নিজস্ব প্রতিবেদন, টিডিএন বাংলা, সিতাপুর, হুগলি:
হুগলির আল ফারাহ মিশন পরিচালিত দারুন্নেদা সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসা যেন সাফল্যের আরেক নাম। একের পর এক কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল দিয়ে মিশন ইতিমধ্যেই শিক্ষাজগতের মানচিত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তবে এবারের অর্জন যেন সেই ইতিহাসেও যোগ করল এক নতুন মহিমা—প্রথমবার ফাজিল (উচ্চমাধ্যমিক সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়েই রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র বাকিবিল্লাহ গায়েন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক দরিদ্র ঘরের ছেলে বাকিবিল্লাহ, যার বাবা একজন মসজিদের ইমাম—সাধারণ জীবনযাপনের মধ্যেও অসাধারণ এক স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা তার। অভাব-অনটনের মধ্যেও তার মনন, অধ্যবসায় এবং একাগ্রতায় গড়ে উঠেছে এই সাফল্যের সোপান। আল ফারাহ মিশন থেকে আগে সে আলিম পরীক্ষাতেও উজ্জ্বল ফল করেছিল। এবার সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ফাজিল পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে তাক লাগিয়ে দিল গোটা রাজ্যকে।
প্রধান শিক্ষক জানান, “এই প্রতিষ্ঠান পীর আবুল ফারাহ সিদ্দিকী (রহ.)-এর স্বপ্ন। তাঁর আদর্শ মেনেই আমরা চেষ্টা করি সর্বোচ্চ মানের শিক্ষা দিতে। বাকিবিল্লাহর সাফল্য আমাদের সেই শ্রম ও আত্মত্যাগেরই প্রতিদান।”
মিশনের সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা তামিমউদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, “২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ফাজিল বিভাগ চালুর সময় নানা অনিশ্চয়তা ছিল। অনেকেই দ্বিধায় ছিলেন। কিন্তু যারা শুরু থেকে আস্থা রেখেছেন, তাদেরই হাতে আজকের এই সাফল্যের আলো। এই সূচনাই একদিন ইতিহাস হয়ে থাকবে।”
বাকিবিল্লাহ নিজে খুব সংযত ভাষায় জানায়, “নিয়মিত পড়াশোনা করেছি, শিক্ষকদের নির্দেশ মেনেছি, আর সবসময় নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকেছি। ভবিষ্যতে আরবি সাহিত্য নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার ইচ্ছা আছে।”
অন্যদিকে, এ বছর আলিম পরীক্ষাতেও আল ফারাহ মিশনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে—১০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জন প্রথম বিভাগ এবং ২ জন দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই অভাবনীয় ফলাফলে শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরা ভীষণ আনন্দিত ও গর্বিত।
বাকিবিল্লাহ গায়েনের এই কৃতিত্ব শুধু তার একক জয় নয়—এ যেন সমাজের প্রান্তিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সামনে এক আশার প্রদীপ। তার সাফল্য প্রমাণ করে দিয়েছে—মননশীল শিক্ষাব্যবস্থা, আদর্শ দ্বীনি পরিবেশ এবং একাগ্র প্রচেষ্টাই পারে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে সর্বোচ্চ উচ্চতায়। এ কেবল শুরু, বাকিটা ইতিহাস লিখবে