এম এস ইসলাম, টিডিএন বাংলা, কেতুগ্রাম:
মা নেই, চরম দারিদ্রতাকে হারিয়ে এতিম ছেলে মহম্মদ সেলিম এবার মাধ্যমিকে রাজ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে। দারিদ্রতা ও পারিবারিক অসহায়তা যে সাফল্যের পথে অন্তরায় নয়, তা চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দিল কেতুগ্রাম নিরল হাই স্কুলের ছাত্র মোহাম্মদ সেলিম। রাজ্য মাধ্যমিকে চতুর্থ স্থান অধিকার করে সে শুধু নিজের নয়, গোটা পূর্ব বর্ধমানের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
সেলিম ৬৯২ নম্বর পেয়েছে। বাংলা, অংক, ভৌত বিজ্ঞান ও ভূগোলে ১০০ তে ১০০ পেয়েছে। জীবন বিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৯৮ এবং ইংরেজিতে ৯৫ করে নম্বর পেয়েছে।
মাত্র চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে মা-কে হারায় সেলিম। এরপর বাবা অন্যত্র চলে যাওয়ায় সে হয়ে পড়ে একেবারে নিঃসঙ্গ। এমন কঠিন সময়ে মামা ফজলে করিম তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন ও পড়াশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মামার অঢেল স্নেহ-ভালবাসা ও আত্মত্যাগই আজ সেলিমকে রাজ্যের সেরা করে তুলেছে।
সেলিম নিরল হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি থেকে পড়াশোনা শুরু করে। নবম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও গৃহ শিক্ষক না থাকলেও, দশম শ্রেণিতে তিনজন শিক্ষক তাকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করেন। স্কুলের শিক্ষকরাও আন্তরিকতার সঙ্গে তার পাশে দাঁড়ান, সবরকম সুযোগ-সুবিধা দিতে চেষ্টা করেন।
নিরল হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু হাজরা বলেন, “আমরা আগে থেকেই জানতাম মোহাম্মদ সেলিম রাজ্যস্তরে স্থান পাবে। আমাদের স্কুলে মাত্র ১৩ জন শিক্ষক ১০০০-এর কাছাকছি ছাত্রছাত্রীকে পড়াচ্ছেন। তিনটি বিষয়ের শিক্ষক নেই। কিন্তু আমরা সকলেই মিলে এক অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারের কাছে আবেদন, অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ করা হোক।”
মামা ফজলে করিম বলেন, “অসীম দারিদ্রতার মধ্যেও সেলিম কখনও পড়াশোনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। নিজের জেদের জোরেই সে আজ এই সাফল্য অর্জন করেছে।”
সেলিম নিজে বলে, “ছোটবেলায় মায়ের কথা মনে পড়লেও আমি পিছনে ফিরে তাকাতে চাই না। আগামী দিনে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই, গবেষণা করতে চাই। পড়াশোনার পাশাপাশি গল্পের বই পড়া ও খেলাধুলা করতে ভালবাসি। সমাজের জন্য কিছু করতে চাই।”
তার এই কৃতিত্বে কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানাজ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু হাজরা বলেন, “সেলিম আমাদের স্কুলের গর্ব। তার সাফল্যে আমরা সবাই আনন্দিত ও গর্বিত।”
মোহাম্মদ সেলিমের জীবন আজ হাজারো ছাত্রছাত্রীর অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করে দিয়েছে, আর্থিক অনটন বা পারিবারিক দুর্দশা নয়, অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমই সাফল্যের আসল চাবিকাঠি।