একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন থেকে অস্ত্র আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায়, মার্কিন অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কিনা বিশ্বব্যাপী মোট অস্ত্র রপ্তানির ৪৩ শতাংশ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI) সিপ্রি এর একটি গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অস্ত্র শিল্পে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সংবাদ সংস্থা ইসনার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে কিয়েভ বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট ঘোষণা করেছে যে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মার্কিন অস্ত্র রপ্তানি আগের পাঁচ বছরের তুলনায় এক পঞ্চমাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মোট বিশ্বব্যাপী অস্ত্র রপ্তানির ৪৩ শতাংশ।
সিপ্রি -এর অস্ত্র স্থানান্তর কর্মসূচির পরিচালক ম্যাথিউ জর্জ বলেছেন “অস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনন্য বা শক্তিশালী একটি অবস্থানে রয়েছে”। বিশ্বব্যাপী অস্ত্র রপ্তানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪৩ শতাংশ যা কিনা ফ্রান্সের চেয়ে চারগুণ বেশি। এ দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ফ্রান্স।
বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা ঠিকাদার: আমেরিকান কোম্পানি লকহিড
আমেরিকান কোম্পানি লকহিড মার্টিন বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা ঠিকাদার কোম্পানি। কোম্পানিটি ২০২২ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে ৪৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্ডার পেয়েছে, যা ২০২২ সালে তার মোট আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ। পঞ্চম প্রজন্মের F-35 যুদ্ধবিমান তৈরিকারী এই কোম্পানিটি অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন বিমান বাহিনীর ভিত্তি হিসেবে তার অবস্থান বজায় রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।
মার্কিন কোম্পানি রেথিয়ন
RTX কর্পোরেশন যা Raytheon (রেথিয়ন) নামেও পরিচিত, ২০২২ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে ২৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যে অস্ত্র নির্মাণ অর্ডার পেয়েছে। কোম্পানিটি রাজস্বের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা কোম্পানি, যদিও এর প্রতিরক্ষা রাজস্ব কোম্পানির মোট রাজস্বের মাত্র ৫৯ শতাংশ। কোম্পানিটি চলমান সংঘাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো, মার্কিন অস্ত্র চালানের সবচেয়ে বেশি অংশ পশ্চিম এশিয়ার পরিবর্তে ইউরোপে গেছে, যদিও সৌদি আরব এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্রের বৃহত্তম আমদানিকারক।
একসময় প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত রাশিয়াও ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে এই খাতে তাদের রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ ইউক্রেন
সিপ্রি তাদের প্রতিবেদনে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইউক্রেনকে বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইউক্রেনের অস্ত্র আমদানির পরিমাণ পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিপ্রি তাদের গবেষণায় বলেছে যে, রাশিয়ানফোবিয়া অজুহাতে ইউরোপীয় দেশগুলোও পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের তুলনায় একই পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের অস্ত্র আমদানি বাড়িয়েছে।
এদিকে, স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি) আর্মস ট্রান্সফার প্রোগ্রামের পরিচালক ম্যাথিউ জর্জ বলেছেন যে সামরিক অস্ত্র আমদানির উপর নির্ভরতা কমাতে এবং ইউরোপের অস্ত্র শিল্পকে শক্তিশালী করার জন্য জনসাধারণের আহ্বান সত্ত্বেও, ইউরোপের নেতারা মার্কিন সামরিক অস্ত্র কেনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সূত্র: পার্স টুডে
সূত্র: পার্স টুডে