মোকতার হোসেন মন্ডল
দলিত এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষের শিক্ষা এবং সামাজিক অধিকারের জন্য লড়াই করায় বীরভূমের জনপ্রিয় সমাজকর্মী আয়েশা খাতুনকে সাবিত্রী ফাতিমা সম্মাননা ২০২৫ দেওয়া হল। শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে ‘ভয়েস অফ বহুজন’ সংস্থার পক্ষ থেকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হল শীত বস্ত্র, একটি মানপত্র, একটি মেমেন্টো এবং ২০হাজার টাকা। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ দেবী চ্যাটার্জী, কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক সনৎ নস্কর, অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মু, কবি কল্যাণী ঠাকুর, বরিষ্ঠ নৃতাত্ত্বিক কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়, লেখক মহঃ নুরুদ্দিন শাহ, আন্তঃদেশীয় সম্প্রীতি মঞ্চের আহ্বায়ক বিশ্বদেব চক্রবর্তী প্রমুখ।
আয়েশা সেই নারী যার নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার শিকারিপাড়া ব্লকের হিরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জনমঘুটু পাহাড়ের নীচে আটটি আদিবাসী গ্রাম হাসছে। কেননা এক সময় এখানে জলের তীব্র সংকট ছিল। প্রায় নয় মাস খাওয়ার জল তো বটেই, সেচ ও স্নানের জলের সমস্যা ছিল। ২০১৭ সালে আয়েসা খাতুন এই এলাকায় কৃষি এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বৃষ্টির জল সংরক্ষণের পরিকল্পনা করেছিলেন এবং সেই সময় থেকে কাজ করছেন। তিনি এবং তার সহকর্মীরা বারো হাজারেরও বেশি কনট্যুর ট্রেঞ্জ খনন করেছেন। ১৬ লক্ষ গাছ লাগিয়েছেন। ফলে হাজার হাজার আদিবাসী মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এই প্রখ্যাত সমাজকর্মী ২১টি বই লিখেছেন।
আয়েসা খাতুন ১৯৬৯ সালের ২ অক্টোবর বীরভূম জেলার একটি সুফি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদু ছিলেন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াকু সৈনিক। তার বাবা একজন সুফি পণ্ডিত এবং স্কুল শিক্ষক। তার মা কৃষক।
আয়েশা টিডিএন বাংলাকে জানান, ‘প্রায় দুই হাজার মহিলা মহম্মদ বাজার ব্লক, মুরারই এলাকায় বিষমুক্ত সবজি বাগান করেছেন।’
ভয়েস অফ বহুজন সংস্থার অধিকর্তা শরদিন্দু উদ্দীপন জানান, আয়েসা আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি সুন্দরবনের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। শিক্ষিত যুব সমাজকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কুসংস্কারের বিরূদ্ধে লড়াই করছেন। এছাড়া বেগম রোকেয়া অ্যাকাডেমিও করেছেন।
তিনি আরো জানান, সাঁওতাল সম্প্রদায়ের একজন দরিদ্র মহিলা মানকু মুর্মু বীরভূমের দারিয়ারপুরের বনগ্রাম গ্রামে বাস করেন। একজন কালো জাদুকর তাকে ডাইনি ঘোষণা করেছিলেন। ১০ আগস্ট ২০২০ সালে কিছু গ্রামবাসী তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। আয়েশা খাতুন তাকে উদ্ধার করেন এবং পুলিশ ও অন্যান্য স্থানীয় নেতাকর্মীদের সহায়তায় মানকু এখনো বেঁচে আছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বিশিষ্ট লেখক মুহাম্মদ নুরুদ্দীন বলেন, ‘সাবিত্রী বাই ফুলে এবং ফাতিমা সেখ ব্রিটিশ-ভারতের একজন অন্যতম প্রতিবাদী মুখ ছিলেন। সমাজের দলিত এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষের শিক্ষা এবং সামাজিক অধিকারের জন্য তাঁরা নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোনও এক অজ্ঞাত কারণে এই সমস্ত মহীয়সী মহিলাদের ইতিহাস চাপা পড়ে গেছে। ‘ভয়েস অব বহুজন’ সংস্থা সমাজে অসামান্য অবদানের জন্য আয়েশা খাতুন-কে সাবিত্রী ফাতিমা সম্মাননা প্রদান করেছে। এই সম্মান আয়েশার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেমন উৎসাহ দেবে তেমনি সাবিত্রী ও ফাতিমা সম্পর্কে মানুষ আরো জানবে।