তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির হিন্দু মুসলমান মেরুকরণের ফলে ওবিসি সংরক্ষণ এখন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। বুধবার এক প্রেস বিবৃতিতে দলটি জানিয়েছে, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের অধীন জাতীয় অনগ্রসর শ্রেণী কমিশন গত মাসে ৩৫টি পিছড়ে বর্গের গোষ্ঠীকে বাদ দিয়েছে। এক চিঠিতে রাজ্যগুলিকেও এই মর্মে পদক্ষেপও নিতে বলেছে। ইতিমধ্যে আমাদের রাজ্যে হাইকোর্টের রায়ে লক্ষাধিক ওবিসি শংসাপত্র বাতিল হয়ে গেছে। এই মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে গেছে। কিন্তু মামলার তারিখ পিছিয়েই যাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির হিন্দু মুসলমান মেরুকরণের ফলে নিম্নবর্ণের অনগ্রসর মুসলমান জনগোষ্ঠীর ওবিসি সংরক্ষণ এখন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন। ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর তারা বেশকিছু জাতিকে সংরক্ষণের তালিকায় এনেছিল, কিন্তু সংরক্ষণের পরিধি এক শতাংশ ও বাড়াইনি। আবার সঠিক ভাবে ১৯৯৩ সালের ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস অ্যাক্ট না মেনেই সেটা করা হয়েছিল। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। রাজ্য সরকার এই বিষয় নিয়ে সবসময় একটা চেপে রাখার কৌশল অবলম্বন করে গেছে। আজ পর্যন্ত কোন সরকারই রাজ্যে ওবিসি নিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোন কমিটি বা কমিশন তৈরি করে সমীক্ষার কাজ করেনি।’
বিবৃতিতে আইএসএফ লিখেছে,’ওবিসি সংরক্ষণের ফলে বিগত এক দশকে পিছড়ে বর্গের মুসলমান ও হিন্দুদের কিছুটা হলেও লাভ হয়েছে। শিক্ষা, চাকুরিতে সুযোগ বেড়েছে। একটি ছোট মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে। প্রান্তিক অনগ্রসর মুসলমান ছাত্রছাত্রীরা রাজ্যের ও রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা ও গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু লক্ষ, লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল হওয়াতে তারা সমস্যায় পঢড়েছেন। এটি এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, কিন্তু এই নিয়ে কোন আন্দোলন নেই। কিন্তু একটা নতুন ধরণের রাজনীতির উত্থান হচ্ছে যেখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত চলেছে।
অদ্ভুত ভাবে এই রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার আসল কাজ অর্থাৎ নিয়মমাফিক সমীক্ষা শুরু করছে না। সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের পাঠাচ্ছে। এটা মানুষকে ভাঁওতা দেওয়া ছাড়া কিছুই নয়। রাজ্য বিধানসভার উল্লেখ পর্বে আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী কে সরাসরি প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে রাজ্য সরকার ১৯৯৩ সালের আইন অনুযায়ী একটি বিল পাস করিয়ে আবার এই মানুষগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক এবং আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস (ওবিসি) নন-ক্রিমি লেয়ার শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে যে অসুবিধা হচ্ছে, সেখানে আইনকে একটু শিথিল করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।’
ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের সওয়াল,’এছাড়া, ভারতের অন্যান্য রাজ্য যেমন বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক প্রভৃতি রাজ্যে এই সমস্যা খতিয়ে দেখতে কমিশন তৈরি করা হয়েছে, সেখানে এই রাজ্যে কেন হচ্ছে না, সেটাই বড় প্রশ্ন।’
দলটির মতে,’সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে আমাদের এই ইস্যুতে জোরদার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। হিন্দু মুসলমানের মেরুকরণের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে সামাজিক ন্যায়ের কাঠামোর মধ্যেই সমাধানের রাস্তা খুঁজতে হবে।’