ইরানি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এই বিস্ফোরণের পেছনে ইসরায়েলের বিমান হামলার কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ইরানের বিরুদ্ধে “বৃহৎ আকারের হামলা” চালাচ্ছে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এই হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা আল জাজিরাকে জানান, হামলার আগে ইসরায়েল ওয়াশিংটনকে বিষয়টি অবহিত করে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, এই অভিযান ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সামরিক অবকাঠামো ধ্বংসের লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, “এই অভিযান চলবে যতদিন প্রয়োজন, যতক্ষণ না আমাদের লক্ষ্য সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়।”
ইরান বিষয়ক বিশ্লেষক ত্রিতা পারসি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসরায়েলের এই হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার যেকোনো সম্ভাব্য আলোচনা অনিশ্চয়তায় পড়েছে। তিনি বলেন, “এই রবিবার কোনো আলোচনা হচ্ছে না। এমনকি আলোচনা আদৌ আবার শুরু হবে কিনা, তাও স্পষ্ট নয়।”
তার আশঙ্কা, এর জের ধরে জাতিসংঘে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হতে পারে এবং তেহরান ‘পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি’ থেকেও সরে আসতে পারে। এতে করে আরও বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে জানান, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় অংশ নেয়নি। তিনি বলেন, “আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইসরায়েল আমাদের জানিয়েছে, তাদের আত্মরক্ষার জন্য তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে।”
তিনি ইরানকে সতর্ক করে বলেন, “ইরান যেন কোনোভাবেই মার্কিন স্বার্থ বা কর্মীদের লক্ষ্য না করে।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, তারা ডজনখানেক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। সেনাবাহিনী একে “সুনির্দিষ্ট ও গোয়েন্দা-ভিত্তিক পূর্ব-প্রতিরোধমূলক হামলা” বলে উল্লেখ করেছে।
এদিকে হামলার পর ইসরায়েলজুড়ে জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, দেশব্যাপী স্কুল, অফিস এবং সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র জরুরি সেবা চালু থাকবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের প্রতিরক্ষা নীতিতে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন এনে “সম্পূর্ণ কার্যক্রম স্তর থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম স্তরে” নেমে আসা হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে এই উত্তেজনা ইরান ও ইসরায়েলের দ্বন্দ্বকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। এর প্রভাব শুধু ওই দুই দেশ নয়, গোটা অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও পড়তে পারে বলে ধারণা। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেলে বড় ধরনের যুদ্ধ বা আন্তর্জাতিক সংকট দেখা দিতে পারে।