হায়দ্রাবাদের ঐতিহাসিক মক্কা মসজিদ, যা ১৬শ শতাব্দী থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, এখানে রমজান মাসে এক বিশেষ প্রাণচাঞ্চল্য লাভ তৈরি হয়। প্রতিদিন হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষ এখানে সমবেত হন ‘তারাবিহ’ নামাজ আদায় ও ঐতিহ্যবাহী সম্মিলিত ইফতারে অংশ নিতে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই মহান প্রথা শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানই নয়, বরং এটি এক অবিচ্ছেদ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে হায়দ্রাবাদের মক্কা মসজিদে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়, যাতে মুসল্লিদের জন্য একটি আরামদায়ক ও পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। তেলেঙ্গানা রাজ্যের সংখ্যালঘু কল্যাণ বিভাগ মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্যোগ হলো—
১. তীব্র গরম মোকাবিলায় শীতলকরণ ব্যবস্থা
২.নতুন কার্পেট সংযোজন ও সংস্কার
৩.ওজুখানা ও মসজিদ প্রাঙ্গণের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ
৪.দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা ও নতুন তাঁবু (শামিয়ানা) স্থাপন
এসব উদ্যোগ মসজিদের পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিক পরিবেশ আরও সুসংহত করে, যা রমজানের বিশেষ মুহূর্তগুলিকে স্মরণীয় করে তোলে।
অন্যদিকে মক্কা মসজিদে ইফতার শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি ভ্রাতৃত্ব, মানবতা ও সহানুভূতির এক অনন্য উদাহরণ। ঐতিহ্য অনুযায়ী, মসজিদ কর্তৃপক্ষ খেজুর ও ডালের স্যুপ পরিবেশন করে, যা ইফতারের অন্যতম প্রধান উপকরণ। তবে বাজেটের সীমাবদ্ধতার কারণে ইফতারের আয়োজন তুলনামূলকভাবে সীমিত। তাই মুসল্লিরা নিজেরা বিভিন্ন খাবার নিয়ে আসেন এবং তা অন্যদের সাথে ভাগ করে নেন।
এই ভাগাভাগির সৌন্দর্য মক্কা মসজিদের ইফতারকে শুধু একটি সাধারণ খাবার নয়, বরং এক বৃহৎ পারিবারিক পরিবেশে পরিণত করে। এটি এমন এক ঐতিহ্য, যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে একত্রিত করে এবং ভ্রাতৃত্বের এক সুন্দর চিত্র তুলে ধরে।
রমজানের সময় মক্কা মসজিদ কেবল একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং এটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক মিলনস্থল। সন্ধ্যায় কোরআন তেলাওয়াত, সম্মিলিত নামাজ ও ইফতারের মাধ্যমে মানুষ একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হন। এতে ধর্মীয় নিষ্ঠা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি সামাজিক বন্ধনও দৃঢ় হয়।
এই চিরন্তন ইফতার ঐতিহ্য হায়দ্রাবাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সম্প্রীতির প্রতীক, যেখানে ইতিহাস, ধর্ম ও সম্প্রদায় একসঙ্গে মিলিত হয় মানবতার এক অনন্য উৎসবে। যুগ যুগ ধরে চলা এই প্রথা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।