মিডিয়া প্রোপাগান্ডার বিরোধিতা করতে বিকল্প মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গড়ার আহ্বান জানালেন বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনেরা। শনিবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসে উইথ ইউ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি আয়োজিত ভাতৃত্বের ইফতার মাহফিল শেষে আলোচনা সভায় বক্তারা এই বার্তা দেন। মূলত আল আমীন মিশনের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান হল রুম কানায় কানায় পূর্ণ ছিল।

আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে আল আমীন মিশনের সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম বলেন
“পজেটিভ কিছু করতে হবে। এখানে যারা বসে আছেন তারা প্রত্যেকেই একেকটা হিরের টুকরো।”
তাঁর এই কথার মধ্যে যেন একটি দৃঢ় বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি আক্ষেপের সুরে বলেন
“সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে পাঁচ বছরে তিনটি সময় — পঞ্চায়েত, বিধানসভা ও লোকসভা ভোটের সময় গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারটা অন্যের উপর ছেড়ে দিলে তো হবে না, নিজেদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে। জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ যদি সমাজের জন্য, সম্প্রীতির জন্য ভূমিকা রাখে তাহলে তাদের সমাজ-রাষ্ট্র গুরুত্ব দেবেই।”

নুরুল ইসলামের কথায় বারবার দায়িত্ববোধের প্রসঙ্গ উঠে আসে। তিনি জীবনের একটি গভীর অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলেন,
“একদিন মুর্শিদাবাদের উমরপুরে রমজান মাসের ভোরে চারজন ডাকাত আমাদের পথ আটকায়। এরপর ধারালো অস্ত্রের উল্টো পিঠ দিয়ে আমার হাতে আঘাত করে। সোজাসুজি আঘাত করলে হয়তো এক হাত কাটা পড়তো। তারপর তারা আমাদের কাছে যা ছিল সব ছিনতাই করে নিয়ে চলে গেল। যারা ডাকাতি করেছে তারা চারজনই মুসলিম, আমরাও মুসলিম। আমার তখন মনে হয়েছে মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন খাবার, ধর্ম নয়, ভাষা নয় — পেটের খিদের সমাধান সব আগে প্রয়োজন।”

মিডিয়া প্রোপাগান্ডার প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুক্তিপদ সিনহা, প্রতিচির সাবির আহমেদ, অল্ট নিউজের সম্পাদক প্রতীক সিনহা এবং সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট মোহাম্মদ জিম নওয়াজ। তারা প্রায় সকলেই বর্তমান সময়ে বিকল্প মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, মূলধারার মিডিয়া যখন উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়ায়, তখন বিকল্প প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই সঠিক তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

আলোচনায় বক্তাদের বক্তব্যে বারবারই উঠে আসে তথ্যের সত্যতা ও নিরপেক্ষতার বিষয়টি। বিকল্প মিডিয়া ছাড়া এই লড়াই চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে বলে উল্লেখ করেন অল্ট নিউজের সম্পাদক প্রতীক সিনহা।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক আতাউর রহমান জানান,
“প্রতি বছর এই রকম ইফতার হয়। এটা মিলনক্ষেত্র। আমরা সব পুরাতন বন্ধুরা এক জায়গায় হই।”
উত্তরবঙ্গ বিশ্ব বিদ্যালয়ের গবেষক তানিয়া পারভীন পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

উইথ ইউ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির এই আয়োজন যেন কেবল ভাতৃত্ববোধের প্রতীকই নয়, বরং একটি সামাজিক আন্দোলনের সূচনাও। বিকল্প মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গড়ার এই আহ্বান শুধু মিডিয়া প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে লড়াই নয়, বরং ন্যায় ও সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর একটি ঐকান্তিক প্রচেষ্টা।