কলকাতা বইমেলায় মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর স্টল পায়নি। এরপর সংগঠনটির পক্ষ থেকে বইমেলার আয়োজক সংস্থা পাবলিসার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সমালোচনা করা হয়েছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও করে মানবাধিকার সংগঠনটি। প্রতি বছর স্টল পেলেও এবার আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় স্টল দেওয়া হয়নি এপিডিআর- কে। এই অবস্থায় পাবলিসার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের পরিচালকমণ্ডলীর প্রতি খোলা চিঠি দিলেন বুদ্ধিজীবীদের একাংশ।
চিঠিটি টিডিএন বাংলার পাঠক পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে এখানে তুলে ধরা হল –
“বন্ধু,
কলকাতা বইমেলা শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, এই উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক মানচিত্রে এক অনন্য সংযোজন। ১৯৭৬-এ এর শুরু। এবছর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ৪৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা।
কলকাতা বইমেলা আমাদের বহুত্বের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। বহুবিধ সাহিত্যের সম্ভারের পাশাপাশি বহু মত, বহু ভাবনাকে তুলে ধরার পরিসর হিসাবে এই বইমেলা প্রাঙ্গণের ব্যবহার বহুকাল ধরেই হয়ে আসছে। মেলা প্রাঙ্গণে শাসকের নানাবিধ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার ঐতিহ্যও সেই সত্তরের দশক থেকেই রয়েছে।
সম্প্রতি আমরা জানতে পারলাম, মানবাধিকার সংগঠন গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর)-কে বইমেলার আয়োজক সংস্থা পাবলিসার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড এবারে স্টল করার অনুমতি দেয়নি। বলা হচ্ছে এবারে বইমেলায় অংশগ্রহণের জন্য সংস্থার রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেই শর্ত পূরণ করতে না-পারার কারণেই নাকি এপিডিআর-কে স্টল দেওয়া হয়নি। অথচ যারা প্রতিনিয়ত হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ আর বহুবিধ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, সেই সব রাজনৈতিক সংগঠন নানা নামে সসম্মানে কলকাতা বইমেলায় থাকছে!
সত্তরের দশকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সময়ে মানবাধিকার রক্ষার সপক্ষে ১৯৭২-এ প্রতিষ্ঠিত এপিডিআর-এর ভূমিকা যথেষ্ট গৌরবোজ্জ্বল। এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নদী বিশেষজ্ঞ কপিল ভট্টাচার্য, স্বাধীনতা সংগ্রামী সুশীল বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাধীনতা সংগ্রামী কল্যাণী ভট্টাচার্য(দাস), আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রমোদ সেনগুপ্ত, শ্রমিক আন্দোলনের বিশিষ্ট সংগঠক বীরেন রায়, ডাঃ অমিয় বসু, ‘অনীক’ পত্রিকা সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তী, লেখক শৈবাল মিত্র, ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র, মানবাধিকার সংগঠক সুভাষ গাঙ্গুলী ও সঞ্জয় মিত্রর মতো আরও অনেক বিশিষ্টজন। নীতিগত অবস্থান থেকেই এপিডিআর সংগঠন রেজিস্ট্রেশন করায় নি। দশকের পর দশক আন-রেজিস্টার্ড সংগঠন হিসাবে স্ব-নামেই বইমেলায় অংশ নিয়ে এসেছে।
সংবিধানে প্রদত্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যখন প্রতিনিয়ত খর্ব হচ্ছে, সেই সময়ে এপিডিআর-কে কলকাতা বইমেলায় স্টল করতে না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে যথেষ্ট বেদনার এবং ক্ষোভের। আমরা উদ্বিগ্ন এবং আশঙ্কিত এই ভেবে যে এর ফলে কলকাতা বইমেলার দীর্ঘ দিনের বহুত্বের ঐতিহ্য, পরমত সহিষ্ণুতার পরম্পরা ক্ষুণ্ণ হবে। সম্মানহানি হবে আয়োজক সংস্থার-ও।
আমরা মনে করছি, এইসব নতুন নতুন নিয়ম ও শর্ত আরোপ কলকাতা বইমেলার বৈশিষ্ট্য তথা চরিত্র-বিরোধী। কলকাতা পাবলিসার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড-এর কাছে আমাদের অনুরোধ, আপনারা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন, এপিডিআর যাতে অন্যান্য বছরের মতো এবারেও কলকাতা বইমেলায় সসম্মানে স্টল দিতে পারে তা নিশ্চিত করুন।
ধন্যবাদসহ,
জয়া মিত্র
অভ্র ঘোষ
আশীষ লাহিড়ী
শুভেন্দু দাশগুপ্ত
ডাঃ বিনায়ক সেন
ডাঃ সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়
মৃদুল দাশগুপ্ত
কুমার রাণা
তীর্থঙ্কর চন্দ
কৌশিক সেন
বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য
সুনীশ দেব
সজল মিত্র
বোলান গঙ্গোপাধ্যায়
কুণাল চট্টোপাধ্যায়
বিপুল চক্রবর্তী
কল্লোল দাশগুপ্ত
রঙিলী বিশ্বাস
পল্লব কীর্তনীয়া
সুপ্রিয় চৌধুরী
মধুময় পাল
সমীর আইচ
অম্লান ভট্টাচার্য
জিতেন নন্দী
কণিষ্ক চৌধুরী
মোহিত রণদীপ
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ “