ফিলিস্তিনী সমস্যা নিয়ে তৈরি ছবি ‘No Other Land’ ২০২৫ সালের অস্কারে সেরা প্রামাণ্যচিত্র বিভাগের পুরস্কার অর্জন করেছে।
তথ্যচিত্রটি চারজন ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা যৌথভাবে এটি নির্মাণ করেছেন। এরমধ্যে দিয়ে বাসেল আদ্রা, হামদান বল্লাল, ইউভাল আব্রাহাম, রাচেল সোর পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ করেছেন।
চলচ্চিত্রটি তরুণ ফিলিস্তিনি বাসেল আদরার বাস্তব জীবনের কাহিনি তুলে ধরে। আদরা, যিনি ছবির অন্যতম পরিচালক, দখলকৃত পশ্চিম তীরের মাসাফের ইয়াত্তা অঞ্চলে তার শহরের ধ্বংসযজ্ঞের দৃশ্য ধারণ করেন। এই ধ্বংসযজ্ঞের জন্য ইসরায়েলি বসতকারীদের দায়ী করা হয়।
ছবিটি শুধু আদরার লড়াইকে নয়, তার পরিবারের জীবন ও এক ইসরায়েলি সাংবাদিক যুবাল আব্রাহামের সঙ্গে গড়ে ওঠা বন্ধুত্বের গল্পও বলে। আব্রাহাম এই সম্পর্কের মাধ্যমে বুঝতে পারেন, আদরা কীভাবে বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
No Other Land ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রোতাদের পুরস্কার ও সেরা প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার জিতেছিল। এছাড়া এটি নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিকস সার্কেল থেকে সেরা নন-ফিকশন চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছিল।
তবে, কোনো পরিবেশক এই ছবিটি প্রদর্শনের উদ্যোগ না নেওয়ায় নির্মাতারা নভেম্বর ২০২৪-এ নিউইয়র্কের লিঙ্কন সেন্টারে এক সপ্তাহের জন্য এটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন, যাতে এটি অস্কারের জন্য যোগ্যতা পায়।
পুরস্কার গ্রহণকালে পরিচালক বাসেল আদরা বলেন,”প্রায় দুই মাস আগে আমি বাবা হয়েছি, এবং আমার কন্যার জন্য আমার একটাই আশা— তাকে যেন আমার মতো জীবনযাপন করতে না হয়। আমি প্রতিদিন আতঙ্কের মধ্যে থাকি, কখন আমার বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে, কখন আমাদের উচ্ছেদ করা হবে। আমাদের সম্প্রদায় মাসাফের ইয়াত্তা প্রতিদিন এই দুঃসহ বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “No Other Land সেই নির্মম বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে, যা আমরা যুগের পর যুগ ধরে সহ্য করে আসছি। আমরা বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানাই—এই অন্যায় বন্ধ করুন, ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূল রোধ করুন।”
অন্য পরিচালক যুবাল আব্রাহাম বলেন,
“আমরা এই চলচ্চিত্রটি একসঙ্গে তৈরি করেছি—ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা মিলে। কারণ একসঙ্গে আমাদের কণ্ঠ আরও শক্তিশালী। গাজার জনগণের ভয়াবহ ধ্বংস অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে, ৭ অক্টোবরের ঘটনায় অপহৃত ইসরায়েলিদেরও মুক্ত করতে হবে।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিরও সমালোচনা করেন, যা ইসরায়েলকে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “এই দেশের পররাষ্ট্রনীতি শান্তির পথকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমরা একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। যদি বাসেলের জনগণ মুক্ত না হয়, তবে আমার জনগণও নিরাপদ হতে পারবে না। এখনও সময় আছ-জীবনের জন্য, মানবতার জন্য কাজ করুন।”
অস্কারের মঞ্চে এই বক্তব্য দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং হলভর্তি দর্শক করতালি দিয়ে তাদের সমর্থন জানান।