শিক্ষা বিস্তারে প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকায় সুনামের সঙ্গে কাজ করে চলেছে বাসন্তী চুনাখালি এডুকেশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। মাওলানা আনোয়ার হোসেন কাশেমী সাহেবের উদ্যোগে এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে সুন্দরবন আল-মানার মিশন (বালিকা ও বালক বিভাগ) এবং খারেজি মাদ্রাসা। শনিবার সুন্দরবন আল-মানার মিশনের গার্লস ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হল ১০ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এ দিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সমাজের বিভিন্ন গুণী মানুষদের সংবর্ধনা, কৃতী ছাত্রীদের সংবর্ধনা, পুরস্কার বিতরণ ও গজল পরিবেশন করা হয়েছে।
এ দিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের অন্যতম সদস্য মাওলানা আবু তালিব রহমানি বলেন, আল্লাহ-র ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা ভারতে জন্ম নিয়েছি। আমরা গর্বিত ভারতবাসী হিসাবে। নবীজি সা.-ব জীবনচরিত আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। একসময় দেশ স্বাধীনতার জন্য আলেম-উলামারা জীবন উৎসর্গ করেছেন। বর্তমান আলেম-ওলামারা দেশে কেন বিপ্লব আনতে পারেনি বলে তিনি প্রশ্ন তোলেন। পাশাপাশি রাজনীতিতে, সমাজ জীবনে ইসলাম থাকতে হবে বলে তিনি মনে করিয়ে দেন। তাঁর আশঙ্কা, ওয়াকফ সংশোধনী আইন পাস হলে খারেজি মাদ্রাসা, ওয়াকফ সম্পত্তি, মসজিদ, মাদ্রাসা সব দখল হয়ে যাবে। এই আইন রোখার জন্য ও দেশকে বাঁচানোর জন্য আমরা লড়াই করতে রাজি বলে তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন।
রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান বলেন, ‘সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন বাঁধা অতিক্রম করে আনোয়ার হোসেন কাশেমী সাহেব শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে চলেছেন। এই সুন্দরবন এলাকায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা, শীতবস্ত্র বিতরণ-সহ নানান সামাজিক কাজের আনজাম দিয়ে চলেছেন তিনি। মেয়েদের কথা ভেবে গার্লস মিশনও প্রতিষ্ঠা করেছেন।’
তিনি মনে করিয়ে দেন, একটা অপপ্রচার চলে, ইসলাম নাকি মেয়েদের দাবিয়ে রাখে। এটা যে ভুল তা মনে করিয়ে দিয়ে ইমরান সাহেব আরও বলেন, ‘একজন মহিলা প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তিনি হলেন মা খাদিজা রা.। ইসলামের জন্য প্রথম শহিদ হন একজন মহিলা, মা সুমাইয়া রা.। মরক্কোয় ফাতেমা নামের একজন মহিলা প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজও সুনামের সঙ্গে চলছে। মেয়েদের শিক্ষার উপর গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘ইসলামে মেয়েদের মর্যাদা অভাবনীয়।’
পাশাপাশি শিশু বিকাশ অ্যাকাডেমির পরিচালক মুন্সি আবুল কাশেম সাহেবের প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন, ‘সিপিএম আমলে তিনি লড়াই করে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাইনোরিটি স্ট্যাটাস আদায় করেছিলেন।’
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের সদস্য তথা সারাবাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, অনুন্নত সুন্দরবন এলাকায় কাজ করে চলেছে এই মিশন। আনোয়ার হোসেন কাশেমী সাহেবের শিক্ষা এবং সামাজিক আন্দোলনে একদিন অনুন্নত থেকে উন্নত সুন্দরবন এলাকা গড়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। জ্ঞান অর্জন ও শিক্ষার মধ্য দিয়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে বলে তিনি জানান।
সুন্দরবন আল-মানার মিশনের কর্ণধার মাওলানা আনোয়ার হোসেন কাশেমী বলেন, ‘প্রত্যন্ত বাসন্তী-সহ গোটা সুন্দরবন এলাকায় আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বস্ত্র-সহ বিভিন্ন সামাজিক কাজের আনজাম দিয়ে চলেছি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্যই কাজ করা আমাদের লক্ষ্য।’
সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সহ সম্পাদক নাজমুল আরেফিন বলেন, রাজনৈতিকভাবে নয়, শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে আমাদের সামাজিক মানোন্নয়ন ঘটাতে হবে। শিশু বিকাশ একাডেমির মুন্সী আবুল কাশেম সাহেব শিক্ষার গুরুত্ব ও মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের কথা বলেন।
আমাদের নিজস্ব আত্মশুদ্ধির কথা বলেন বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার মুফতি লিয়াকত আলি কাশেমী সাহেব। বেশি বেশি করে নবীজি সা. এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ ও কুরআন শরীফ তেলওয়াতের কথা তিনি মনে করিয়ে দেন। বিভিন্ন সামাজিক কাজ ও দ্বীনি শিক্ষার আনজাম দিয়ে চলেছেন এই প্রতিষ্ঠান, এর জন্য তাঁর কৃতী ছাত্র আনোয়ার হোসেন কাশেমীর প্রশংসা করে তিনি শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করেন। এ ছাড়াও এ দিনের অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের সদস্য হাজী মাহমুদ আলম, মাওলানা মোফাক্কের হোসেন, সাংবাদিক আজিজুল হক, মাওলানা আবদুর রশিদ সাহেব, শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত শিক্ষক পবন সর্দার ও অমল নায়েক, রশিদ মোল্লা, একেএম গোলাম মোর্তজা, সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সহ সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ছাত্রনেতা মুহাম্মদ আল আমিন, হাফেজ নাজমুল ইসলাম, পীরজাদা জাফর সিদ্দিকী প্রমুখ। 1