মহাকুম্ভ ঘিরে কিছুদিন আগেই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একের পর এক তাবু পুড়ে যায়।
মৌনী অমাবস্যায় উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলায় বড় রকম দূর্ঘটনা ঘটে বুধবার ভোরে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী পদপিষ্টের ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েক শো মানুষ। পাশাপাশি ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা সরকারিভাবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপাতত শাহি স্নান বন্ধ করা হয়েছে। চারিদিকে চিৎকার, হাহাকার। কেউ বোন, কেউ পুত্র, কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ আবার বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছেন। ঘটনার পর মোতায়েন করা হয়েছে আরো বিপুল পুলিস বাহিনী। আহতদের সকলকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর।
হিন্দুদের বিশ্বাস গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীয় সঙ্গমস্থলে মহাকুম্ভে স্নান করলে সব পাপ ধুয়ে মুছে যায়। তাই সঙ্গম নোজেই ভিড় জমিয়েছিলেন বহু হিন্দু।
১৯৫৪ সালে পদপিষ্টের ঘটনায় প্রাণ হারান কয়েকশো মানুষ। কিন্তু এবার মহাকুম্ভে কীভাবে এতবড় দুর্ঘটনা ঘটলো?
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বিবেক মিশ্র নামে একজন বলেন, ‘‘রাত আড়াইটে নাগাদ প্রচুর মানুষ সঙ্গমের তীরে এসে পৌঁছেছিলেন। অনেকেই মাথায় ভারী মালপত্র নিয়ে এসেছিলেন স্নান করতে। নদীর তীরে লোহার বেশ কিছু ডাস্টবিন রাখা ছিল, যা ভিড়ের মধ্যে অনেকেরই দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। তাতেই ধাক্কা খেয়ে বহু পুণ্যার্থী মাটিতে পড়ে যান। মাথায় থাকা মালপত্রও ছিটকে পড়ে। মালপত্র এবং মাটিতে পড়ে যাওয়া পুণ্যার্থীদের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আরও অনেকে পড়ে যান। তাঁদের মাড়িয়েই এগোতে থাকেন অন্যেরা। চোখের সামনে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।’’
ফতেহপুরের বাসিন্দা রাম সিংহ নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে মিডিয়াকে বলেন, ‘কেউ এগিয়ে আসেননি। ভিড়ের চাপে বন্ধুরাও ছিটকে যান। কোথায় যাবেন, কী করবেন— কিছুই বুঝতে উঠতে পারছিলেন না। কোনওক্রমে আহত অবস্থায় ভিড়ের সঙ্গে তাল রেখে বাইরে যাওয়ার গেটের কাছে পৌঁছন। তার পর এক পুলিশকর্মীর সহায়তায় অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে যান রাম।
খবরে প্রকাশ, পদপিষ্টের ঘটনার পরই সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদীর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও যোগীকে ফোন করে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন বলে খবর। রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকাজে রয়েছে। পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয়, সেই কারণে ঘটনাস্থলে র্যাফ নামানো হয়েছে। একই সঙ্গে পৌঁছেছে এনএসজি-র দলও।
তবে বিরোধীরা সরকারের সমালোচনায করতে ছাড়েননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে লেখেন, ‘অর্ধেক, অসম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা, ভিআইপি-দের অগ্রাধিকার দেওয়া, পর্যাপ্ত ব্যাপস্থাপনার পরিবর্তে আত্মপ্রচারে জোর দেওয়াই এই দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণ। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচের পরও এমন ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট নিন্দনীয়। এখনও শাহি স্নান বাকি। কেন্দ্র এবং রাজ্যের এবার অন্তত সচেতন হওয়া উচিত। এমন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্য চেষ্টা করতে হবে। পুণ্যার্থীদের, থাকা, খাওয়া, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে’।
উল্লেখ্য , এবারের মহাকুম্ভের আয়োজন করতে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ বলে জানায় উত্তরপ্রদেশ সরকার। আর এটা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস সভাপতি।
অন্যদিকে সমাজবাদী পার্টির নেতা সাংসদ অখিলেশ যাদব সোস্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘মহাকুম্ভে যে সাধু-সন্ত এবং পুণ্যার্থীরা আসেন, তাঁদের আস্থা ফেরাতে হলে অবিলম্বে সেনার হাতে মনেলাপ্রাঙ্গনের দায়িত্ব সঁপে দেওয়া উচিত। বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা বলে প্রচার করা হয়েছিল বিস্তর। সকলের সামনে আসল সত্য চলে এল। যাঁরা মিথ্যে দাবি করছিলেন, মিথ্যে প্রচার করছিলেন, মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনার দায় নিতে হবে তাঁদের। পদত্যাগ করতে হবে’।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোস্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘মহাকুম্ভে মর্মান্তিক পদপিষ্টের ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। যে ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে (উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে অবশ্য হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি)। মৃত পুণ্যার্থীদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। গঙ্গাসাগর মেলা থেকে আমি শিখেছি যে বিশাল জনসমাবেশে যেখানে পুণ্যার্থীদের জীবন জড়িত থাকে, সেখানে পরিকল্পনা এবং পরিষেবা সর্বোচ্চ হতে হবে। মৃতদের আত্মার জন্য শান্তিকামনা করছি।’
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হিন্দু পুণ্যার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আপনারা মা গঙ্গার যে ঘাটের কাছে আছেন, সেখানেই স্নান করে নিন। সংগমের নাকের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। আপনারা সকলে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলুন। যা পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তাতে সহযোগিতা করুন। সংগমের প্রতিটি ঘাটে শান্তিপূর্ণভাবে স্নান-পর্ব চলছে। কোনও গুজবে একদম কান দেবেন না।’