পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন বিতর্ক—ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ উঠছে, একাধিক ব্যক্তির নামে একই এপিক (EPIC) নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি নির্বাচন কমিশন ও বিজেপির বিরুদ্ধে আঙুল তুলে বলেছেন, “বাংলার ভোটার তালিকায় ভিন্রাজ্যের লোকের নাম ঢোকানো হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক!”
এই অভিযোগ ঘিরে যখন তীব্র রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তখন নির্বাচন কমিশন এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে। কমিশনের ব্যাখ্যা, একই এপিক নম্বর থাকা মানেই ভোটার ভুয়ো নন। এপিক নম্বর এক হলেও ভোটকেন্দ্র ও বিধানসভা কেন্দ্র আলাদা হতে পারে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের বিভ্রান্তি এড়াতে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতিটি ভোটারের এপিক নম্বর অনন্য (Unique) হবে এবং একই নম্বর আর কারও সঙ্গে মিলবে না।
ভোটার তালিকা নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়, তবে এবারের অভিযোগ বেশ গুরুতর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, “নির্বাচন কমিশনের ছত্রছায়ায় বিজেপি বাংলা দখলের কৌশল নিয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, বাংলার ভোটারদের এপিক নম্বরে গুজরাত, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার লোকেদের নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদাহরণ দিয়ে বলেন—
মুর্শিদাবাদের রানিনগরে একজন ভোটারের এপিক নম্বরে হরিয়ানার এক ব্যক্তির নাম যুক্ত হয়েছে। উত্তরবঙ্গের গঙ্গারামপুরে একই নম্বরে গুজরাতের ব্যক্তির নাম দেখা গেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “ফিল্ড সার্ভে না করে অপারেটরদের দিয়ে অনলাইনে ভূতুড়ে ভোটারদের নাম যোগ করা হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।”
তবে বিজেপি এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের আগে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন। বিজেপির দাবি, “তৃণমূল জানে তারা হারবে, তাই আগেভাগেই মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।”
এই বিতর্কের ফলে তিনটি প্রশ্ন উঠে আসছে—
১. যদি একই এপিক নম্বরে একাধিক নাম যুক্ত হওয়া প্রশাসনিক ত্রুটি হয়, তাহলে এতদিন কেন তা ধরা পড়েনি?
২. ভোটার তালিকায় অনিয়ম কি নিছক কাকতালীয়, নাকি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র?
৩. কমিশনের পদক্ষেপে কি আদৌ বিতর্কের সমাধান হবে, নাকি রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও বাড়বে?
ভোট যত এগিয়ে আসবে, এই বিতর্ক তত গভীর হবে বলে অনেকে মনে করছেন। এখন দেখার, কমিশন কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে এই ইস্যুকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যে বুথে বুথে ‘ ভুয়ো ভোটার ‘ ধরার কাজে নেমে পড়েছে। রবিবার রানীনগরের বিধায়ক সৌমিক হোসেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার লিষ্ট যাচাই করেছেন।
এদিন দেখা যায়, একই এপিক নম্বরে রানীনগর বিধানসভার ইসলামপুর ও হরিয়ানার একজনের নাম আছে। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এক এপিকে দুই রাজ্যের দুইজনের নাম! যদিও বিধায়ক জানিয়েছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে আরো খোঁজ নেওয়া হবে।