জ্যোতিষ - TDN Bangla
  • About Us
  • Privacy Policy
  • Contact Us
Friday, May 9, 2025
  • Login
No Result
View All Result
TDN Bangla
  • হোম
  • রাজ্য
  • দেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • সম্পাদকীয়
  • হোম
  • রাজ্য
  • দেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • সম্পাদকীয়
No Result
View All Result
TDN Bangla
No Result
View All Result
ADVERTISEMENT

জ্যোতিষ

Umar Faruque টিডিএন বাংলা
December 7, 2024
| সাহিত্য ও সংস্কৃতি
মুহাম্মদ জিকরাউল হক

“বাবা আমি কী হয়েছি বলো তো?”

টিউশন থেকে এসে ছেলে জিজ্ঞেস করলো আমায়। আজ ওর টিউশনে অংক পরীক্ষা ছিল। গত মাসে পরীক্ষা দিয়ে এসে চুপ করে বসেছিল। জিজ্ঞেস করার পর উত্তর দিয়েছিল, ও থার্ড হয়েছে। তিনজনই পড়ে ওরা। ওর প্রথম হওয়ার সুযোগ নেই। যে ছেলেটা ফার্স্ট হয়, বরাবরই ফার্স্ট হয়। বাকি দু’জনের কেউ সেকেন্ড, কেউ থার্ড। সে যখন উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করছে কী হয়েছে, তবে নিশ্চয় সে থার্ড হয়নি।

আমি বললাম, “সেকেন্ড হয়েছো।”

সে উত্তর শুনে থ। হতভম্ব ভাব কাটিয়ে উঠে সে বলল, “ঠিকই বলেছো। বলোতো কত পেয়েছি?”

নানান হিসেব-নিকেশ করে তার সেকেন্ড হওয়াটা ধরতে পেরেছি তবে কত নম্বর পেয়েছে সেটা বলা কি সম্ভব? তবু খানিক হিসেব-নিকেশ করে নিলাম মনে মনে। সে গত মাসে পেয়েছিল চল্লিশের নিচে। চৌত্রিশ। একজন পেয়েছিল চল্লিশ। আরেকজন আটচল্লিশ। আমি ভর্ৎসনা করে বলেছিলাম অন্তত চল্লিশের উপরে পাওয়া উচিত ছিল। নিশ্চয় সে এবার চল্লিশের উপর পেয়েছে এবং সেকেন্ড হয়েছে। কনফিডেন্সের সঙ্গে বললাম, ” বিয়াল্লিশ”। সে এবারও উত্তর শুনে হতবাক হল। বলল, “ঠিকই তো বলেছো। তুমি বলতে পারো কী করে?”

আমি কিছুই না বলে সেখান থেকে কেটে পড়লাম। এর অর্থ, আমার কাছে এসব বলা কোন ব্যাপারই নয়।

                                                   *****

শীতকাল চলছে। ট্যাংকে তুলে রাখা জল চরম ঠান্ডা। স্নানের সময় গায়ে টেকানো যায় না। ডাইরেক্ট তোলা জলে স্নান করি। ছেলেদেরও বলেছি সেই জলে স্নান করতে। তারাও তাই করে।
সেদিন হাফ স্কুল ছিল। দু’টোর সময় বাড়ি এলাম।

ছেলেকে বললাম, “শাওয়ার ছেড়ে ঠান্ডা জলে স্নান করেছিস?”

সে কাচুমাচু হয়ে বললো’ “শীত তো কমে গেছে।”

“আমি তো তার জন্য বকছি না। শুধু জিজ্ঞেস করছি করেছিস কি না?”

সে নিশ্চুপ।

ওর মা পাশ থেকে বলল, “হ্যাঁ করেছে। আমিই করতে বলেছিলাম।”

আমি ছেলেকে ছেড়ে ওর মায়ের পিছনে পড়লাম। “আচ্ছা বলতো, কি করে বুঝলাম শাওয়ার ছেড়ে ঠান্ডা জলে স্নান করেছে?”

“তোমার বুদ্ধি বেশি। তুমি সবই জানো। ভূত-ভবিষ্যৎ তোমার চোখের সামনে। তুমি তো জানতে পারবেই।” একথা বলেই সে নিজ কাজে চলে গেল। সে শুনবে না আমি কি করে না দেখেই বলে দিলাম।

আসলে চোখ-কান খোলা রাখলে, একটু বুদ্ধি খাটালে, অনুমান শক্তিকে কাজে লাগালে এমন অনেক কিছুই বলে দেয়া যায়।

আমাদের বাথরুমে শাওয়ারে স্নান করলে কয়েক ঘণ্টা পরও দু-এক ফোঁটা জল পড়তে থাকে। নিদেনপক্ষে দু-পাঁচ ফোঁটা জল লেগে থাকে। ঝুলতে থাকে পড়ার অপেক্ষায়।

বেশ কিছুদিন কেউই স্নান করিনি বলে সেটা শুকিয়ে ছিল। আজ স্কুল থেকে এসে দেখি জলের ফোঁটা আটকে আছে। সেই থেকেই অনুমান।

                                                             ******

আমি নাকি জ্যোতিষ! একসময় এই ধারনা আমার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ছিল। এখন পরিবারের সকলে এমনকি চেনা জানা অনেকেই এই ধারনা পোষণ করে। কি করে এই ধারনা তাদের হল বলি। স্কুলে অনুমান করে একেকসময় একেকটা ভবিষ্যৎ বাণী করতাম। সেটা মাঝে-মধ্যে সঠিক বলে প্রমাণিত হয়ে যেত। মাঝে-মধ্যে হতও না। যাদের হত তারা সেটাকে ফুলিয়ে বড় করে অন্যদের কাছে এমনভাবে পরিবেশন করত যে, তারা না বিশ্বাস করে পারত না। ব্যাপারটা আমি উপভোগ করতাম। উপভোগ করতাম বলেই আমিও সচেষ্ট থাকতাম আমার মানটা বজায় রাখতে। ফলে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হত চারদিকে। পরিস্থিতি বিচার করতে হত সূক্ষ্ণ ভাবে।
জেসমিনের বিয়ে হয়েছে। বিয়েতে নেমন্তন্ন করেছিল। গেছিলাম। ও আমার ছাত্রী ছিল। সে কাছের স্কুল ছেড়ে দূরে আমাদের স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছিল। সায়েন্স নিয়েছিল। সায়েন্সটা আমাদের স্কুলে ভালো পড়ানো হয়। ভালো রেজাল্ট করেছিল জেসমিন।

বছরখানেক বাদে ওর সাথে দেখা। বাজারে যাচ্ছিল। জিজ্ঞেস করলাম, “কবে এসেছো?”

সে উত্তর দিল,”কাল সন্ধ্যায় এসেছি স্যার। আপনি কেমন আছেন?”

আমি বললাম, “ভালো আছি। তুমি?”

সে বলল,”আমিও ভালো আছি স্যার।”

তারপর আমাকে চমকে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “এখন কি আর হাত দেখেন? বলতে পারেন ভবিষ্যতের কথা?”

আমি চমকিত হয়ে বললাম, “মনে আছে তোমার পাঁচ বছর আগেকার কথা!”

সে বলল, “কেন থাকবে না স্যার! সে সময় আপনার কত নাম-ডাক! গোটা স্কুলে হৈ চৈ। সবাই আপনাকে জ্যোতিষ বলত তখন।”

আমি হাসলাম। বললাম, একটু আধটু তখন বলতে পারতাম বৈকি! তবে সবই অনুমান করে।”

আমার কথার বিরোধিতা করে জেসমিন বলল,”অনুমান নয় স্যার, আপনি সত্যিই বলতে পারতেন।”

আমি কথার মোড় অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য বললাম, “যাক গে! বাদ দাও ওসব কথা।”

জেসমিনের সঙ্গে ওর বড় জা ছিল। আমরা যতক্ষণ কথা বলেছি ততক্ষণ সে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। ওর জা’র সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। তারপর আমাকে বলল, ”স্যার, এখানে আসার পর জা-এর কাছে আপনার সম্বন্ধে সব গল্প করেছি। ও আপনাকে দেখতে খুব আগ্রহী ছিল। আমি বলেছিলাম, ভাগ্যে থাকলে একবার দেখা হবেই। দেখা হয়েও গেল। জা-কে লক্ষ্য করে বলল, “ইনিই হলেন সেই স্যার, যাঁর সম্বন্ধে রাতে বলেছিলাম তোমাকে।”

সে আমাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে বলল, “স্যার, আপনি!”

