লাইলাতুল কদর বা শবে কদর হল ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ও পবিত্রতম রাত। এটি এমন এক রাত, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম, অর্থাৎ প্রায় ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদত করার সওয়াব একজন মুমিন এক রাতেই অর্জন করতে পারে।
আল্লাহ সুবহানাহুতাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন—
“নিশ্চয়ই আমি এটি ( কুরআন) নাজিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত থাকে।”
(সূরা কদর: ১-৫)
লাইলাতুল কদরের ফজিলত
- কুরআন অবতরণের রাত:
মহান আল্লাহ এই রাতে কুরআন নাজিল করেছেন, যা মানবজাতির জন্য পথনির্দেশনা ও মুক্তির আলো। - হাজার মাসের চেয়েও উত্তম:
এ রাতে ইবাদত করলে ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি সওয়াব লাভ করা যায়। - ফেরেশতাদের আগমন:
এ রাতে জিবরাইল (আ.)-সহ অসংখ্য ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং আল্লাহর আদেশে কল্যাণ ও রহমত নিয়ে আসেন। - গুনাহ মাফের সুযোগ:
নবী করিম (সা.) বলেছেন—
যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ইমান ও সওয়াবের আশায় ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”
__ (বুখারি, মুসলিম)
লাইলাতুল কদরে করণীয়
- নফল নামাজ:
বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা। - কুরআন তিলাওয়াত:
আল্লাহর কালাম বেশি বেশি পড়া এবং তার অর্থ অনুধাবন করা। - বিশেষ দোয়া ও ইস্তিগফার:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।
অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতেই ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
(তিরমিজি: ৩৫১৩)
এই দোয়াটি লাইলাতুল কদরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, যা বারবার পড়া উচিত, যেন আল্লাহ আমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেন এবং তাঁর অশেষ রহমত ও বরকত আমাদের ওপর বর্ষিত হয়। - জিকির ও দরুদ পাঠ:
আল্লাহর গুণবাচক নাম স্মরণ করা এবং নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা। - দান-সদকা:
দুঃস্থ ও অসহায়দের সাহায্য করা, কারণ এ রাতে করা সদকা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
পরিশেষে বলা যায়, লাইলাতুল কদর হলো এক অপরিসীম রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রাত। তাই আমাদের উচিত এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা, আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং জান্নাতের প্রার্থনা করা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরের ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন!