আজ রাজ্য বাজেট ঘোষিত হল। বাজেটে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিয়ারনেস অ্যালোওয়েন্স বা ডিএ) বাড়ানো হল। সেইসঙ্গে হ্যাটট্রিক করল রাজ্য সরকার। কারণ ২০২৩ সাল এবং ২০২৪ সালের বাজেটেও ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই ধারা অব্যাহত থাকল ২০২৫ সালেও।
ষষ্ঠ বেতন কমিশনের আওতায় পঞ্চম দফায় ডিএ বাড়ল এবার। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পশ্চিমবঙ্গে ষষ্ঠ বেতন কমিশন কার্যকর হয়েছে। তারপর থেকে মোট চারটি দফায় (আজকের বাজেটের আগে পর্যন্ত) পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বাড়ানো হয়েছে। আর এবারের বাজেটে পঞ্চম দফায় ডিএ বাড়ানো হবে বলে আশায় ছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। সেই আশাপূরণ হল। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী।
ষষ্ঠ বেতন কমিশনের শুরুতে ডিএ ‘শূন্য’ ছিল
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের। ২০২০ সালে তখন রাজ্য সরকারের তরফে আলাদা করে কোনও মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা করা হয়নি। অর্থাৎ সেইসময় মহার্ঘ ভাতা শূন্য ছিল। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম দফায় তিন শতাংশ ডিএ কার্যকর হয়েছিল।
এই ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলেন, ৪ শতাংশ ডিএ বাড়িয়ে খুশি করা যাবে না।
এদিকে বাজেট পেশের সময় ওয়াক আউট করে বিজেপি, নেতৃত্বে শুভেন্দু অধিকারী, দাবি চাকরির। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন তাঁদের ভিশন মূলত কর্মসংস্থান।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃতীয় তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট আজ পেশ হল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বাজেট পেশ করলেন অর্থপ্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই বাজেটে নজর দেওয়া হয়েছে রাজ্যের উন্নয়নমূলক এবং জনমুখী প্রকল্পের দিকে। রাজস্ব ঘাটতি মেটানোও অন্যতম লক্ষ্য রাজ্য সরকারের। সেটা এই বাজেটে বোঝা গেল। চন্দ্রিমার বাজেট পেশের শুরুতেই বিধানসভায় ‘চাকরি চাই’, ‘চাকরি চাই’ স্লোগান দিতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। স্লোগান দেন আরজি কর নিয়েও। পালটা আওয়াজ ‘জয় বাংলা’। আর তার মধ্যেই পথশ্রী প্রকল্পে বরাদ্দ আরও দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
বাজেট পেশের ঠিক আগে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী–বিধায়করা। এমনকী আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিও ছিলেন সেখানে। তবে এবারও বিজেপির কোনও বিধায়ক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। মুখ্যমন্ত্রী উষ্মাপ্রকাশ করে বলেন, ‘এই ধরনের বৈঠকে বিরোধীদের হাজির থাকা উচিত।’ পাল্টা বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘বিরোধীদের না অংশ নেওয়ার কারণ সরকার।’ পথশ্রী প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ার অর্থ আরও রাস্তা তৈরি হবে এবং কাজ পাবেন জবকার্ড হোল্ডাররা।
কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে। সেই বকেয়া টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। আবাসের টাকা বাকি। যেটাও দিয়েছে রাজ্য সরকার। আর জবকার্ড হোল্ডাররা যাতে কাজ পান তাই কর্মশ্রী প্রকল্প গড়ে উঠেছে। তবে পথশ্রী প্রকল্পেও কাজ করতে পারবেন তাঁরা। একের পর এক ঘোষণা চলছে রাজ্য বাজেটে। রাজ্য সরকারের মাথার উপর ৭ লক্ষ কোটি টাকার দেনা রয়েছে। তার উপর চড়া সুদের জেরে প্রত্যেক আর্থিক বর্ষে বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ হয়। তারপরও আমজনতার উপর চাপ বাড়াতে রাজি নয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি পেল চার শতাংশ। বাজেট পেশের সময়ে ঘোষণা করলেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে নতুন ডিএ। এর ফলে মোট ১৮ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা বাজেটে আশাকর্মীদের স্মার্টফোন দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন চন্দ্রিমা। ৭০ হাজার আশাকর্মীকে স্মার্টফোন দেওয়া হবে। নারী ও শিশু কল্যাণে বরাদ্দ বৃদ্ধি করছে রাজ্য সরকার। বাজেটে সে কথা ঘোষণা করলেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পথশ্রী প্রকল্পে বরাদ্দ আরও দেড় হাজার কোটি টাকা। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। দু বছরের মধ্যে কার্যকর হবে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’। মোট কথা এই বাজেটে মাস্টার স্ট্রোক দিলেন চন্দ্রিমা।
উল্লেখযোগ্য হল, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজ্যের রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে ৪৩২৬১.৬৭ কোটি টাকা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজ্যের রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে ৪৩২৬১.৬৭ কোটি টাকা হয়েছে।
শিল্প এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে রাজ্যে ২ কোটি চাকরি তৈরি হয়েছে বলে জানান চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি আরও দাবি করেন, রাজ্যে বেকারত্বের হার কমেছে ৪০ শতাংশ। গঙ্গাসাগর সেতু চার লেন করার জন্য বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৭৫ কিলোমিটার। ২৬-এর ভোটের আগে কার্যত বাজেটে মাস্টারস্ট্রোক।
এদিকে বাজেট ঘোষণার পর সিপিআইএম সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম বলেন,বেকারদের কাজ দেওয়ার ব্যাপারে কোনও ভাবনাচিন্তাই নেই। কত কর্মসংস্থান হলো। কতো কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা আছে, তার বিন্দু বিসর্গ জানা নেই। এমনকি আবাস যোজনা নিয়ে এত হইচই হচ্ছে। ওরা বললেন কেন্দ্র টাকা দেবে না রাজ্য বাজেট থেকে হবে। এখন বলছেন অর্ধেক টাকা বাজারে ছেড়ে দিয়েছি। তাতে দুর্নীতি বেড়েছে। মানুষের ঘর তো শেষ হচ্ছে না। অসম্পূর্ণ ঘর পড়ে আছে। কিস্তি অসম্পূর্ণ। যাদের ঘর পাওয়ার কথা, গৃহহীন মানুষ ঝুপড়ি করে আছেন, ত্রিপল-চট লাগিয়ে আছেন। এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। রাজ্যের আবাস যোজনা কেন ব্যর্থ হলো তা নিয়ে কোনও কথা মুখ্যমন্ত্রীর নেই। কেবল টাকার অঙ্ক দিয়ে বোঝাবেন?