শরদিন্দু বিশ্বাস
শকুনিটা বসে আছে মগডালে
পাতার আড়ালে
ছোঁ মেরে, ছিন্তাই করা
শুকনো ডালের সুরম্য প্রাসাদে
শকুনীটা বসে আছে।
আরক্ত চোখ,
তীক্ষ্ণ ধারালো ঠোটে খুবলে খাওয়া
মাংসের দাগ
গড়িয়ে গড়িয়ে নামে রক্তের স্রোত
সাড়াসাড়ি বান
মাঠঘাট থৈথৈ রক্ত প্লাবনে
শকুনিটা বসে আছে
একেবারে মগডালে
চোখের আড়ালে।
পাশেই বারুণী ঘাট
রক্ত ক্লেদ নদী
শকুনির বশংবদ অসংখ্য শকুন
উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে পাখা ঝাপ্টায়
লাশের উল্লাসে গায় শ্মশানের গান
শকুনিটা বসে আছে
লাশের আশায়
একেবারে মগডালে
পাতার আড়ালে।
প্রতিদিন লাশ আসে, লাশ ভাসে জলে
লাশের সিন্ডিকেট চলে শহরে ও গ্রামে
কুশমান্ডি, কামদুনী, কাটোয়া, কাকদ্বীপ
বগটুই, বগুলায় লাশকাটা ঘর
শকুনিটা বসে গোনে
বেওয়ারিশ লাশ
বিষধর বেষ্টিত
উচু মগডালে
গণতন্ত্রের এই ভোটের বাজারে
শকুনিটা বুঝে গেছে ভানুমতী খেল
কুশ্রী, বিশ্রী যত নঙ্গরখানা
উচ্ছিষ্টে ভরে যাক ভাগাড়, ভান্ডার
গাঁজা, ভাঙ ফুর্তির ঢালাও চোলাই
উৎসব, কার্নিভাল আর হাজার মোচ্ছব
শকুনীটা মজা দেখে
নিত্য বাঁকা চোখে
অতি দম্ভে সুরক্ষিত
উচু মগডালে
একদিন কোলকাতা কল্লোলিনী হবে
রাজপথ রাঙা হবে মশাল ক্যানভাসে
সারা রাত গাবে গান রাতজাগা পাখি
মিছিলে মিছিলে হবে সব জানাশোনা
সব দেনাপাওনার হবে অবসান
কড়ায় গণ্ডায় হবে উশুল আদায়
কত ধানে কত চাল হবে সব গোনা
লাশ পেতে খোঁড়া হবে শকুনির ভিটা
এসব গল্প নাকি নিছক কল্পনা
রাতদিন আকিবুকি খ্যাপার খেপামী
একঝাক পায়রা, একঝাক হাঁস
চক্রাবৎ ঘুরে ঘুরে করে আনাগোনা
কালবৈশাখী জানে এসবের খোঁজ
জানিনা ভয়ালবেশে কবে দেবে হানা
দম্ভের মগডালে যত খড়কুটো
কোথায় উড়ায়ে নেবে এক লহমায়
সেইদিন উল্টে যাবে শকুনির পাশা
রাত জাগা হবে শেষ নব উন্মেষে
কালের এটাই খেলা, এটাই নিয়ম
রাজা গেলে রাজা আসে রাঙা প্রত্যুষে।
(গড়িয়া, কোলকাতা-৮৪
০৬/০১/২০২৫)