছে ৷
- ধর্মীয় ট্রাস্ট এবং সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানে দান করা অর্থের উপর কর ছাড় দেওয়া হবে।
- এর সঙ্গে, স্টার্টআপ, এসএমই এবং বিশেষ ব্যবসাগুলিকেও কর ছাড় দেওয়া হয়েছে।
- ভাড়া বাবদ আয়ের উপর টিডিএসের সীমা বার্ষিক ২.৪ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ লক্ষ টাকা করা হয়েছে।
- যে কোনও সম্পত্তি বা সম্পদ থেকে অর্জিত মুনাফার উপর মূলধন লাভ করের জন্য নতুন নিয়ম তৈরি করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদেরও একাংশের মতে, এখন যে আয়কর আইন আছে, তাতে যে সব ভাষা আছে, তার থেকে অনেক সহজ-সরল ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে নয়া আয়কর বিলে। আর সেই নয়া আয়কর বিলের মূল বিষয়গুলি কী কী? তা দেখে নিন।
‘অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার’ উঠে যাচ্ছে, আসছে ‘ট্যাক্স ইয়ার’
১) নয়া আয়কর বিলে ভাষা সহজ করা হয়েছে। ‘অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার’, ‘প্রিভিয়াস ইয়ার’-র মতো টেকনিকাল শব্দের পরিবর্তে সহজ ‘ট্যাক্স ইয়ার’ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিনিয়োগ ও কর বিশেষজ্ঞ বলবন্ত জৈনের মতে, এখন যে আয়কর আইন আছে, তার থেকে নয়া আয়কর বিলে সহজ ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে করদাতাদের সুবিধা আছে। এখন যে ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে, তা বুঝতে কখনও কখনও অসুবিধা হয়। আর বিভিন্নরকম ব্যাখ্যা করা যায়।
২) ১৯৬১ সালের আয়কর আইনে ২৯৮টি ধারা, ৫২টি অধ্যায় এবং ১৪টি তফসিল আছে। পৃষ্ঠার সংখ্যা হল ১,৬৪৭। সেখানে নয়া আয়কর বিলে ৫৩৬টি ধারা, ২৩টি অধ্যায় এবং ১৬টি তফসিল থাকলেও মাত্র ৬২২টি পৃষ্ঠা আছে। জৈনের মতে, নয়া আয়কর বিলে ধারার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মনে হচ্ছে যে জটিল বিষয়কে ছোট-ছোট ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। আর অধ্যায়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় অনুমান করা হচ্ছে যে অনাবশ্যক বিষয়গুলিকে ছেঁটে দিয়েছে কেন্দ্র। এক কথায় এই বিল নিয়ে নানা মুণির নানা মত।