‘ব্রিটিশরাও ওয়াকফ সম্পদে হাত দেওয়ার সাহস পায়নি’ বলে মন্তব্য করলেন ফুরফুরার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। শুক্রবার ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে আয়োজিত কর্মী সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। এই বিলের বিরুদ্ধে কর্মীদের অন্দোলনে নামার ডাক দেন আব্বাস সিদ্দিকী।
এদিকে আগামী ১৪ এপ্রিল কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে নওশাদ সিদ্দিকীর আইএসএফ। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দলটি জানিয়েছে,’সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংসদের দুই কক্ষেই ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে তারা যুক্তিতে হেরে গেছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে,’এই বিল সংবিধানকে দূর্বল করতে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষত মুসলমানদের অপবাদ করতে, দেশের সমাজ ব্যবস্থাকে লণ্ডভণ্ড করতে ও মুসলমানদের অধিকার হরণ করতে আনা হয়েছে। ধর্মাচরণের স্বাধীনতা, সমতা, ন্যায়বিচারের অধিকার যেগুলি সংবিধানের ১৪, ২৫, ২৬ ও ২৯ ধারার মধ্যে খোদিত, সেগুলিকেই সরাসরি লঙ্ঘন করছে। এইভাবেই ধীরে, ধীরে মাদ্রাসা, মসজিদ, মক্তব, খানকাহ্, দরগাগুলিকেও দখল করে নেবে সরকার। এটার উদ্দেশ্য হল, এই বিপুল পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তগত করে পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার তোড়জোড়।’
ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের মতে ‘সংসদের উভয় কক্ষে দিনভর হাস্যকর যুক্তি উপস্থাপন করে গেছে বিজেপি সদস্যরা। বলছে, মুসলমান সমাজের কল্যাণের জন্যই এই বিল সংশোধনী আনা হয়েছে। ‘মুসলমান সমাজের উন্নয়ন ও বিজেপি’ কথাটাই তো কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতন। দেশজুড়ে ইতিউতি গণপিটুনিতে মুসলমানদের মারা হচ্ছে, এটাই কি কল্যাণ? দিন চারেক আগে উত্তর প্রদেশের ডবল ইঞ্জিন সরকার কিছুক্ষণের জন্য রাস্তায় নামাজ পড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল। নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলের ভয় দেখালো; এটাই কল্যাণ? এতদিন আইন ছিল, ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে কেউ দুর্নীতি করলে তার দুই বছর জেল হবে। নতুন আইনে সেটা ছয় মাস করা হয়েছে। এটা কিসের কল্যাণ?ওয়াকফ বোর্ড রাজস্ব বাবদ বছরে ৭ শতাংশ নিতে পারতো এতদিন। এখন নতুন আইনে ৫ শতাংশ নিতে পারবে, অর্থাৎ রাজস্বের ভাগ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা কিসের কল্যাণ? সর্বোপরি, লিমিটেশন আইন কোন ধর্মীয় সম্পত্তি আইনে প্রযোজ্য ছিল না। সেটা এখন সংশোধিত আইনে প্রযোজ্য হবে। ফলে ওয়াকফ সম্পত্তির দখল নিয়ে মোতাওয়াল্লি বা ওয়াকফ বোর্ডের সাথে সাধারণ মানুষের ঝামেলা প্রতিনিয়ত লেগে থাকবে। সুতরাং বিজেপি সরকারের এই আশ্বাসের কোন দামই নাই।’
আইএসএফ বিবৃতিতে তৃণমুল কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দলটির প্রশ্ন,’আমরা দেখেছি যে নামকাওয়াস্তে একটা যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বিরোধীদের একটি সুপারিশও গ্রাহ্য করা হয়নি। আমরা এটাও দেখেছি এই জেপিসি’র সভায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোতল ভেঙে নাটকবাজী। কিন্তু সংসদে আলোচনার সময় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদদের ঝাঁঝ কোথায় উধাও হয়ে গেল? দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দোপাধ্যায় কয়েকদিন আগে রেড রোডে ঈদের জমায়েতে লম্বা চওড়া ভাষণ দিলেন। কিন্তু সংসদে চুপচাপ বসে থাকলেন। ঐ দলের অন্য সাংসদদেরও সাড়া শব্দ নেই? কার নির্দেশে তাঁরা চুপ?’
দলটি বলছে,”কিন্ত আইএসএফ চুপ করে বসে থাকবে না। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে এই বিলের বিরোধিতা করে যাব। এই আইনকে প্রত্যাহার করাতে রাস্তায় নামতে হবে। এটা বুঝে নেওয়া জরুরি যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংখ্যালঘু মুসলমানদের আজ অধিকার কেড়ে নিচ্ছে বিজেপি সরকার। কিন্ত দেশের অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সামনে এটা একটা অশনিসংকেতও বটে।আগামীকাল নিশ্চিতভাবেই চার্চ-গীর্জা, গুরূদোয়ারা, জৈন-বৌদ্ধদের সম্পত্তির ওপর সরকারী হস্তক্ষেপ প্রসারিত করা হবে।এটাই বিজেপি-আরএসএসের গেম প্ল্যান। এই গেম প্ল্যানকে পরাস্ত করতে চাই ব্যাপকতম মানুষ ইস্পাতকঠিন ঐক্য।আমাদের দেশের সংবিধান রক্ষার তাগিদে এই কাজটাকে আমাদের নিবিড় ভাবে করে যেতে হবে। এটাই এই মুহূর্তের জরুরি কাজ।”