ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ও সাময়িক যুদ্ধবিরতি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার হয়েছে। সোমবার (২৪ মার্চ) সৌদি আরবের রিয়াদে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন। আলোচনায় জ্বালানি স্থাপনায় হামলা বন্ধ ও কৃষ্ণসাগরে নৌচলাচল স্বাভাবিক রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উঠে আসে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, চুক্তি না হলেও রাশিয়াকে ‘অনেক কিছু’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের শান্তির আহ্বান, পুতিনের কৌশল
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইউক্রেনে ‘মৃত্যুর মিছিল’ বন্ধে যত দ্রুত সম্ভব উদ্যোগ নিতে চান। তবে ক্রেমলিনের জন্য এটি শুধু যুদ্ধবিরতির আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং মস্কো ওয়াশিংটনের কাছ থেকে আরও সুবিধা পেতে চায়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দৃষ্টিতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আশীর্বাদ।
রিয়াদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এন্ড্রু পিক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাইকেল অ্যান্টন। রাশিয়ার পক্ষে ছিলেন গ্রিগরি কারাসিন, যিনি বর্তমানে রুশ উচ্চকক্ষের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির প্রধান। কারাসিন রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফেক্সকে জানান, তিন ঘণ্টার আলোচনা ‘গঠনমূলক’ হয়েছে এবং দু’দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন সমস্যার দিক উঠে এসেছে।
যদিও রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা এগোচ্ছে, ইউরোপ এ নিয়ে সন্দিহান। তারা রাশিয়ার সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এবং মনে করছে, পুতিন তার মূল দাবিতে অটল থাকবেন। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেন যেন ন্যাটো থেকে দূরে থাকে। সম্প্রতি পুতিন আবারও বলেছেন, তিনি শান্তি আলোচনায় প্রস্তুত, তবে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত হওয়ার উচ্চাশা ছাড়তে হবে এবং দখলকৃত অঞ্চলগুলোর দাবিও ত্যাগ করতে হবে।
পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেই শান্তি আলোচনা
শান্তি আলোচনার মধ্যেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রয়েছে। এসব হামলায় জ্বালানি স্থাপনাগুলো প্রায়ই লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে। সৌদি আরবের বৈঠকে এই হামলা বন্ধের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
ট্রাম্পের আশ্বাস এবং রাশিয়ার কৌশলগত অবস্থান বিশ্ব কূটনীতিতে নতুন মোড় আনবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠার এ প্রয়াসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন রিয়াদে হওয়া এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার দিকে।