টিডিএন বাংলা ডেস্ক: এতদিন বিজেপির বিভিন্ন নেতা সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছেন। এবার খোদ হাইকোর্টের বিচারপতি!
‘সংখ্যাগুরুদের মর্জিমতোই দেশ চলবে। কাঠমোল্লারা দেশের শত্রু।’ এমনই বিষবাষ্প উগরে দিলেন ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি শেখর কুমার যাদব। রবিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক অনুষ্ঠান-মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিচারপতির এমন মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ-ভাষণে ক্ষুব্ধ সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি সহ অনেকেই।
জানা গেছে, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একটি সভায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে বক্তব্য রাখার সময় সংবিধানে বিরোধী মন্তব্য করেন বিচারপতি শেখর কুমার যাদব। ওই মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, এটা হিন্দুস্তান। সংখ্যাগুরু হিন্দুদের মর্জিমতোই দেশ চলবে। এটাই আইন। আমি হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে বলছি না। দেশে বেশিরভাগ মানুষের কাছে যা গ্রহণযোগ্য, শুধুমাত্র তাই গ্রহণ করা হয়।’
বিচারপতি শেখর যাদবের মন্তব্যকে সংবিধানের পরিপন্থী, বিভিন্ন মহলে তাঁর এই বক্তব্যে প্রতিবাদ করা হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের লিগ্যাল সেল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন। বিচারপতি শেখর ২০২৬-এ অবসর গ্রহণ করবেন। সমালোচকরা কটাক্ষ করে বলছেন, অবসরের পর পাকাপোক্ত পদ পেতেই এমন বিদ্বেষ ভাষণ দিয়েছেন বিচারপতি।
সংখ্যালঘু মুসলিমদের আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘কাঠমুল্লা’-রা দেশের শত্রু। এরো দেশের পক্ষে ক্ষতিকর। দেশের নিরাপত্তার জন্য ভয়ঙ্কর।’ এদের থেকে সতর্ক থাকা দরকার। মুসলিমদের একাধিক বিয়ে, তালাক প্রথা, হালাল নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেছেন এই বিচারপতি।
এদিকে অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তিহাদুল মুসলেমিনের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও বিচারপতি এস কে যাদবের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পোস্টে লিখেছেন, ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী বিচারকের কাছ থেকে সংখ্যালঘুরা কীভাবে ন্যায়বিচার আশা করবে?
যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল নিষিদ্ধ করেছিলেন, তাদের কর্মসূচিতে বিচারপতির অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওয়াইসি। মুসলিমদের কাঠমুল্লা বলায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ ওয়াইসি বলেন, একজন হাইকোর্টের বিচারপতি ‘ধর্মান্ধ’ শব্দ ব্যবহার করছেন এবং ভারতীয় মুসলিমদের জন্য শর্ত নির্ধারিত করে দিচ্ছেন। যা যথেষ্ট চিন্তার।’
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনায় সরব হন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র, অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এমআইএম)-এর আসাদউদ্দিন ওয়েইসি, সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট-সহ জোট ‘ইন্ডিয়া’র একাধিক নেতা। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা। উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের নেতারা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে অনুরোধ করেন। বিচারপতির কথার প্রতিবাদ জানায় অল ইন্ডিয়া লইয়ার্স ইউনিয়নও। এর পরেই ওই ঘটনায় পদক্ষেপ করেছে শীর্ষ আদালত।
মঙ্গলবারই শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি ইতিমধ্যে নজরে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের। শীঘ্রই এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে।