আজিজুল হক, টিডিএন বাংলা:
এক জীবন-বোধের দার্শনিক বলে গেছেন- ‘কাজ নাই কর্ম নাই অনবরত শুয়ে বসে থাকলে মাথায় হাজার তরল চিন্তা আসে।
তা সামলানো বড় কঠিন। যার মাথায় একবার তরল চিন্তা ঢুকেছে, তার আর রক্ষা নেই।’
জীবনবাদী কবি এম .সাহাউদ্দিন পিয়াদা তরল চিন্তাকে গরল না ভেবে আজীবন সাথে নিয়ে কাজ করে গিয়েছেন। এই পৃথিবীর মাটি ও মানুষের নিবিঢ় সান্নিধ্যে জীবনের সিংহভাগ কাটিয়েছেন । হয়েছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তিন তিনবার হয়েছেন পঞ্চায়েতের প্রধান।
স্বচ্ছতা ও কর্ম-দক্ষতার গুনে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হন। এই গৌরবোজ্জ্বল পুরস্কার প্রাপ্তির আত্মতৃপ্তিতে তিনি থেমে থাকেননি। মানুষের কল্যাণে কেটে গেছে তাঁর জীবন -যৌবন।রাজনীতি থেকে অবসর নিলেও কাব্য -কবিতা- লেখনীতে ,সৃষ্টিশীল নানান রচনায় সচল আছেন।
সুন্দরবনের অন্যতম প্রবেশ দ্বার কাকদ্বীপে অবস্থানকারী কবি নীরবে লিখে চলেছেন। নিত্য দিন যা দেখেন সেই চালচিত্র উঠে আসে তাঁর কবিতায়। ইন্টারনেট জগতের দৌলতে ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং উভয় বাংলার বড় বড় সংকলন গ্রন্থে তাঁর সৃষ্টিশীল নানান কবিতা ও নানান রচনা দেখতে পাই। ইতিপূর্বে বড় ভলিয়্যুমের তাঁর দু’খানা কাব্যগ্রন্থ বাংলাদেশের গাঙচিল প্রকাশন থেকে প্রকাশ পেয়েছে। সেই প্রকাশনা কাজে সহযোগিতা করতে পেরে নিজে তৃপ্তি পেয়েছি।
আবার তাঁর এক কাব্যগ্রন্থ কলকাতা থেকে প্রকাশ পেতে চলেছে জেনে আনন্দে মন ভরে উঠেছে।
কবি এম .সাহাউদ্দিন পিয়াদার কবিতায় সাবলীলভাবে উঠে আসে দেশবিদেশ,প্রকৃতি ও নির্যাতিত জনতার কথা। এই প্রসঙ্গে ফাদার পল দ্যতিয়ানের উক্তিটি স্মরণ করার। তিনি বলেন-
‘সাহিত্য হবে তখন যখন ভেতরে গান থাকবে।’
তাঁর সৃষ্টিশীল কবিতায় সেই গানের অনুরণন ধ্বনিত হয়।
কবি মোহিতলাল মজুমদার কবিতা পড়াতে গিয়ে বলতেন,” কবিকে শব্দ সংগ্রহ করতে হয় তাঁর বিশ্বাসের কাছ থেকে, বর্ণিত বিষয়ের স্বভাবের কাছ থেকে এবং বিভিন্ন চরিত্রের আচরণ থেকে।”
এম.সাহাউদ্দিন পিয়াদা সমাজের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ফলে সমাজের নানা দিক তাঁর চোখের সামনে ফুটে ওঠে। দেখেছেন জনজীবনের নানা সমস্যা, এড়িয়ে না গিয়ে সমাধানের পথে হেঁটেছেন।
প্রকৃত অর্থে তিনি একজন মানবতাবাদী ও গনমানুষের কবি। তাইতো স্পষ্ট উচ্চারণ হয় তাঁর কবিতায় । সমাজের অনাচার ও অসভ্যতা দেখলে শক্ত কথা উচ্চারণ করতে থেমে থাকেন না। ২০২৪ সালের শেষের দিকে মহানগরী কলকাতার এক সরকারি হসপিটালে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে পাষন্ডদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে নৃশংসভাবে খুন হন উদীয়মান চিকিৎসক তিলোত্তমা।
এই বর্বরতার চিত্র খুব সহজভাবে কবি এম.সাহাউদ্দিন পিয়াদা ‘তিলোত্তমা ‘কবিতাতে চিত্রিত করেছেন। তিলোত্তমাকে ধর্ষণ ও খুন করার ফলে দেশের সম্মান ভূলুন্ঠিত। তাই তো কবি কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, – ‘এদেশে বারে বারে কেন এমন বর্বরতা হয় তিলোত্তমার আর্তনাদে বিশ্ব হয়েছে ব্যঙ্ময়। বীভৎস ঘটনার প্রতিবাদে নেমেছে মানুষের ঢল অশ্রু হয়েছে অগ্নি প্রতিজ্ঞায় অবিচল। তিলোত্তমার সকল স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিল যারা বিচার কি হবে না ,পার পেয়ে যাবে তারা?’
লালন কবিতায় কবি লালনের মত উদার মুক্তমনা হবার আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁর ‘শাহী মঞ্জিল’ বাসভবনে কবিতা পাঠের আসর অনুষ্ঠিত হয়। সেই সাহিত্য সভায় এসেছিলেন যশস্বী কবিরা। এসেছিলেন ওপার বাংলা থেকে দুই প্রখ্যাত কবি ও ইতিহাসবিদ। সবাইকে তিনি ফুল-মালায় বরণ করে মানীদের দেন মান। করেন উষ্ণ আপ্যায়ন। দেন সবাইকে পাঠের সুযোগ দেন। সকলে কথা ও কবিতায় সম্প্রদায়িক ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে লালনের মত উদারতার আদর্শ হয়ে ওঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়।
কবি তাই দৃপ্তকন্ঠ্যে উচ্চারণ করেন,
‘ লালন মানে উদার আকাশ
লালন মানে বিবাগী বাতাস
ভালোবাসার গান।
………………………
যে দেখে মুসলিম অথবা বৈষ্ণব রূপে তাকে
সে দেখায় একপেশে দেখা হয়ে থাকে।
এসবের ঊর্ধ্বে লালন সাঁই। হাঁড়ি,ডোম,চামার,বোষ্টম সমাজে যারা অক্ষম অধম তারা লালনের সুহৃদ ভাই।
প্রকৃতিপ্রেমী কবিতার ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ননা। ভারসাম্য রক্ষা করছে পাহাড়,নদী ও গাছ গাছালি। বৃক্ষ নিধন দেখে তিনি শিউরে ওঠেন। ব্যবস্থাপত্র উঠে আসে তাঁর কলমে ।
তাঁর বলিষ্ঠ উচ্চারণ- ‘সভ্যতার প্রয়োজনে করছো বৃক্ষ নিধন কমছে অক্সিজেন, বাড়ছে কার্বন। বনদেবতার মাথায় বানিয়ে টাক
হায় সভ্যতা একাই বেঁচে থাক!’ বর্তমানে প্রকাশ পেতে চলেছে ‘সোনালী ঈগল’ নামক কাব্যগ্রন্থ।এতে টক, মিষ্টি ঝাল, তেতো প্রায় চল্লিশটি কবিতা।
(লেখক: ইতিহাসবিশারদ, পত্রিকা সম্পাদক।
ইমেল: Banglarrenesan@gmail.com)