তার বড় জা’কে হতচকিত করে দিয়ে বললাম, “তোমার নাম ”মিনু’ না?”

সে বিস্মিত হয়ে বলল, “হ্যাঁ স্যার! আপনি অপরিচিত লোকের নামও বলে দিতে পারেন!”

তার বিস্ময়ের রেশ জিইয়ে রেখে বললাম, “কেন পারব না? এটা বলা তো সবচেয়ে সহজ।”

সে অনুনয় করে বলল, “স্যার, বলুন না কীভাবে বলতে পারেন? আমিও শিখব। আমার খুব শখ। আপনার মত আমিও সবাইকে চমকে দেব।”

এবার আমি সিরিয়াস হয়ে গেলাম। বললাম,”সব বিদ্যা সকলকে শেখানো যায় না। গোপন বিদ্যা গোপনই রাখতে হয়।”

সে নিরাশ হল। তার নিরাশা দূর করার জন্য জেসমিন তাকে বলল, “সবকিছু তোমাকে শিখতে হবে না। তুমি যা জানো তাই নিয়ে থাকো।” তারপর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “জানেন স্যার, মিনুদি খুব ভালো কবিতা লিখতে পারে।”

আমি বললাম, “খুব ভালো তো। তুমি আমাকে কবিতা লিখতে শিখিয়ে দিও। আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব কিভাবে হাত দেখতে হয়।”

মনে হল, আমার এই কথা তার খুব মনঃপুত হয়েছে। সে হাসল। আমার তাড়া ছিল বলে এগিয়ে গেলাম। তারা একটা কাপড়ের দোকানে ঢুকে পড়ল।

আপনারা এতক্ষণ ভাবতে শুরু করেছেন, আমি কী করে মিনুর নামটা বলে দিতে পারলাম? কী করে বলতে পারলাম তা জানিয়ে দেবার দায় আমারও।

আজ স্কুল থেকে এসে খেতে বসেছি। এটা আমার বরাবরের অভ্যেস। স্কুল থেকে এসে ভাত খাই রোজ। সেই পড়ার জীবন থেকে। এই সময় বউয়ের সাথে দু-চার কথা হয়। সারাদিনের জমে থাকা কথা। সে বলে বাড়ির কথা, আমি বলি স্কুলের। সে আজ বলল, ” পাশের বাগানে একটা ছোট ছেলে বাবুদের সাথে খেলা করছিল । খুব সুন্দর মত দেখতে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কার ছেলে তুমি? সে বলল, আমি মিনুর ছেলে। আমি মিনুকে তো চিনি না। কিছুক্ষণ পরে নাঈম এলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ছেলেটি কে গো? সে বলল, আমার ভাগ্নে হয়।”

নাঈম জেসমিনের ভাই। জেসমিনের সন্তান হয়নি এখনও। যে ছেলেটিকে সে ভাগ্নে বলেছিল সেটা জেসমিনের বড় জা-এর ছেলে হওয়ায় স্বাভাবিক। সহজ হিসেব।

জেসমিনের সঙ্গে তার জা-কে দেখে দৃঢ়তার সাথেই বলে দিয়েছি তার নাম। আমি যে সঠিক বলেছি তা তার বিস্ময় দেখেই পরিষ্কার বোঝা গেছে!
*

আমার বাড়িতে একটা মেয়ের দরকার পড়ল। ঘরের টুকটাক কাজ, এই যেমন ঝাট দেয়া, বাসন মাজা, ঘর মোছা, রান্নার কাজে সাহায্য করা ইত্যাদি করবে। স্কুল পড়ুয়া মেয়ে হলে ভালো। সময় মত খেয়ে-দেয়ে স্কুল যাবে, বাড়িতে পড়তে বসবে। রাতও থাকবে। তার খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-আশাক, ওষুধ-পত্র, বই-খাতা সব দায়িত্ব আমার।

এমনভাবেই একটা মেয়ে থাকত আমার কাছে। যখন সে এলো, দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ত। অষ্টম শ্রেণীতে উঠতেই বিয়ে দিয়ে দিল তার বাবা। আমার আর কিই বা করার ছিল!

