মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের মতো বিভিন্ন সমস্যার কারণে ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণি সংকটে রয়েছে। সংকটের কারণ মুদ্রাস্ফীতির কারণে দৈনন্দিন ব্যয় বাড়ছে, মজুরি স্থবির থাকায় আয় বাড়ছে না, দ্বৈত কর ব্যবস্থা এবং জিএসটি-র বর্তমান কাঠামোর কারণে মধ্যবিত্তদের চাপ বাড়ছে, বেকারত্ব বেড়েছে, সঞ্চয় হ্রাস পাচ্ছে।সংকটের প্রভাব
• মধ্যবিত্তদের দৈনন্দিন ব্যয় বাড়ায় তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে
• সামগ্রিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে
• ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৩০-৪০% মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে অবস্থান করছে
• মধ্যবিত্ত শ্রেণি একসময় দেশের অর্থনৈতিক উত্থানের মেরুদণ্ড ছিল
• মধ্যবিত্ত শ্রেণি একটি দ্রুত বর্ধনশীল সামাজিক জনসংখ্যা
ভারত কতটা উন্নয়নশীল দেশ, সেকথা আলাদা করে না বলাই ভালো। ১.৪ বিলিয়ন অর্থাৎ ১৪০ কোটি মানুষ বাস করে ভারতে। কিন্তু অবাক করার বিষয় এর মধ্যে ১০০ কোটি ভারতীয়র কাছে সাধারণ খরচ করার মতো টাকাও নেই। প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া বাকি অতিরিক্ত কোনও অর্থ সঞ্চয়ই থাকে না এই বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে। এমনটাই জানিয়েছে ব্লুম ভেঞ্চার্সের এই নয়া প্রতিবেদন। এরাই তো মধ্য়বিত্ত। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভারতে মাত্র ১৩-১৪ কোটি মানুষই প্রয়োজনের থেকে বেশি কিছু খরচ করেন। এই সংখ্যাটি উত্তরপ্রদেশের মোট জনসংখ্যার থেকেও অনেক কম। এছাড়াও আরও ৩০ কোটি মানুষ আছেন যাঁরা ধীরে ধীরে খরচ করা শিখছেন, কিন্তু তাঁদের কাছে এখনও সামর্থ্য অনুসারে টাকার যোগান নেই। ডিজিটাল পেমেন্ট ভারতীয়দের জন্য কেনাকাটা সহজ করে দিয়েছে কিন্তু এইভাবে টাকা খরচ করা নিয়ে এখনওবহু মানুষের মনে দ্বিধা রয়েছে।‘এই প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, দেশে যত দ্রুত হারে ধনী মানুষের সম্পদের মাত্রা বাড়ছে, তার তুলনায় নতুন ধনী ব্যক্তির সংখ্যা অনেক কম রয়েছে। অর্থাৎ আগে থেকে যারা ধনী আছেন, তাঁদের সম্পদ উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। কিন্তু নতুন ধনীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে না। আর এই ঘটনার সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাজারে।নেসলে ইন্ডিয়া সম্প্রতি তাদের প্রথম ত্রৈমাসিক রাজস্ব হ্রাসের মুখোমুখি হয়েছে, যা কোভিড পরবর্তী সময়ে প্রথমবারের মতো ঘটলো।ভারতের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই মধ্যবিত্ত বলে ধারণা করা হয়। এই শ্রেণি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনি ফলাফলের কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির হতাশা বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করা হয়।উদাহরণস্বরূপ বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বাড়ছে, সাশ্রয়ী কম দামের বাড়ির পরিমাণ বিগত ৫ বছরে ৪০ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ১৮ শতাংশে। দামি স্মার্টফোন দ্রুত হারে বিক্রি হলেও সস্তা মডেলের ফোন বিক্রি কমেছে।ক্রেতা কমেছে অনেক। কোল্ডপ্লে এবং এড শিরানের মতো আন্তর্জাতিক মানের ব্যয়বহুল কনসার্টের টিকিট চোখের পলকে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিনোদনের জন্য মানুষ অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড মহামারীর পরেভারতের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারঅনেকটা ইংরেজি ‘কে’ অক্ষরের মতো হয়েছে। এক্ষেত্রে ধনীরা অনেক বেশি ধনী হয়েছে এবং গরিবরা দিনে দিনে আরও দরিদ্র হয়েছে। ১৯৯০ সালে দেশের শীর্ষস্থানীয় ১০ শতাংশ মানুষ মোট দেশের আয়ের ৩৪ শতাংশের মালিক ছিলেন আর আজ সেই ১০ শতাংশ মানুষই দেশের মোট আয়ের ৫৭.৭ শতাংশের মালিক। দেশের সবথেকে দরিদ্র ৫০ শতাংশ মানুষের আয় ২২.২ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১৫ শতাংশ। দরিদ্রদের জন্য অনেক জিনিসই ক্রমেই কঠিন এবং দুর্লভ হতে চলেছে।মার্সেইলাস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজারদের তথ্য অনুযায়ী ভারতের মধ্যবিত্তরাও সমস্যায় পড়ছে। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে তাদের বেতনের সমানুপাতিক বৃদ্ধি হয়নি। গত ১০ বছরে কর প্রদানকারী মধ্যবিত্তের আয় কার্যত একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। এমনকী বহু মানুষের বেতন মুদ্রাস্ফীতির কারণে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। মধ্যবিত্তের সঞ্চয় গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে এসে দাঁড়িয়েছে।