মক্কা মদিয়া থেকে ফিরে শিশু সাহিত্যিক মুহাম্মদ নুরুদ্দীনের লেখা দুটি কবিতা

কাবা তুমি সুন্দর জানতাম

কিন্তু তোমার বিমোহিনী রূপ যে এত দুর্নিবার তা কল্পনাতেও ছিলনা।

তোমাকে যতই দেখি ততই তৃপ্ত হয় দুটি আঁখি।

তোমার দিকে তাকিয়ে অপলক কেটে যেতে চায় অনাদি অনন্তকাল।

তবুও তৃপ্ত হয়না এই অন্তর।

কাবা

পৃথিবীর কেন্দ্র তুমি

তোমাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে থাকে নিখিল জগতের সিজদাবনত শির

যখন তোমার চারিদিকে তাওয়াফ করতে থাকি অবিরাম

মনে হয় যেন আমি সূর্য কে আবর্তন করে ঘুরতে থাকা এক নক্ষত্র

অথবা মাঝ সমুদ্রের ঘুর্ণি পাকে পাক খেতে থাকা নীল তিমি

অথবা মরুভূমির ঘূর্ণাবর্তে হটাত করে পাক খেতে থাকা খড় কুটো

কাবা

তুমি শুধু স্বর্ণ খচিত অক্ষরে রাঙানো কালো গেলাফ ঢাকা অবয়ব নও।

তুমি তো মোমিন হৃদয়ের চির স্পন্দন।

হৃদয়ের মণিকোঠায় স্বযত্নে লালিত আজীবনের স্মৃতি।

আমিতো তোমার স্বর্ণ খচিত কিঙ্খাবে মোড়া রূপ দেখতে পাইনি।

তোমার মাঝে আমার দুটি আঁখি খুঁজে ফেরে পিতা ইব্রাহিমের স্মৃতি।

নির্জন মরু প্রান্তরে খলিলুল্লাহ তাঁর প্রিয় পুত্রকে নিয়ে একের পর এক পাষাণ সাজিয়ে গড়ে তুলেছিল যে ইবাদত গাহ তোমার মাঝে আমি যেনো সেই ক্লান্ত শরীর থেকে নিশ্রীত ঘামের খোশবু খুঁজে পাই।

কাবা

আমার আকুলি বিকুলি আঁখিতোমার সর্বাঙ্গে খুঁজে ফেরে প্রিয় নবীজির চিহ্ন

তোমার আর নবীজির বাড়ির মাঝেই তো আবুজেহেলের ঘর

এই পথেই বুঝি কাঁটা বিছাত সেই বুড়ি?

কাবা

তুমিকি আমাকে দেখাতে পারো সেই জায়গা যেখানে উটের ভুঁড়ি চাপিয়ে দম বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল নবীজিকে?

কোন সে পবিত্র খিমা গভীর নিশিতে যার আড়ালে দাঁড়িয়ে মধুর কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াতে মগ্ন হয়ে যেতেন নবীজি?

সুললিত কণ্ঠের সে কুরআনের বাণী শুনতে ভিড় লেগে যেত জিন পরি আর ফেরেশতাদের।

শত্রুরাও দেওয়ালে কান পেতে শুনতো এ মধুর বাণী।

ওই তো আবু বকর রা এর ঘর।

আজ সেখানে বিশাল অট্টালিকা কিন্তু আমিতো এখনও দেখতে পাই দরজায় পিঠ লাগিয়ে সারারাত দাঁড়িয়ে আছে নবীজির প্রিয় বন্ধু।

এভাবে কত রাত কেটে যায় হিজরতের অপেক্ষায়

আমি এখনও তোমার পাথরের গায় হাবশী বেলালের চিহ্ন খুঁজে পাই

কালো আর ধলোর ব্যবধান ঘুচিয়ে যুগান্তকারী যে বিপ্লব এনেছিলেন রাসূলুল্লাহ্

তার ফল দেখে দুচোখ জুড়িয়ে যায়

তোমার তাওয়াফে আবর্তন কারীর মধ্যে কোনো ব্যবধান নেই।

আজ যখন আল্লাহু আকবর গর্জন ভেষে আছে তোমার আকাশ চুম্বি মীনার হতে তখন তো আমি স্পষ্ট শুনতে পাই বেলালের কন্ঠ।

হে কাবা তুমি শুধু কাবা নও তুমি আমার বুকে গেঁথে থাকা এক সুবিশাল ইতিহাসের সাক্ষী।

তুমি বুকে ধারণ করা জান্নাতী পাথরের ঘর।তুমি অম্লান তুমি অমলিন।

তায়েফ তায়েফের পানে চলেছে কাফেলাপ্রিয় নবীজির টানে,

তায়েফের নামে বেদনার বিন কেন বাজে আনমনে।

মক্কার মাটি দিলনাতো ঠাঁই শুনলোনা কথা তাঁর, দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছতে হবে এ যে বড় গুরুভার।

পাড়ি দেন তিনি তায়েফের পানে বুক ভরা আসা নিয়ে,

ঘুচবে সেখানে যুগের আঁধার দ্বীনের পরশ পেয়ে।

পাষাণের চেয়ে কঠিন ছিলো যে টায়েফ বাসীর মন,

নবীর কথার মর্ম তারা তো বুঝলোনা অনুক্ষণ।পাথর ছুড়ল নবীজির পানে রক্ত ঝরলো তাঁর,

বেহুস হয় পড়ল মাটিতে এমন সে অবিচার।

হুস ফিরে দেখে দুই ফিরিশতা দাড়ায়ে শিয়র পানে,

হুকুম হলেই তাইফবাসীকে পিষে দিতে তারা জানে।

চমকে উঠেন দয়ার নাবীজি কি কর কি কর ভাই,

দ্বীনের দাওয়াত পায়নি তো তারা দোষ তো তাদের নাই।

আজ নাই হোক একদিন তারা বুঝবে ঠিক বুঝবে,

দ্বীনের স্নিগ্ধ কোমল পরশ খুঁজবে তারা খুঁজবে।

মহান নবীর অমর বাণী সত্য হলো আজ,

বিশ্ব মাঝারে তায়েফের ভালে দ্বীনের মহান তাজ।

Exit mobile version