মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে দেশের অন্যতম বিতর্কিত ও গুরুত্বপূর্ণ ওয়াকফ সংশোধনী আইন ২০২৫-এর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই ও বিচারপতি এজি মসিহ-এর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলে।
আবেদনকারীদের পক্ষে হাজির ছিলেন দেশের বর্ষীয়ান আইনজীবী কপিল সিব্বাল, অভিষেক মনু সিংভি, হুজেফা আহমদি, সিইউ সিং এবং রাজীব ধাওয়ান।
শুনানির শুরুতেই কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে আবেদন জানান, আগের শুনানিতে যে তিনটি ধারা নিয়ে আপত্তি উঠেছিল, কেবল সেগুলির উপরেই আলোচনা হোক। তবে বিরোধীপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়ে দেন, পুরো আইনটি সংবিধানবিরোধী- টুকরো আলোচনা যথার্থ নয়, সম্পূর্ণ আইন নিয়ে বিচার হোক।
আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেন, “ওয়াকফ সম্পত্তি ধীরে ধীরে সরকার কবজা করে নেবে, একমাত্র সেই উদ্দেশ্যেই এই আইন সংশোধন করা হয়েছে। এই আইন মৌলিক অধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতার উপর ভয়ানক আঘাত। রেজিস্ট্রি না থাকলে সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া যাবে, নামাজ বন্ধ হয়ে যাবে প্রশাসনের নির্দেশে, এমনকি মোতাওয়াল্লীদের জেল-জরিমানাও হতে পারে।”
আইনজীবী হুজেফা আহমদি বলেন, “আইনে বলা হয়েছে, ওয়াকফকারীকে পাঁচ বছরের অনুশীলনকারী মুসলিম হতে হবে। কিন্তু অন্য ধর্মে এমন কিছু বলা হয়নি। কে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, কে রোজা রাখে, কারা মদ খায় না- এই বিচার করবে কে?” তিনি বলেন, এই আইন কার্যকর হলে বহু প্রাচীন ওয়াকফ সম্পত্তি রাতারাতি অদৃশ্য হয়ে যাবে।
অভিষেক মনু সিংভি বলেন, “এএসআই-এর হেরিটেজ বোর্ড লাগালেই ওয়াকফ বোর্ডের সাইনবোর্ড সরে যাবে। এরপর সেই সম্পত্তি সরাসরি সরকারের দখলে চলে যাবে। ২০১৩ সাল থেকে ডিজিটালাইজেশন শুরু হলেও সংসদে এই আইন নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়নি। উদ্দেশ্য ছিল-মূল্যবান ওয়াকফ সম্পত্তি দখল।”
আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান বলেন, “সংবিধানের ২৯ ধারা আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি রক্ষার অধিকার দেয়। ব্রিটিশরাও ওয়াকফের সংজ্ঞা বদলায়নি। তাহলে এখন কেন এই পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ল?”
এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে কয়েকটি রাজ্য সরকার ও একটি অমুসলিম সংগঠন। অন্যদিকে, বিজেপি শাসিত ছয়টি রাজ্য আদালতে আইনটির পক্ষে লড়ছে।
আগের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চে থাকা মামলাটি এখন নতুন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে স্থানান্তরিত হয়েছে। এদিন শুনানি চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। পরবর্তী শুনানি হবে আজ বুধবার।
আদালতে সরকার জানিয়েছে, তারা আপাতত কোনও ওয়াকফ সম্পত্তির তকমা সরাবে না, বোর্ডে অমুসলিম সদস্য নিয়োগ করবে না এবং ওয়াকফ সম্পত্তিকে সরকারি সম্পত্তি দাবি করবে না। এই তিনটি বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে স্থগিতাদেশ বহাল রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট পুরো আইনটি বাতিল করবে, না কি নির্দিষ্ট কয়েকটি ধারা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে— তার দিকেই নজর গোটা দেশের।