তারপরে ক’বছর এমনিই চলছিল। অতটা অসুবিধা হয়নি। সেরকম কাউকে পাওয়াও যায়নি। মাঝে একটা মহিলা এসে ঘর মুছে ও মাসন মেজে দিয়ে যেত শুধু। সে একসঙ্গে চার বাড়িতে এই কাজ করত। ফলে সময় নিয়ে গন্ডগোল দেখা দিল। যে সময়ে আমি স্কুল বের হবো তখন সে আসত। আর আধঘন্টা পর আসতে বললে, সে মুখের উপর বলে দেয় পারবে না, তাকে আরো তিন বাড়ি কাজ করতে হয়। তিন মাস পর সে চলে গেল। তাকে ছাড়িয়ে দেয়া হল।

একটা মেয়ের সন্ধান পাওয়া গেল। আমার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সে। সুমিয়া। বাবা মারা গেছে তার জন্মের পরেই। মা থাকে মুম্বাইতে। সুমিয়া থাকে নানীর কাছে। ওর নানা বাজারে সব্জি বিক্রি করে।

তাকে একদিন বললাম, “আমার তো মেয়ে নেই, তোমাকে আমি নিয়ে নেব। আমার কাছে থাকবে। আমার সঙ্গে বাইকে করে স্কুলে আসবে। আমি পড়াবো। আর মেয়েরা যেমন মায়ের কাজে সাহায্য করে তেমনি তুমিও হেল্প করবে তোমার আন্টির কাজে।”

সে আমার কথা শুনে হাসল।

আমি সামান্য হলেও মনে জোর পেলাম। তাকে বললাম, “কী, থাকবে তো আমার কাছে?”

সে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। বলল, “নানাকে বলে দেখেন।”

তার এই উত্তরকে তার পুরো সম্মতি আছে ধরে নিয়ে বললাম,”ঠিক আছে আমি তোমার নানার সাথে কথা বলব।”

আমি তাদের বাড়ির অবস্থান জানতাম। সেখানে আমার আরেক ছাত্রী রিফার বাড়ি আছে এবং সেই ছাত্রীর বাড়ি আমার পুরো পরিবারের যাওয়া-আসা রয়েছে। রিফার বড় বোন আমিনার মেয়ে হয়েছে, তার মেয়েকে দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে ক’দিন বাদে সেখানে গেলাম। ছাত্রীর মাকে, যার সঙ্গে আমার স্ত্রীর ‘বোনের’ সম্পর্ক জড়ানো, বললাম সুমিয়ার ব্যাপারটা। সে চিনতে পারল। বলল, ” আমাদের বাড়ি আসে ও। মাঝেমাঝে। আমি এখনই ডেকে পাঠাচ্ছি।”

সবে সন্ধ্যা হয়েছে। তাকে ডেকে নিয়ে আসল রিফা। আমরা তখন সবাই একসাথে বসে চা খাচ্ছিলাম। সুমিয়া ঘরে ঢুকতেই আমি তাকে আমার পাশে বসালাম এবং বললাম, “তুমি বাড়িতে চুলোয় বসে রুটি বানাচ্ছিলে, তাই না?”

সুমিয়া বলল, “হ্যাঁ স্যার।”

আমার স্ত্রী তার সাথে কথা বলতে লাগল। কি কি রান্না করতে পারে, বাড়িতে নানীর কি কি কাজ করে দেয়, পড়াশোনায় কেমন, মা কবে বাড়ি আসবে ইত্যাদি।

রিফার মা চোখ বড় বড় করে তাদের কথাবার্তা শুনছিল। আমার স্ত্রী থামতেই সে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা মাস্টার মশাই, আপনি এখানে বসে কি করে জানলেন যে, সুমিয়া বাড়িতে বসে চুলোয় রুটি তৈরি করছিল?”

আমি কিছু বলার আগেই রিফা আর সুমিয়া প্রায় একযোগে বলে উঠল, “স্যার জ্যোতিষ তুমি জানো না! সব বলে দিতে পারেন।”

শুনে তার চোখ বড় হয়ে গেল। কথাটাকে পূর্ণ বিশ্বাস করে সে বলে উঠল,”হ্যাঁ হ্যাঁ, এখন মনে পড়ছে। মাস্টার মশাই বাড়িতে ঢুকেই আমিনার মেয়েকে দেখে বলেছিল, কেমন আছো ‘পারসা’? আমিনার মেয়ের নাম পারসা রাখা হয়েছে মাস্টার মশাই তো জানতেন না! নামটা গতকালই ঠিক করা হয়েছে।
রিফার বাবা এতক্ষণ ধৈর্য ধরে সব কথা শুনছিলেন। এবার বলে উঠলেন, ” সত্যি তো! বড়ই আশ্চর্যের বিষয়। কী করে বলতে পারেন ?”

