রাতের আকাশে নক্ষত্রের মেলা, বাতাসে এক ধরনের পবিত্রতার সুবাস- এ যেন স্বর্গের বার্তা নিয়ে আসা এক মহিমান্বিত রাত। ২৭ রমজানের রাতকে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বলে মনে করেন। তবে অনেকে মনে করেন, রমজানের শেষ বিজোড় পাঁচটি রাত্রে শবে কদরের খোঁজ করা উচিৎ। যাইহোক, এ রাত শুধুই একটি রাত নয়; এটি ভাগ্য নির্ধারণের রাত, রহমতের রাত, পুণ্যের রাত।
শবে কদর- একটি নামেই কত গভীর অর্থ। ‘শব’ ফারসি শব্দ, যার অর্থ রাত, আর ‘কদর’ মানে সম্মান, মর্যাদা, ভাগ্য। সুতরাং শবে কদর মানেই মর্যাদার রাত, ভাগ্যের রজনী। পবিত্র কোরআনে ‘আল-কদর’ নামে একটি বিশেষ সুরা রয়েছে, যা এই রাতের গুরুত্বকে প্রকাশ করে।
এই রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারীদের ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ হয় এবং সম্মান বৃদ্ধি করা হয়। হাজার মাসের ইবাদতের যে সওয়াব, এই এক রাতের ইবাদতে তার চেয়েও বেশি পাওয়া যায়—এমনটাই উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কোরআনে।
কিন্তু কখন আসে এই রাত? আলেমদের মতে, ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাত শবে কদর হতে পারে। তবে বেশিরভাগের ধারণা ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই আসে সেই ভাগ্যরজনী। তাই ২৭ রমজানে সরকারি ছুটি রাখা হয়, যেন সবাই ইবাদতে মগ্ন হতে পারেন।
শবে কদরের রাতে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন। এ রাত শুধু নিজের জন্য নয়; এই রাতে মানুষ তার প্রিয়জনের জন্যও মাগফিরাত প্রার্থনা করে। অনেকেই কবরস্থানে গিয়ে প্রিয়জনের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করেন।
রমজানের প্রতিটি রাতই যেন ইবাদতের একেকটি সোপান। দেশের অনেক মসজিদে তারাবিহ নামাজে পুরো কোরআন খতম দেওয়া হয়। এই রাতে মসজিদগুলোতে খতমে তারাবিহর শেষ ধ্বনি যখন আকাশে ভেসে বেড়ায়, তখনই হয়তো কোনো এক প্রার্থনায় লেখা হয় ভাগ্যের নতুন গল্প।
এই রাতে আল্লাহর দরবারে সকল সংকট থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করা হয়। শবে কদরের রহমত আমাদের জীবনে এনে দিক শান্তি, সমৃদ্ধি আর ক্ষমার বার্তা- এই প্রত্যাশায় সমস্ত মুসলিম উম্মাহ রাতভর প্রার্থনায় মগ্ন থাকেন।