এবারও আমি আমার সেই রহস্যের হাসি হাসলাম। তার মানে আমি এর উত্তর দেব না। তাদেরকে উত্তর দেয় বা না দেয়, প্রিয় পাঠক! আপনাদের এর উত্তর অবশ্যই আমি দেব। এটা আমার দায়, যা আমি অস্বীকার করতে পারি না।

সুমিয়া যখন আমার পাশে বসে তখনই ওর মাথার কালো চুলে সাদা ছাই পড়ে থাকতে দেখি। যার অর্থ সে চুলোয় রান্না করছিল। আর এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই রাতে রুটি খায়। এটা অবশ্য অনুমান করে বলেছিলাম যে, সুমিয়া রুটি তৈরি করছিল। আমার অনুমান সঠিক হয়েছে। দ্বিতীয়ত ‘পারসা’ নামটা আমি কী করে বলে দিলাম! বাইক নিয়ে গিয়ে যখন রিফাদের বাড়ির সামনে দাঁড় করালাম, আমার ছেলে ও স্ত্রী ভেতরে ঢুকে গেল, আমি ডিকি থেকে মিষ্টির প্যাকেট বের করছিলাম, তখন দেখলাম আমিনার বড় ছেলে রিক পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কোথায় গিয়েছিলে তুমি?” সে বলল, “পারসার জন্য দোকান থেকে কালো সুতো আনতে।” বুঝলাম তার বোনের নাম রাখা হয়েছে পারসা।
*
একটা ছাত্র এলো বাড়িতে। সকালে। বসতে দিয়ে বললাম, “ফর্ম ফিলাপ করবে?”

সে বলল, “হ্যাঁ স্যার। আপনি সবকিছু বলতে পারেন বলেই আমি আর আগ বাড়িয়ে বললাম না ফর্ম ফিলাপের কথা।”

একটা ছাত্রী এলো দুপুরে। বাড়িতে ঢুকার মুখেই বললাম, “কবে বিয়ে?”

সে অবাক হল প্রশ্ন শুনে। বলল, “আপনি এটাও বলে দিতে পারলেন! আগামী শুক্রবারে আমার বিয়ে। যাবেন কিন্তু। সবাইকে নিয়ে।” বলতে বলতে ব্যাগ থেকে কার্ড বের করে হাতে দিল।

একটা প্রাক্তন ছাত্রী এলো বিকেলে। বসল। আমি চা দিতে বললাম স্ত্রীকে। দিল। দু’জন চা খেলাম। তারপরও যখন ওর আসার উদ্দেশ্য নিয়ে আমাকে ও কিছু বলল না তখন আমিই তাকে বললাম, “বিয়েটা তাহলে ভেঙে দিচ্ছ। মানিয়ে নিতে পারলে না?”

প্রশ্ন শুনেই সে কেঁদে ফেলল। বলল, “বিশ্বাস করুন আমি ডিভোর্স নেব। আর পারছি না। এই সিদ্ধান্ত সকালেই নিয়েছি। এখনও কাউকে বলিনি। কাউকেই না। আপনাকেই প্রথম জানাবো বলে আসলাম।”

খুব ভালো ছাত্রী ছিল সে। কিন্তু গরিব। বাপ-মা পারল না পড়ার খরচ সামলাতে। বলেছিল, “বিয়ের পরও পড়া হবে। ওরা পড়াবে।” ওরা পড়াচ্ছিলও। কিন্তু ছেলেটিকেই পছন্দ হয়েছিল না ওর। সেভেন পাস করা একটি ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া তার। ছেলেটি একটা বাইকে করে মুদির দোকানে দোকানে মাল দিয়ে বেড়াত। এই ছিল ওর ব্যবসা। রোজগার ছিল ভালোই। মেয়েটি দেখতে ছিল সুশ্রী, তুলনায় ছেলেটির কোন শ্রীই ছিল না। ও একবার আমাকে বলেছিল, “স্যার ও আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আমি মনে থেকে ভালোবাসতে পারি না। সামনাসামনি কথা বলতে ইচ্ছে করে না। তবে ফোনে কথা বলার সময় ভালোই লাগে।”

সে বলল, “স্যার, সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব সরিয়ে রেখে আজ কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। আমাকে নতুন করে বাঁচতে হবে।”

রাতে বাড়িতে এলেন মাস্টার সু হাউসের মালিক রবিউল সাহেব। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তাঁর শালাবাবুকে। শালাবাবু বাংলাদেশের মানুষ। সেখানকার এক কলেজের অধ্যাপক। আমার সঙ্গে পরিচয় করাতে নিয়ে এসেছেন। রবিউল সাহেব তাঁর শালাবাবুকে আমার পরিচয় দিতে গিয়ে বললেন, ” হাইস্কুলের মাস্টার মশাই। বীরভূমে বাড়ি। এখানে ভাড়ায় থাকেন। লেখালেখি করেন। বেশ কয়েকটা বই প্রকাশ হয়েছে তাঁর। একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হল, তিনি ভূত-ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন।” প্রথম দিকের কথাগুলো তিনি সাগ্রহেই শুনছিলেন। কিন্তু শেষ বাক্যটি শুনে কেমন যেন অবজ্ঞার ভাব ফুটে উঠল তাঁর মুখাবয়বে। কালক্ষেপন না করে তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁর হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “আমি সাহানুর হোসেন। দয়া করে একটু বলবেন কি ভূত-ভবিষ্যৎ বলে দেয়ার ব্যাপারটা ঠিক কীরকম?” আমি তাঁর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে বললাম, “আমি সাইদুর হক। অনুমান করে কখনও কখনও কোন কথা বলে দিই, আর সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক হয়ে যায়।”

“যেমন?” তিনি বিষয়টা নিয়ে আরো বেশি স্যাঙ্গুইন হতে চান।

আমি বললাম, “ধরুন, আজ সকালে আমার একটা ছাত্র এলো আমার কাছে। আমি তাকে দেখেই বললাম, ফর্ম ফিলাপ করতে এসেছো? সে বলল, হ্যাঁ স্যার। আমি কি করে বলতে পারলাম এটা? একটু ব্যাখ্যা করি। এই সময়ে বিভিন্ন মিশনে ইলেভেনে ভর্তির ফর্ম ফিলাপ চলছে। ভালো ছাত্র-ছাত্রীরা একাধিক মিশনে ভর্তির ফর্ম ফিলাপ করে রাখছে। স্কুলে প্রচুর ছেলে-মেয়ের ফর্ম ফিলাপ, দরখাস্ত লেখা ইত্যাদি কাজ আমি সাগ্রহে করে দিই বলে তারা প্রথমে আমার কাছেই আসে। ক’দিন স্কুল ছুটি। তাই তাদের কেউ কেউ যে বাড়িতে চলে আসবে ফর্ম ফিলাপের জন্য, এটাই স্বাভাবিক।”

এই পর্যন্ত শুনে তিনি বললেন, “বুঝলাম।”

আমি তাঁর প্রত্যয়কে আরো মজবুত করার ইচ্ছায় বললাম, “দুপুরে এক ছাত্রী এলো। সে কিছু বলে উঠার আগেই আমি তাকে বললাম, বিয়ের নেমন্তন্ন করতে এসেছিস? দেখি, কার্ডটা বের কর। সে কার্ড বের করে দিল। মাঝে মাঝেই এরকম একেকজন ছাত্রী এসে নেমন্তন্ন করে যায়। তাদের বয়স, তাদের মনের ভাব দেখে বুঝে নিতে পারি।”

তিনি এবার হাসলেন। বললেন, “ইন্টারেস্টিং!”

আমি বিকেলে আসা ছাত্রীর ডিভোর্সের ব্যাপারটাও বলতে চাইছিলাম। তাল কেটে গেল আমার মেয়ে চায়ের ট্রে হাতে ঘরে প্রবেশ করায়। চা যখন এসেই গেল, এখন আর কোন সিরিয়াস কথা নয়। হালকা গল্প-গুজব। চা খেতে খেতে আমি বলে বসলাম, “আমাকে দেয়ার জন্য আপনার লেখা যে বইটা নিয়ে এসেছেন সেটা কি এখনই বের করবেন!”

আমার কথা শুনে তারা উভয়েই হকচকিয়ে গেলেন। কিছুটা তাচ্ছিল্যতার সাথেই আমার পরিচয় দেয়ার সময় রবিউল সাহেব এই বিষয়টার অবতারণা করেছিলেন। কিন্তু আমি যে এই ব্যাপারে এতটা এডভান্স তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। তিনি বলে উঠলেন, “আচ্ছা বলেন তো বইটা কিসের?”

আমি বললাম, “প্রবন্ধের।”

আমি নিশ্চিত যে তারা এতটাই আশ্চর্য হয়েছেন যে, এর পর আর কোন প্রশ্ন করবেন না। তবু আমার ইচ্ছে হল তাদের আরো খানিকটা চমকে দেয়া দরকার। অধ্যাপক সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললাম, “আপনার যে সন্তানটা সদ্য মারা গেছে তার বয়স কত হয়েছিল?”

তিনি বললেন, “বারো।” বলতে বলতে ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে আমার হাতে দিলেন।

দেখলাম, চমৎকার প্রচ্ছদের প্রায় দেড় শতাধিক পৃষ্ঠার একটা বই।

তিনি বললেন, “পড়বেন। আর সম্ভব হলে একটা রিভিউ করে দেবেন।”

আমি বললাম, “অবশ্যই দেব।” পুনরায় বললাম, “আমি কীভাবে আপনার বই ও সন্তানের মৃত্যুর ব্যাপারে বলে দিতে পারলাম সে বিষয়ে কি একটু ব্যাখ্যা দেব?”

তিনি দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, “তার আর প্রয়োজন নেই। আপনার ইনট্যুশন পাওয়ার যে প্রবল তার প্রতি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে। আজ তাহলে উঠি। আবার হয়ত কোনদিন দেখা হবে।”

আমিও তাদের বিদায় দেয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম।
         *

Tags: Astrology StoryBangla Story
ShareTweet

Related Posts

বিশ্বের সবথেকে রহস্যময় পরিবার

January 20, 2025
0

মুদাসসির নিয়াজ বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের পরিবারের অজানা সত্যকাহিনি, যা জানলে অনেকেই শিউরে উঠবেন। এই ইহুদি পরিবার বহু যুদ্ধের নেপথ্য কুশীলব।...

কবি

December 7, 2024
0

মুহাম্মদ জিকরাউল হক মালদা কলেজ গেট থেকে বেরিয়ে পোস্ট অফিসের দিকে যাচ্ছি। হাত ধরে আছি কবির। আমরা দুজনই মালদা কলেজের...

বাঁশ

December 7, 2024
0

মুহাম্মদ জিকরাউল হক নৌমানকে ফোন লাগালেন তারেক সাহেব। রিং হতে লাগল। নৌমান আয়ুর্বেদিক ডাক্তার। চিকিৎসা এবং ওষুধ দুইই তার কাছে...

Recommended

Manmohan Singh

অরাজনৈতিক মনমোহনের রাজনৈতিক সফর

4 months ago
প্রধানমন্ত্রীর মন্দির উদ্বোধনে আঘাত সংবিধানের ভিত্তিতে, রাজ্যসভায়  মন্তব্য বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের

প্রধানমন্ত্রীর মন্দির উদ্বোধনে আঘাত সংবিধানের ভিত্তিতে, রাজ্যসভায় মন্তব্য বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের

5 months ago
Facebook Twitter Youtube
TDN Bangla

TDN Bangla is an Online bengali news portal, provides voice for poeple by sharing most authentic news in bengali.You can find out news like international, national, state, entertainment, literature etc at TDN Bangla.

Category

  • Uncategorized
  • আন্তর্জাতিক
  • খবর
  • খেলা
  • দেশ
  • ধর্ম ও দর্শন
  • প্রবন্ধ
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • রাজ্য
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • সম্পাদকীয়
  • সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • About Us
  • Privacy Policy
  • Contact Us

© 2024 TDN Bangla | developed with ♥ by GS Kitchen.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
No Result
View All Result
  • হোম
  • রাজ্য
  • দেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • সম্পাদকীয়

© 2024 TDN Bangla | developed with ♥ by GS Kitchen.